Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা
(আয়াত: ১৫১-১৭৬)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১৫১ঃ এরাই প্রকৃতপক্ষে কাফের। আর আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৫২ঃ যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং তার রাসূলদের প্রতি আর পার্থক্য করে না তাদের কারো মধ্যে, অচিরেই তিনি তাদের পুরস্কার দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-১৫৩ঃ আহলে কিতাব আপনার কাছে আবেদন করে তাদের উপর আসমান থেকে লিপিকা অবতীর্ণ করিয়ে দিতে, কিন্তু তারা তো মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিলঃ প্রকাশ্যে আল্লাহ̖কে আমাদের দেখিয়ে দাও। ফলে তাদের পাকড়াও করল বজ্রপাত তাদের ধৃষ্টতার দরুন। তারপর তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও। আর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। মূসাকে আমি প্রকৃষ্ট প্রভাব প্রদান করেছিলাম।
আয়াত-১৫৪ঃ আর আমি তাদের উপরে তুর পর্বতকে তুলে ধরেছিলাম তাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়ার জন্য এবং তাদের বলেছিলাম, প্রবেশ কর শহর দ্বারে অবনত মস্তকে এবং তাদের আরো বলেছিলাম, শনিবার সম্বন্ধে সীমালংঘন কর না। এভাবে তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
আয়াত-১৫৫ঃ আর তারা তো অভিশপ্ত হয়েছিল তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে তাদের কুফরী করার জন্য, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের অন্তর সংরক্ষিত” তাদের এ উক্তির জন্য; বরং আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দিয়েছেন তাদের কুফরীর কারণে। ফলে তারা খুব অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
আয়াত-১৫৬ঃ আর তারা অভিশপ্ত হয়েছিল তাদের কুফরীর কারণে এবং মারইয়ামের প্রতি গুরুতর অপবাদ আরোপ করার দরুন,
আয়াত-১৫৭ঃ আর তাদের এ উক্তির জন্য যে, আমরা আল্লাহর রাসূল মসীহ ঈসা ইবন̖ মারইয়ামকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলীতেও চড়ায়নি, বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, নিশ্চয়ই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। এ সম্পর্কে তাদের অনুমান করা ছাড়া কোন জ্ঞানই ছিল না। আর তারা তাকে হত্যা করেনি একথা নিশ্চিত।
আয়াত-১৫৮ঃ বরং আল্লাহ তাকে তার কাছে তুলে নিয়েছেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৫৯ঃ আর আহলে কিতাবের মধ্যে প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে ঈসার প্রতি ঈমান আনবেই। আর কেয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন।
আয়াত-১৬০ঃ আর ইহুদীদের জন্য আমি বহু পবিত্র বস্তু হারাম করে দিয়েছি যা তাদের জন্য হালাল ছিল, তাদের সীমালংঘনের দরুন এবং আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেয়ার জন্য,
আয়াত-১৬১ঃ এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, অথচ তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তাদের অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। আর আমি তাদের মধ্যে কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৬২ঃ কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর এবং যারা ঈমানদার তারা ঈমান আনে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তাতেও; এবং যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি; বস্তুত এরূপ লোকদেরই আমি সুমহান পুরস্কার প্রদান করব।
আয়াত-১৬৩ঃ নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তার পরবর্তী নবীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম ইব̖রাহীম, ইস̖মাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের প্রতি এবং দাউদকে দিয়েছিলাম যাবুর;
আয়াত-১৬৪ঃ আর আমি এমন অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের আপনাকে পূর্বে শুনিয়েছি এবং এমনও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের কথা আপনাকে বলিনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন।
আয়াত-১৬৫ঃ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে রাসূলদের আমি এজন্য প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলদের আগমনের পর আল্লাহর সামনে মানুষের কোন ওজর-আপত্তি না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৬৬ঃ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন (আপনার নুবুওয়াতের) আপনার প্রতি তিনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তা দিয়ে যা তিনি নাযিল করেছেন সজ্ঞানে, এবং ফেরেশতারাও এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-১৬৭ঃ নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে তারা তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
আয়াত-১৬৮ঃ যারা কুফরী করেছে এবং জুলুম করেছে আল্লাহ̖ তাদের কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোন পথও দেখাবেন না,
আয়াত-১৬৯ঃ জাহান্নামের পথ ছাড়া, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।
আয়াত-১৭০ঃ হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছেন এ রাসূল সত্যবাণী নিয়ে তোমাদের রবের তরফ থেকে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আল্লাহরই যা কিছু আছে আসমানে ও জমিনে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৭১ঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না এবং বল না আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কোন কথা। মসীহ ঈসা ইবন মারইয়াম আল্লাহ̖র রাসূল ও তার বাণী ছাড়া আর কিছু নয়, আল্লাহ তা মরইয়ামের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহর তরফ থেকে এক রূহ। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহ̖র প্রতি এবং তার রাসূলদের প্রতি, আর বল না (আল্লাহ) তিনজন। এরূপ বলা থেকে নিবৃত্ত হও তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। একমাত্র আল্লাহ̖ই এক মা’বুদ। তার সন্তান হবে তিনি এর অনেক উর্ধ্বে। তারই যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে। কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-১৭২ঃ মসীহ কখনও লজ্জাবোধ করেন না এতে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারাও লজ্জাবোধ করে না। আর যে ব্যক্তি লজ্জাবোধ করবে-তার ইবাদত করতে এবং অহংকার করবে, তবে তিনি তাদের সবাইকে তার কাছে সমবেত করবেন।
আয়াত-১৭৩ঃ তবে যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তিনি তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো অধিক দেবেন। কিন্তু যারা (তার ইবাদত করতে) লজ্জাবোধ করেছে এবং অহংকার করেছে, তিনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। তারা আল্লাহ̖কে ছাড়া নিজেদের জন্য কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না।
আয়াত-১৭৪ঃ হে মানুষ! অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ থেকে প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল আলো অবতীর্ণ করেছি।
আয়াত-১৭৫ঃ সুতরাং যারা আল্লাহ্র প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদের স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তার সরল পথে তাদের পরিচালিত করবেন।
আয়াত-১৭৬ঃ লোকেরা আপনার কাছে বিধান জানতে চায়। আপনি বলুনঃ আল্লাহ তোমাদের বিধান দিচ্ছেন “কালালা”– (পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি) সম্বন্ধে। যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়। (পিতা-মাতাও না থাকে) এবং তার এক এ বোন থাকে তবে সে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ পাবে; সে যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার-ভাই তার ওয়ারিশ হবে। তবে যদি বোন দুজন থাকে তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে; আর যদি ভাই-বোন কয়েকজন থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান হবে। তোমরা গোমরাই হবে এ আশংকায় আল্লাহ তোমাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা
(আয়াত: ১০১-১৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১০১ঃ আর যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর করবে, তখন তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তোমরা নামায সংক্ষিপ্ত কর, এ আশংকায় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে। নিশ্চয় কাফেররা হল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
আয়াত-১০২ঃ আর আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকেন এবং তাদের নামায পড়াতে চান, তখন যেন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা যেন নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখে। তারপর যখন তারা সিজদা সম্পন্ন করবে তখন যেন তারা তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়, আর অন্য দল যারা নামায পড়েনি তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে নেয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফেররা চায় যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাতে তারা একযোগে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির কারণ কষ্ট পাও অথবা যদি তোমরা অসুস্থ হও, এ অবস্থায় নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ কাফেরদের জন্য অবশ্যই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।
আয়াত-১০৩ঃ আর যখন তোমরা নামায সমাপ্ত করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে। তারপর যখন তোমরা বিপদমুক্ত হবে তখন যথাযথভাবে নামায পড়বে। নিশ্চয় নির্ধারিত সময় মুমিনদের উপর নামায পড়া ফরয।
আয়াত-১০৪ঃ আর শক্রদলের পশ্চাদ্ধাবনে তোমরা হতোদ্যম হইও না। যদি তোমরা ব্যথিত হয়ে থাক, তবে তারাও তো ব্যথিত হয়েছে, যেমন তোমরা ব্যথা পেয়েছ। আর তোমরা আল্লাহর কাছে এমন কিছু আশা কর যা তারা আশা করে না। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১০৫ঃ নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করেন সে অনুসারে যা আল্লাহ আপনাকে জানিয়েছেন। আর আপনি বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হবেন না,
আয়াত-১০৬ঃ এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আায়াত-১০৭ঃ যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের ক্ষতি করেছে আপনি তাদের পক্ষে কথা বলবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসভঙ্গকারী পাপীকে ভালবাসেন না।
আয়াত-১০৮ঃ তারা মানুষের থেকে গোপন করতে চায় কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করে না, অথচ তিনি তাদের সঙ্গেই আছেন যখন তারা রাতে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর যা কিছু তারা করে তা সবই আল্লাহর আয়ত্তাধীন।
আয়াত–১০৯ঃ হাঁ, তোমরা তো পার্থিব জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করলে, কিন্তু কেয়ামতের দিন তাদের পক্ষে আল্লাহর সামনে কে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে?
আয়াত-১১০ঃ আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।
আায়াত-১১১ঃ আর যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করে সে শুধু নিজের উপরই তার প্রতিফল পৌছায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১১২ঃ আর যে ব্যক্তি কোন দোষ কিংবা কোন পাপ করে, তারপর তা কোন নিরপরাধ ব্যক্তির উপর আরোপ করে, তবে তো সে নিজের উপর চাপিয়ে নিল মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা।
আয়াত-১১৩ঃ আর যদি না আপনার প্রতি থাকত আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত, তবে তাদের একদল আপনাকে অবশ্যই বিভ্রান্তিতে ফেলতে সংকল্প করেছিল। তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না। আর তারা আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আপনার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। আর আপনার প্রতি রয়েছে আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।
আয়াত-১১৪ঃ তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। তবে যে ব্যক্তি নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত করতে, কিংবা সৎকাজ করতে, কিংবা মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃংখলা স্থাপনের জন্য, তাতে কল্যাণ আছে। যে এসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত করে, অবশ্যই আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব।
আয়াত-১১৫ঃ আর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরোধিতা করবে তার কাছে সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে অবশ্যই আমি তাকে সেদিকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে যায়। আর তাকে জাহান্নামে জ্বালাব। তা কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল।
আয়াত-১১৬ঃ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তার সঙ্গে শরীক সাব্যস্ত করাকে; আর তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া সবকিছু যাকে ইচ্ছে করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।
আয়াত-১১৭ঃ তারা তো তার পরিবর্তে শুধু দেবীরই পূজা করে এবং তারা পূজা করে শুধু অবাধ্য শয়তানের,
আয়াত-১১৮ঃ যাকে আল্লাহ লা’নত করেন। আর সে বলেঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুগামী করে নেব।
আয়াত-১১৯ঃ এবং তাদের আমি পথভ্রষ্ট করবই, তাদের বৃথা আশ্বাস দেবই, আর আমি অবশ্যই তাদের নির্দেশ দেব যেন তারা পশুর কান ছেদন করে, আর নিশ্চয় আমি তাদের নির্দেশ দেব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি বিকৃত করে দেয়। আর যে কেউ আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে প্রকাশ্য ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হবে।
আয়াত-১২ঃ সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং বৃথা আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
আয়াত-১২১ঃ এদেরই ঠিকানা জাহান্নাম। এরা সেখান থেকে কোথাও বাচার জায়গা পাবে না।
আয়াত-১২২ঃ আর যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, অচিরেই আমি তাদের জান্নাতে দাখিল করব, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আল্লাহর চেয়ে কথায় অধিক সত্যবাদী কে?
আয়াত-১২৩ঃ তোমাদের বৃথা আকাঙক্ষায় কোন কাজ হবে না এবং আহলে কিতাবের বৃথা আকাঙক্ষায়ও কোন কাজ হবে না। যে কেউ কোন মন্দ কাজ করবে সে তার প্রতিফল পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না।
আয়াত-১২৪ঃ যে ব্যক্তি নেক কাজ করবে, হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, এবং সে ঈমানদার হবে, এরূপ লোক জান্নাতে দাখিল হবে, আর তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।
আয়াত-১২৫ঃ কে উত্তম দ্বীনের দিক দিয়ে তার চেয়ে যে নিজেকে সোপর্দ করে দেয় আল্লাহর কাছে সৎ কাজে নিয়োজিত থেকে এবং একনিষ্ঠভাবে মিল্লাতে ইবরাহীমকে অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
আয়াত-১২৬ঃ যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে সব কিছু আল্লাহরই। আর এ সব কিছুকেই আল্লাহ পরিবেষ্টন করে আছেন।
আয়াত-১২৭ঃ আর লোকেরা আপনার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চায়। বলুনঃ আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে তোমাদের ব্যবস্থা দিচ্ছেন এবং যা তোমাদের তেলাওয়াত করে শুনান হয় কোরআনে তা ঐসব এতিম নারীদের সম্পর্কে যাদের তোমরা তাদের নির্ধারিত প্রাপ্য প্রদান কর না অথচ তোমরা তাদের বিয়ে করতে চাও, এবং অসহায় শিশুদের সম্বন্ধে, আর এতিমদের ব্যাপারে ইনসাফের সাথে কার্য নির্বাহ করবে। আর তোমরা যেকোন ভাল কাজ কর আল্লাহ তো তা খুব জানেন।
আয়াত-১২৮ঃ আর যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তাদের কোন গুনাহ নেই যদি তারা পরস্পর মীমাংসা করে নেয়। আর মীমাংসাই উত্তম। আর লালসা তো আত্মার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। যদি তোমরা ভাল কাজ কর এবং মোত্তাকী হও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।
আয়াত-১২৯ঃ তোমরা কখনও ন্যায়বিচার করতে পারবে না স্ত্রীদের মধ্যে যদিও তোমরা তা করতে চাও। তবে তোমরা সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড় না যাতে একজনকে ফেলে রাখ ঝুলন্ত অবস্থায়। যদি তোমরা নিজেদের সংশোধন কর এবং মোক্তাকী হও তবে আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-১৩০ঃ যদি তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য দিয়ে তাদের প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৩১ঃ আর যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে সবকিছু আল্লাহরই। আমি তো নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাবকে এবং তোমাদেরও যে, তোমরা ভয় করবে আল্লাহকে। যদি তোমরা কুফরী কর তবে জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ̖রই যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে। আর আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
আয়াত-১৩২ঃ আর আল্লাহ̖রই যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে এবং কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-১৩৩ঃ হে মানুষ। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের ধ্বংস করে দিতে পারেন এবং অন্যদের আনতে পারেন। আর এরূপ করতে আল্লাহ সম্পূর্ণ সক্ষম।
আয়াত-১৩৪ঃ যে কেউ পার্থিব কল্যাণ চায় সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর কাছে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন।
আয়াত-১৩৫ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ̖র সাক্ষীস্বরূপ যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; হোক সে ধনী অথবা দরিদ্র, উভয়ের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক অধিকতর। অতএব ন্যায়বিচার করতে গিয়ে তোমরা কামনা-বাসনার অনুসরণ কর না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও তবে জেনে রেখ, নিশ্চয়ই-আল্লাহ তোমরা যা কর তার পরিপূর্ণ খবর রাখেন।
আয়াত-১৩৬ঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, তিনি যে কিতাব তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন তার প্রতি এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার প্রতি। আর যে অবিশ্বাস করে আল্লাহকে, তার ফেরেশতাদের, তার কিতাবসমূহকে, তার রাসূলদের এবং কেয়ামতের দিনকে, সে পথভ্রষ্টতায় বহু দূর সরে পড়েছে।
আয়াত-১৩৭ঃ যারা ঈমান এনেছে পরে কুফরী করেছে এবং আবার ঈমান এনেছে, পুনরায় কুফরী করেছে, তারপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে রয়েছে, আল্লাহ কখনও তাদের ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোন পথও দেখাবেন না।
আায়াত-১৩৮ঃ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন মোনাফেকদের যে, তাদের জন্য অবশ্যই আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৩৯ঃ যারা গ্রহণ করে কাফেরদের বন্ধুরূপে মু’মিনদের পরিবর্তে, তারা কি তাদের কাছে শক্তি প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতীয় শক্তি তো শুধু আল্লাহরই।
আয়াত-১৪০ঃ আর কোরআনে তোমাদের প্রতি তিনি নির্দেশ নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনতে পাবে আল্লাহর আয়াতের প্রতি কুফরী ও উপহাস করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মোনাফেক ও কাফের সবাইকে জাহান্নামে একত্র করবেন।
আয়াত-১৪১ঃ তারা প্রতীক্ষায় থাকে তোমাদের প্রতি কোন বিপদ ঘটার। তারপর আল্লাহর অনুগ্রহে তোমাদের কোন বিজয় হলে তারা বলেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? কিন্তু যদি কাফেররা জয়ী হয় তখন তারা বলেঃ আমরা কি তোমাদের ঘিরে রাখিনি এবং মুমিনদের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করিনি? কেয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করে দেবেন। আল্লাহ কখনও কাফেরদের জন্য মু’মিনদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখবেন না।
আয়াত-১৪২ঃ মোনাফেকরা প্রতারিত করতে চায় আল্লাহ̖কে, আর আল্লাহ এ প্রতারণার প্রতিফল তাদের দেবেন। আর তারা যখন নামাযে দাড়ায় তখন নিতান্ত অলসতার সাথে দাড়ায় লোক দেখানোর জন্য এবং খুব অল্পই তারা আল্লাহ̖কে স্মরণ করে।
আয়াত-১৪৩ঃ এরা দোটানায় দোদুল্যমান অবস্থায় আছে, সম্পূর্ণ এদিকেও না, সম্পূর্ণ ওদিকেও না! আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তুমি তার জন্য কখনও কোন পথ পাবে না।
আয়াত-১৪৪ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না মু’মিনদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি চাও নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহ̖র জন্য স্পষ্ট প্রমাণ কায়েম করে দিতে?
আয়াত-১৪৫ঃ নিঃসন্দেহে মোনাফেকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে; আর তুমি কখনও পাবে না তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী।
আয়াত-১৪৬ঃ অবশ্য যারা তওবা করে, নিজেদের সংশোধন করে, আল্লাহর পথকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে স্বীয় দ্বীনে একনিষ্ঠ থাকে, তারা থাকবে মু’মিনদের সঙ্গে। আর অচিরেই আল্লাহ মু’মিনদের মহাপুরস্কার প্রদান করবেন।
আয়াত-১৪৭ঃ কি করবেন আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দিয়ে যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আন? আর আল্লাহ হলেন গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞ।
আয়াত-১৪৮ঃ আল্লাহ মন্দ কথা প্রকাশ করা ভালো বাসেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
আয়াত-১৪৯ঃ তোমরা যদি কোন নেক কাজ প্রকাশ্যে কর অথবা গোপনে কর অথবা দোষ ক্ষমা কর তবে জেনে রেখ, অবশ্যই আল্লাহও দোষ ক্ষমাকারী, মহাশক্তিশালী।
আয়াত-১৫০ঃ নিশ্চয় যারা কুফরী করে আল্লাহ̖র সাথে এবং তার রাসূলদের সাথে আর পার্থক্য করতে চায় আল্লাহ̖ ও তার রাসূলদের প্রতি বিশ্বাসের ব্যাপারে এবং বলেঃ আমরা কতিপয়ের প্রতি বিশ্বাস রাখি এবং কতিপয়কে অবিশ্বাস করি; আর তারা এর মাঝামাঝি এক পথ উদ্ভাবন করতে চায়;
Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা
(আয়াত: ৫১-১০০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-৫১ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যাদের দেয়া হয়েছিল কিতাবের এক অংশ, তারা ঈমান রাখে জিবত ও তাগূতে এবং তারা কাফেরদের সন্মন্ধে বলেঃ এরাই মু’মিনদের চেয়ে অধিকতর সরল-সঠিক পথে রয়েছে।
আয়াত-৫২ঃ এরা সেসব লোক আল্লাহ যাদের লা’নত করেছেন, আর আল্লাহ্ যাকে লা’নত করেন তুমি কখনও তার জন্য সাহায্যকারী পবে না।
আয়াত-৫৩ঃ তবে কি তাদের কাছে রাজত্বের কোন অংশ আছে? তাহলে সে অবস্থায় তারা লোকদের তিল পরিমাণও দেবে না।
আয়াত-৫৪ঃ অথবা তারা কি মানুষকে ঈর্ষা করে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন সেজন্য? আর আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হেকমত দিয়েছিলাম এবং সুবিশাল রাজ্যও তাদের দিয়েছিলাম।
আয়াত-৫৫ঃ তারপর তাদের কতক তাতে ঈমান এনেছে এবং কতক তা থেকে দূরে সরে রয়েছে। জ্বালাবার জন্য দোযখই যথেষ্ট।
আয়াত-৫৬ঃ নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে, অবশ্যই আমি তাদের আগুনে জ্বালাব; যখনই তাদের চামড়া জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখনই তা আমি পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা শাস্তি আস্বাদন করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-৫৭ঃ আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে অবশ্যই আমি দাখিল করব তাদের জান্নাতে যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। তাদের জন্য সেখানে রয়েছে পূত-পবিত্র স্ত্রীগণ। আর আমি তাদের দাখিল করব চির স্নিগ্ধ ছায়ায়।
আয়াত-৫৮ঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত পৌঁছে দাও তার প্রাপকদের কাছে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক বিচার করবে। আল্লাহ যে উপদেশ তোমাদের দেন তা কত উত্তম! নিশ্চয় আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন।
আয়াত-৫৯ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ফয়সালার অধিকারী। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা প্রত্যর্পণ কর আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি-যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে কল্যাণকর।
আয়াত-৬০ঃ আপনি কি তাদের দেখেননি যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাসী? অথচ তারা বিচারপ্রার্থী হতে চায় তাগুতের কাছে, যদিও তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করতে। আর শয়তান তাদের পথভ্রষ্ট করে বহু দূরে নিয়ে যেতে চায়।
আয়াত-৬১ঃ আর যখন তাদের বলা হয়, এস আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন আপনি মোনাফেকদের দেখবেন আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে সরে যাচ্ছে।
আয়াত-৬২ঃ তাদের কি দশা হবে যখন তাদের কৃতকর্মের দরুন তাদের উপর কোন মসিবত আপতিত হবে? তারপর তারা আপনার কাছে এসে আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে। আমরা তো কল্যাণ ও সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কিছু চাইনি।
আয়াত-৬৩ঃ তারা এমন লোক যাদের অন্তরের বিষয়ে আল্লাহ জানেন। সুতরাং আপনি তাদের উপেক্ষা করুন এবং তাদের সদুপদেশ দিন আর এমন কথা তাদের বলুন যা তাদের মর্ম স্পর্শ করে।
আয়াত-৬৪ঃ আমি তো রাসূল শুধু এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে। আর যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার কাছে আসত, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তবে নিশ্চয় তারা আল্লাহকে অতিশয় তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু পেত।
আয়াত-৬৫ঃ তবে না; আপনার রবের কসম! তারা মু’মিন হবে না যে পর্যন্ত না তারা আপনার উপর বিচারের ভার অর্পণ করে সেসব বিবাদ-বিসম্বাদের যা তাদের মধ্যে সংঘটিত হয়, তারপর তারা নিজেদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ না করে আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।
আয়াত-৬৬ঃ আর যদি আমি তাদের প্রতি ফরয করে দিতাম যে, তোমরা নিজেদের হত্যা কর অথবা নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তাদের কয়েকজন ছাড়া কেউই তা করত না। আর যদি তারা তা করত যা করতে তাদের উপদেশ দেয়া হয় তবে তা তাদের জন্য উত্তম হত এবং ঈমানকে দৃঢ়তর করত।
আয়াত-৬৭ঃ এবং এ অবস্থায় আমি অবশ্যই নিজের তরফ থেকে তাদের মহান প্রতিদান প্রদান করতাম;
আয়াত-৬৮ঃ এবং নিশ্চয়ই আমি তাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করতাম।
আয়াত-৬৯ঃ আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে আল্লাহ ও রাসূলের, এরূপ ব্যক্তিরা সে ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন: নবী, সিদীক, শহীদ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ। আর কত উত্তম সঙ্গী এরা।
আয়াত-৭০ঃ এটা হল আল্লাহর অনুগ্রহ। আর জ্ঞানে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-৭১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর এবং তারপর বেরিয়ে পড় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অথবা অগ্রসর হও একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে।
আয়াত-৭২ঃ আর তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গড়িমসি করবেই; আর তোমাদের উপর কোন মসিবত আপতিত হলে বলবেঃ অবশ্যই আল্লাহ্ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, কেননা আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না।
আয়াত-৭৩ঃ আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে কোন অনুগ্রগহ আসে তখন এমনভাবে বলতে শুরু করবে যেন তোমাদের ও তাদের মধ্যে কোন মিত্রতাই ছিল না: “হায়! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম তাহলে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।”
আয়াত-৭৪ঃ সুতরাং তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে যারা আখেরাতের এ বিনিময়ে পার্থিব জীবন বিক্রি করে দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, তারপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অবশ্যই আমি তাকে দান করব মহাপুরস্কার।
আয়াত-৭৫ঃ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করছ না আল্লাহর পথে এবং সেসব অসহায়-দুর্বল নর-নারী ও শিশুদের জন্য যারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক। এ জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও, এখানকার অধিবাসীরা ভয়ানক অত্যাচারী? আর তোমার তরফ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার তরফ থেকে কাউকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী করে দাও।
আয়াত-৭৬ঃ যারা ঈমান এনেছে তারা তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কুফরী করেছে তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা যুদ্ধ কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। শয়তানের কৌশল তো নিতান্তই দুর্বল।
আয়াত-৭৭ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যাদের বলা হয়েছিলঃ তোমরা নিজেদের হাত সংবরণ কর, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও? তারপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হল, তখন তাদের মধ্যে একদল লোকদের এরূপ ভয় করতে লাগল যেমন কেউ আল্লাহকে ভয় করে অথবা তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল? হে আমাদের রব কেন আমাদের উপর যুদ্ধের বিধান দিলে? যদি আমাদের আরও কিছু সময় অবকাশ দিতে? বলুনঃ পার্থিব ভোগ-বিলাস সামান্য আর আখেরাত উত্তম তার জন্য যে মোত্তাকী। আর তোমাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।
আয়াত-৭৮ঃ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও থাক। আর যদি তাদের কোন মঙ্গল হয় তবে তারা বলেঃ “এটা আল্লাহর তরফ থেকে।” আর যদি তাদের কোন অমঙ্গল হয় তবে তার বলেঃ “এটা তোমার পক্ষ থেকে” বলে দিনঃ “এসবই আল্লাহর তরফ থেকে।” তবে এসব লোকের কি হল যে, এর কোন কথা বুঝার কাছেও যায় না।
আয়াত-৭৯ঃ আপনার প্রতি যে মঙ্গল আসে তা তো আল্লাহর তরফ থেকে আসে এবং যে অমঙ্গল আপনার হয় তা তো আপনারই কারণে হয়। আর আপনাকে তো আমি পাঠিয়েছি মানুষের জন্য রাসূলরুপে। সাক্ষ্য হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-৮০ঃ যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে তো আল্লাহ̖রই আনুগত্য করল। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তো আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠাইনি।
আয়াত-৮১ঃ আর তারা বলে: আনুগত্য আমাদের কাজ। তারপর যখন তারা মুখে বলেছিল তার বিপরীতে আর আল্লাহ লিখে রাখেন যা তারা রাতে পরামর্শ করে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি ভ্ৰক্ষেপ করবেন না এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা করুন। এ কার্যসম্পাদনকারী হিসেবে আল্লাহ̖ই যথেষ্ট।
আয়াত–৮২ঃ তবে কি তারা কোরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো তরফ থেকে এ কোরআন হত তবে তারা এতে অনেক বৈপরীত্য পেত।
আয়াত-৮৩ঃ আর যখন তাদের কাছে পৌছে কোন সংবাদ নিরাপত্তা কিংবা ভয় সংক্রান্ত, তখন তারা তা প্রচার করে দেয়। যদি তারা তা সোপর্দ করত রাসূলের কাছে, কিংবা তাদের মধ্যে যারা ফায়সালার অধিকারী তাদের কাছে, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের উপর যদি আল্লাহর এ অনুগ্রহ ও করুণা না থাকত, তাহলে অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা সবাই শয়তানের অনুগামী হয়ে যেতে।
আয়াত-৮৪ঃ অতএব আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন; আপনাকে শুধু আপনার এ নিজের কাজের জন্য দায়ী করা হবে; আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করুন। অচিরেই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং কঠোর শাস্তিদাতা।
আয়াত-৮৫ঃ যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের সুপারিশ করবে তার জন্য তাতে অংশ থাকবে, আর কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতেও তার অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সতর্ক নজর রাখেন।
আয়াত-৮৬ঃ আর যখন তোমাদের সালাম করা হয় তখন তোমরাও উত্তর দেবে তার চেয়ে উত্তমরূপে অথবা তারই মত ফিরিয়ে বলবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।
আয়াত-৮৭ঃ আল্লাহ এমন যে, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। অবশ্যই তিনি কেয়ামতের দিন তোমাদের একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কার কথা আল্লাহর কথার চেয়ে অধিক সত্য?
আয়াত-৮৮ঃ তোমাদের কি হল যে, তোমরা মোনাফেকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের কৃতকর্মের দরুন তোমরা কি তাকে হেদায়াত করতে চাও যাকে আল্লাহ গোমরাহীর মধ্যে রেখেছেন? আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন তুমি কখনও তার জন্য কোন পথ পাবে না।
আয়াত-৮৯ঃ তারা কামনা করে যেন তোমরা কুফরী কর যেমন তারা কুফরী করেছে, যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, যে পর্যন্ত তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে না আসে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তাদের পাকড়াও কর এবং হত্যা কর যেখানেই তাদের পাও, এবং তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ কর না,
আয়াত-৯০ঃ কিন্তু তাদের নয় যারা এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয়েছে, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি আছে; অথবা যারা তোমাদের কাছে এমন অবস্থায় আসে যে, তাদের মন তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অথবা তাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সংকুচিত হয়। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদের প্রবল করে দিতেন; ফলে অবশ্যই তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব দেয় তবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখেননি।
আয়াত-৯১ঃ তোমরা এ ছাড়া এমন কিছু লোকও পাবে যারা তোমাদের থেকেও নিরাপদ থাকতে চায় এবং নিজেদের কওমের থেকেও নিরাপদ থাকতে চায়। যখনই তাদের ফিতনার দিকে আকর্ষণ করা হয় তখনই তারা তাতে ঝাপিয়ে পড়ে। অতএব তারা যদি তোমাদের কাছ থেকে সরে না যায়, তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব না দেয় এবং নিজেদের হস্ত সংবরণ না করে, তবে তাদের পাকড়াও করবে এবং হত্যা করবে যেখানেই তাদের পাবে। আর আমি তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রমাণ প্রদান করেছি।
আয়াত-৯২ঃ ভুলক্রমে ছাড়া স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়। কেউ কোন মুমিনকে ভুলক্রমে হত্যা করলে সে একজন মু’মিন দাস মুক্ত করবে এবং তার স্বজনদের রক্ত-বিনিময় অর্পণ করবে, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শক্র পক্ষের লোক হয় এবং মু’মিন হয় তবে একজন মু’মিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি সে এমন এক কওমের লোক হয় যার সাথে তোমাদের চুক্তি আছে তবে তার স্বজনদের রক্তবিনিময় অর্পণ করবে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। কিন্তু যার সংগতি নেই সে একাদিক্ৰমে দু’মাস রোজা রাখবে। এটা হল আল্লাহর তরফ থেকে তওবারূপে নির্ধারিত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-৯৩ঃ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবেন, স্বীয় করুণা থেকে তাকে দূরে রাখবেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।
আয়াত-৯৪ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে বের হবে তখন যাচাই করে নিবে এবং কেউ তোমাদের সালাম করলে তাকে বল নাঃ “তুমি তো মুমিন নও”। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুত আল্লাহর কাছে আছে প্রচুর সম্পদ। তোমরা তো ইতিপূর্বে এমনি ছিলে, তারপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং তোমরা যাচাই করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
আয়াত-৯৫ঃ সমান নয় সেসব মু’মিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মু’মিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে। যারা স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের উপর যারা ঘরে বসে থাকে। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে মহান পুরস্কারে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপরে।
আয়াত-৯৬ঃ এসব তাঁর তরফ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৯৭ঃ নিশ্চয় যারা নিজেদের উপর জুলুম করে, ফেরেশতারা তাদের জান কবজের সময় বলবেঃ “তোমরা কি অবস্থায় ছিলে?” তারা বলবেঃ “আমরা দুনিয়ায় অসহায় অবস্থায় ছিলাম।” ফেরেশতারা বলবেঃ “আল্লাহর দুনিয়া কি এমন প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা সেখানে হিজরত করে চলে যেতে?” অতএব এদেরই ঠিকানা হল জাহান্নাম। আর কতই মন্দ এ ঠিকানা?
আয়াত-৯৮ঃ তবে সেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু যারা কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথেরও সন্ধান জানে না?
আয়াত-৯৯ঃ এদের ব্যাপারে আশা করা যায় যে, আল্লাহ্ এদের মাফ করবেন। কারণ আল্লাহ্ অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।
আয়াত-১০০ঃ যে কেউ আল্লাহর পথে হিজরত করবে সে দুনিয়ায় বহু আশ্রয়স্থল ও প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য, তারপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার প্রতিদান অবধারিত হয়ে আছে আল্লাহ̖র কাছে। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Surah An-Nisa / সূরা আন নিসা
(আয়াত: ১-৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত–১ঃ হে মানব! তোমরা ভয় কর তোমাদের রবকে, যিনি পয়দা করেছেন তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে এবং যিনি পয়দা করেছেন তার থেকে তার জোড়া, আর ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দু’জন থেকে অনেক নর ও নারী। আর তোমরা ভয় কর। আল্লাহকে যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাঞ্ছা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
আয়াত-২ঃ আর দিয়ে দাও এতিমদের তাদের সম্পদ এবং বদল কর না খারাপ মালের সাথে ভাল মালের। আর গ্রাস কর না তাদের মাল তোমাদের মালের সাথে মিশিয়ে নিশ্চয় এরূপ করা গুরুতর পাপ।
আয়াত-৩ঃ আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের ব্যাপারে সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করে নাও অন্য নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের মনঃপুত হয়- দুই, তিন কিংবা চারজন পর্যন্ত। কিন্তু যদি আশংকা কর যে, তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের স্বত্বাধীন ক্রীতদাসীকে। এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।
আয়াত-৪ঃ আর তোমরা দিয়ে দাও স্ত্রীদের তাদের মহর সন্তুষ্টচিত্তে; তবে তারা খুশী হয়ে মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তা তোমরা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে ভোগ কর।
আয়াত-৫ঃ আর তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের ঐ সম্পদ যা আল্লাহ তোমাদের জীবন নির্বাহের অবলম্বন করেছেন; বরং তা থেকে তাদের খাওয়াও, পরাও এবং শুনাও তাদের সান্তনার বাণী।
আয়াত-৬ঃ আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করে নেবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌছে। যদি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পাও, তবে তাদের মাল তাদের হাতে ফিরিয়ে দেবে। এতিমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ কর না এবং তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেল না। যে স্বচ্ছল সে যেন এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। যখন তোমরা তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করবে, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য হিসাব গ্রহণে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
আয়াত-৭ঃ পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশি। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।
আয়াত-৮ঃ আর যদি সম্পত্তি বণ্টনকালে (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয় এতিম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তবে তা থেকে তাদের কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।
আয়াত-৯ঃ আর তারা যেন ভয় করে যে, যদি তারা তাদের পেছনে দুর্বল অসহায় সন্তানদের ছেড়ে যেত, তবে তারাও তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সাথে যথোপযোগী কথা বলে।
আয়াত-১0ঃ নিশ্চয় যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা তো শুধু তাদের পেটে আগুন ভর্তি করছে; আর তারা সত্বরই দোযখের আগুনে জ্বলবে।
আয়াত-১১: আল্লাহ্ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদের আদেশ করেন; এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। তবে যদি শুধু কন্যা থাকে দু’জনের অধিক তাহলে তাদের জন্য ছেড়ে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি কন্যা একজন থাকে তবে তার জন্য অর্ধেক। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে। যদি সে নিঃসন্তান হয় এবং তার পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তাহলে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ; কিন্তু যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। এসবই মৃত ব্যক্তির যে অসিয়ত করে গেছে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। তোমাদের পিতা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারে কারা তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জান না। এ ব্যবস্থা আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১২ঃ আর তোমরা পাবে অর্ধেক তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমরা তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তোমাদের সন্তান না থাকে। তবে তোমাদের সন্তান থাকলে তারা পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারী মারা যায় এ অবস্থায় যে, তারা এক বৈপিত্রেয় ভাই কিংবা এক বৈপিত্রেয় বোন তার উত্তরাধিকারী, তবে তারা প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তারা যদি এর অধিক হয় তবে সবাই তিন ভাগের এক ভাগে সম অংশীদার হবে। এটা হবে যে অসিয়ত করা হয় তা পালন করার এবং ঋণ পরিশোধ করার পর; অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়। এ হল আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
আয়াত-১৩ঃ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলে তিনি তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।
আয়াত-১৪ঃ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দোযখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
আয়াত-১৫ঃ তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করবে, যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে ব্যভিচারিণীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখবে যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।
আয়াত-১৬ঃ তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এ কুকর্মে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি দেবে; তবে যদি তারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদের রেহাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহা তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
আয়াত-১৭ঃ অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে ফেলে, তারপর অবিলম্বে তওবা করে; এরূপ লোকের তওবাই আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়াল।
আয়াত-১৮ঃ আর তওবা তাদের জন্য নয় যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে; আমি এখন তওবা করছি; আর তাদের জন্যও নয় যারা মারা যায় কাফের অবস্থায়। এরূপ লোকদের জন্যই আমি প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত–১৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য হালাল নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে, কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে। তারপর তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, তোমরা এরূপ জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।
আয়াত-২০ঃ আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছে কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ কর না। তোমরা কি তা গ্রহণ করবে মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে?
আয়াত-২১ঃ কিরূপে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা একে অপরের সাথে সংগত হয়েছ এবং সে নারীরা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছে?
আয়াত-২২ঃ তোমরা বিয়ে কর না সে নারীদের যাদের বিয়ে করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষরা, তবে যা পূর্বে গত হয়েছে তা গত হয়েছে। নিশ্চয় এটা নিতান্ত অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ।
আয়াত-২৩ঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের ভগিনী, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগিনী কন্যা, দুধমাতা, দুধবোন, শাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে সহবাস করে থাক। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তাহলে কোন অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা। পূর্বে যা গত হয়েছে, তা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-২৪ঃ সকল সধবা নারীকে তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, কিন্তু তোমাদের স্বত্বাধীন যেসব দাসী রয়েছে তাদের হারাম করা হয়নি। এ হল তোমাদের জন্য আল্লাহর বিধান। এদের ছাড়া অন্য সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদের কামনা করবে অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য ব্যভিচারের জন্য নয়। বিয়ের মাধ্যমে যে নারীদের তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের দিয়ে দেবে তাদের নির্ধারিত মহর। আর তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি মহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-২৫ঃ আর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বাধীন মুসলমান নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না রাখে, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ে করবে। আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে ভাল জানেন। তোমরা পরস্পর এক-অভিন্ন। সুতরাং তোমরা তাদের বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের মহর তাদের দিয়ে দেবে, এই হিসেবে যে, তারা বিবাহিতা স্ত্রী; এই হিসেবে নয় যে, তারা ব্যভিচারিণী ও উপ-পতি গ্রহণকারিণী। যদি বিবাহিতা হওয়ার পর তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক। এই ব্যবস্থা (দাসীকে বিয়ে করা) তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করে। তবে ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-২৬ঃ আর আল্লাহ্ চান তোমাদের জন্য সবকিছু বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদের অবহিত করতে এবং তোমাদের ক্ষমা করতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-২৭ঃ আর আল্লাহ্ তো চান তোমাদের ক্ষমা করতে কিন্তু যারা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথ থেকে দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।
আয়াত-২৮ঃ আল্লাহ চান তোমাদের বোঝা হালকা করতে কারণ মানুষ তো সৃষ্ট হয়েছে দুর্বল।
আয়াত-২৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেল না। তবে ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য যা তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয় তা বৈধ। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কর না। অবশ্যই আল্লাহ হলেন তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
আয়াত-৩০ঃ আর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে এরূপ করবে, তাকে আমি সত্বরই আগুনে জ্বালাব। এ কাজ আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
আয়াত-৩১ঃ যদি তোমরা দূরে থাকতে পার সেসব বড় গুনাহ থেকে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো মার্জনা করে দেব এবং দাখিল করব তোমাদের এক সম্মানজনক স্থানে।
আয়াত-৩২ঃ আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর না এমন কিছুর যাতে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে কারো উপর। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ। আর প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
আয়াত-৩৩ঃ আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি সে সম্পত্তির যা ছেড়ে যায় পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের দিয়ে দাও তাদের প্রাপ্য অংশ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-৩৪ঃ পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, কারণ আল্লাহ্ তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত হয় এবং লোক চক্ষুর অন্তরালে তার হিফাযত করে আল্লাহর হিফাযত অনুসারে। স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের একাকিনী ত্যাগ কর তাদের শয্যায়, শেষে তাদের প্রহার কর। এতে যদি তারা তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের ব্যাপারে অন্য কোন পথ তালাশ কর না। নিশ্চয় আল্লাহ্ উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান।
আয়াত-৩৫ঃ যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে; তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।
আয়াত-৩৬ঃ আর তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর এবং শরীক সাব্যস্ত কর না তাঁর সাথে কোন কিছুকে। আর সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতার সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, এতিমদের সাথে, মিসকীনদের সাথে, নিকট-প্রতিবেশী ও দূর-প্রতিবেশীর সাথে, সঙ্গী-সাথী ও পথচারীর সাথে এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে__
আয়াত-৩৭ঃ যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্য মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয় আর তারা গোপন করে তা যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে। আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অপমানজনক আযাব;
আয়াত-৩৮ঃ এবং যারা ব্যয় করে তাদের মাল লোক দেখানোর জন্য এবং ঈমান রাখে না আল্লাহর প্রতি, আর না শেষ দিনের প্রতি। আর শয়তান যার সঙ্গী হয় সে কতইনা নিকৃষ্ট সঙ্গী!
আয়াত-৩৯ঃ আর তাদের কি-ই বা ক্ষতি হত যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর ও শেষ দিনের উপর এবং যদি তারা ব্যয় করত আল্লাহ তাদের যা দিয়েছেন তা থেকে! আল্লাহ্ তাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত।
আয়াত-৪০ঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ জুলুম করেন না এক রেণু পরিমাণও, আর যদি হয় কোন পুণ্য কাজ তবে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার দান করেন।
আয়াত-৪১ঃ আর তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি উপস্থিত করব প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী এবং আপনাকে তাদের উপর উপস্থিত করব সাক্ষীরূপে?
আয়াত-৪২ঃ যারা কুফরী করেছিল এবং রাসূলের নাফরমানী করেছিল, সেদিন তারা কামনা করবে যদি মাটির সাথে তারা মিশে যেত! তারা কোন কথাই আল্লাহর থেকে গোপন করতে পারবে না।
আয়াত-৪৩ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় নামাযের এ কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্ৰাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও__মসেহ করবে স্বীয় মুখমণ্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।
আয়াত-৪৪ঃ তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদের দেয়া হয়েছে কিতাবের এক অংশ? অথচ তারা গোমরাহীকে ক্রয় করে এবং কামনা করে যেন তোমরাও পথভ্রষ্ট হও।
আয়াত-৪৫ঃ আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদের খুব ভালভাবেই জানেন। অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-৪৬ঃ ইহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথার প্রকৃত অর্থ বিকৃত করে এবং বলেঃ আমরা শুনলাম কিন্তু অমান্য করলাম! তারা আরো বলেঃ শোন, না শোনার মত। আর মুখ বাঁকিয়ে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করে বলেঃ রা’য়েনা (আমাদের রাখাল)। কিন্তু তারা যদি বলতঃ “আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম;” এবং যদি তারা বলতঃ “শোন এবং আমাদের প্রতি লক্ষ্য রেখ,” তবে তা-ই তাদের জন্য উত্তম ও সংগত হত। কিন্তু আল্লাহ তাদের কুফরীর জন্য তাদের লা’নত করেছেন। তাই তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
আয়াত-৪৭ঃ ওহে আহলে কিতাব! তোমরা ঈমান আন তাতে যা আমি নাযিল করেছি এ অবস্থায় যে, তা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারী, এর পূর্বে যে, আমি বিকৃত করে দেব চেহারাসমূহ, তারপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পেছনের দিকে, অথবা তাদের লা’নত করব যেরুপ লা’নত করেছিলাম আসহাবুস সাবতকে। আর আল্লাহর নির্দেশ সুসম্পন্ন হয়েই থাকে।
আয়াত-৪৮ঃ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ; তবে তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হয়।
আয়াত-৪৯ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যারা নিজেদের পূত-পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহই পবিত্র করেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন। আর তাদের উপর বিন্দু পরিমাণও অন্যায় করা হবে না।
আয়াত-৫০ঃ লক্ষ্য কর, তারা কেমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে আল্লাহর প্রতি; এবং স্পষ্ট পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।