Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ১৫১-২০০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১৫১ঃ অতি সত্ত্বর আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব, কেননা তারা আল্লাহর এমন শরীক সাব্যস্ত করেছে যার সপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। আর তাদের ঠিকানা হল দোযখ কত নিকৃষ্ট জালিমদের আবাসস্থল।
আয়াত-১৫২ঃ আর আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন যখন তোমরা কাফেরদের খতম করছিলে তাঁরই আদেশে। তারপর তোমরা সাহস হারিয়ে ফেললে এবং পরস্পর মতবিরোধ করলে নির্দেশ পালনে, আর যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদের দেখাবার পরও তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের মাঝে কতক এরূপ ছিল যারা কামনা করছিল দুনিয়া এবং কতক কামনা করছিল আখেরাত। তারপর পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদের থেকে তোমাদের ফিরিয়ে দিলেন। বস্তুত তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহ তো মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।
আয়াত- ১৫৩ঃ স্মরণ কর, যখন তোমরা উপরের দিকে পালাচ্ছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো প্রতি তাকাচ্ছিলে না, অথচ রাসূল পেছন দিক থেকে তোমাদের ডাকছিলেন। ফলে তিনি তোমাদের দিলেন দুঃখের উপর দুঃখ, যাতে তোমরা দুঃখ না কর যা তোমরা হারিয়েছ তার জন্য, আর না সে বিপদের জন্য যা তোমাদের উপর আপতিত হয়েছে। আর আল্লাহ পূর্ণ অবহিত সে বিষয়ে যা তোমরা কর।
আয়াত-১৫৪ঃ তারপর তিনি তোমাদের উপর দুঃখের পর প্রশান্তি নাযিল করলেন তন্দ্রারূপে, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। আর একদল ছিল যাদের বিব্রত করে রেখেছিল তাদের প্রাণের চিন্তা, তারা আল্লাহর প্রতি জাহেলী যুগের ধারণার ন্যায় অবাস্তব ধারণা করেছিল। তারা বলছিলঃ এ ব্যাপারে আমাদের হাতে কি কিছু করার নেই? বলুনঃ নিশ্চয়, যাবতীয় বিষয় একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তারা নিজেদের মনে গোপন রাখে যা আপনার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলেঃ যদি আমাদের হাতে এ ব্যাপারে কিছু করার থাকত তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। বলুনঃ যদি তোমরা নিজেদের ঘরেও থাকতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল তারা বেরিয়ে পড়ত নিজেদের মৃত্যুর স্থানের দিকে। এসব এজন্য যে, আল্লাহ তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করবেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা নির্মল করবেন। মনের গোপন বিষয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
আয়াত-১৫৫ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তারা তো ছিল এমন, যাদের শয়তান পদস্খলন ঘটিয়েছিল তাদের কৃতকর্মের দরুন। অবশ্য আল্লাহ তাদের মাফ করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল।
আয়াত-১৫৬ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তাদের মত হয়ে না যারা কুফরী করেছে এবং নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে, যখন তারা পৃথিবীতে অভিযানে বের হয় কিংবা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়- তারা যদি আমাদের সাথে থাকত তবে মরতও না, নিহতও হত না। যেন আল্লাহ এটাকে তাদের অন্তরে পরিতাপের কারণ করে দেন। আল্লাহই জীবন দেন এবং প্রাণ সংহার করেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-১৫৭ঃ আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মরে যাও, তবে আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমা ও রহমত তার চেয়ে শ্রেয় যা তারা জমা করে।
আয়াত-১৫৮ঃ আর যদি তোমরা মরে যাও অথবা নিহত হও, নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের একত্র করা হবে।
আয়াত-১৫৯ঃ আর আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত থাকার দরুন আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন; কিন্তু যদি আপনি কর্কশ স্বভাব ও কঠোর হৃদয় হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং আপনি তাদের মাফ করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আর কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন সংকল্প করেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন তার উপর ভরসাকারীদের।
আয়াত-১৬০ঃ যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে? আর শুধু আল্লাহরই উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।
আয়াত-১৬১ঃ কোন নবীর পক্ষে সম্ভব নয় কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখা। কেউ কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখলে সে তা কেয়ামতের দিন নিয়ে আসবে। তারপর প্রত্যেককে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে যা সে অর্জন করেছে এবং তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।
আয়াত-১৬২ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট তার আনুগত্য করে সে কি ঐ ব্যক্তির মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং যার আবাস জাহান্নাম? আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
আয়াত-১৬৩ঃ আল্লাহ̖র কাছে মানুষ মর্যাদায় বিভিন্ন স্তরের। তারা যা করে আল্লাহ̖ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-১৬৪ঃ অবশ্যই আল্লাহ̖ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহর আয়াত তাদের পাঠ করে শুনান, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত; যদিও তারা পূর্বে প্রকাশ্য গোমরাহীতে ছিল।
আয়াত-১৬৫ঃ কি হল? যখন তোমাদের উপর এক বিপদ আপতিত হল, যার চেয়ে দ্বিগুণ বিপদ তোমরা ঘটিয়েছিলে, তখন তোমরা বললেঃ কোথা থেকে এল এ বিপদ? আপনি বলে দিন, এ বিপদ তোমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৬৬ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পর সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপদ আপতিত হয়েছিল তা আল্লাহরই ইচ্ছায় হয়েছিল। আর তা এজন্য যে, তিনি প্রকাশ করে দেবেন মু’মিনদের__
আয়াত-১৬৭ঃ এবং প্রকাশ করে দেবেন মোনাফেকদের। তাদের বলা হয়েছিলঃ এস তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শক্রদের প্রতিরোধ কর। তারা বলেছিলঃ যদি জানতাম যুদ্ধ হবে তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরন করতাম। সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর কাছাকাছি ছিল। তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ খুব ভালভাবে জানেন যা তারা গোপন রাখে।
আয়াত-১৬৮ঃ যারা ঘরে বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্পর্কে বলেঃ তারা আমাদের কথামত চললে নিহত হত না, তাদের আপনি বলে দিন; যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও।
আয়াত-১৬৯ঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না; বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত।
আয়াত-১৭০ঃ যারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
আয়াত-১৭১ঃ তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মুমিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।
আয়াত-১৭২ঃ আহত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়, তাদের মধ্যে যারা ভাল কাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
আয়াত-১৭৩ঃ তারা এমন মানুষ যে, লোকেরা তাদের বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্দে কাফেররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। একথা তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বললঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কাৰ্যনির্বাহক।
আয়াত-১৭৪ঃ তারপর তারা ফিরে এল আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে, কোন অমঙ্গলই তাদের স্পর্শ করেনি। আর আল্লাহ যাতে রাজি তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
আয়াত-১৭৫ঃ এ তো শয়তান ছাড়া আর কিছু নয়, সে তোমাদের ভয় দেখায় তার বন্ধুদের। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা প্রকৃত মু’মিন হও।
আয়াত-১৭৬ঃ আপনাকে যেন চিন্তা-ভাবনায় না ফেলে ঐ সকল লোক যারা কুফরীর দিকে ধাবিত হয়। তারা কখনও আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ চান যে আখেরাতে তাদের আদৌ কোন অংশ না দেন। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
আয়াত-১৭৭ঃ আর যারা ঈমাণের পরিবর্তে কুফরী ক্রয় করেছে তারা কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৭৮ঃ কাফেররা যেন কখনও মনে না করে যে, আমি তাদের যে অবকাশ দেই তাতে তাদের জন্য কোন মঙ্গল রয়েছে; আমি তো অবকাশ দেই শুধু এজন্য যে, তাদের গুনাহ যেন আরো বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৭৯ঃ আল্লাহ মু’মিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না, যে অবস্থায় তোমরা এখন আছ, যতক্ষণ পর্যন্ত না অপবিত্রকে পৃথক করেন পবিত্র থেকে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের গায়েবের সংবাদ দেবেন। তবে আল্লাহ তার রাসূলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলদের উপর। যদি তোমরা ঈমান আন এবং মোত্তাকী হও, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান।
আয়াত-১৮০ঃ যারা কৃপণতা করে তাতে যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে, তারা যেন মনে না করে যে এ কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক। ঐ মাল যাতে তারা কৃপণতা করেছিল, কেয়ামতের দিন তা দিয়ে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও জমিনের মালিকানা স্বত্ব একমাত্র আল্লাহর। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
আয়াত-১৮১ঃ নিশ্চয় আল্লহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলছে “আল্লাহ গরীব আর আমরা ধনী।” অবশ্যই আমি লিথে রাখব যা তারা বলেছে এবং তাদের নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা কারার বিষয়ও। আর আমি বলবঃ আস্বাদন কর জলন্ত আগুনের শাস্তি।
আয়াত-১৮২ঃ এই হলো তোমাদের সেসব কাজের ফল যা তোমরা পূর্বে স্বহস্তে করেছিলে। বস্তুত আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।
আয়াত-১৮৩ঃ যারা বলেঃ আল্লাহ তো আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কোন রাসূলের প্রতি ঈমান না আনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমাদের কাছে এমন কোরবাণী নিয়ে আসবে যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে; আপনি তাদের বলে দিন তোমাদের কাছে বহু রাসূল এসেছিল আমার আগে স্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তোমরা যা আব্দার করছ তা নিয়ে, তবে কেন তাদের হত্যা করেছিলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক?
আয়াত-১৮৪ঃ যদি এরা আপনাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে, তবে আপনার পূর্বেও বহু রাসূলকে মিত্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যারা এসেছিল স্পষ্ট নিদর্শন, বহু সহীফা এবং উজ্জ্বল কিতাব নিয়ে।
আয়াত-১৮৫ঃ নিশ্চয় প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অবশ্যই কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল তোমরা পূর্ণমাত্রায় প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করান হবে, সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ক্ষণিকের ভোগ-সামগ্ৰী ছাড়া আর কিছু নয়।
আয়াত-১৮৬ঃ অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধন-সম্পদে এবং তোমাদের জন-সম্পদে। আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। তবে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
আয়াত-১৮৭ঃ স্মরণ কর, যখন আল্লাহ প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আহলে কিতাবেরঃ তোমরা মানুষের কাছে কিতাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা সে প্রতিশ্রুতি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল এবং তার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহণ করল। সুতরাং তারা যা বিনিময় গ্রহণ করল কত নিকৃষ্টতা!
আয়াত-১৮৮ঃ তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে-তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৮৯ঃ আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। আর আল্লাহই হলেন সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৯০ঃ নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃজনে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য,
আয়াত-১৯১ঃ যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে এবং চিন্তা করে আসমান ও জমিনের সৃজনের ব্যাপারে, এবং বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করনি। আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমাদের দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
আয়াত-১৯২ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে দাখিল করলে তাকে তো লাঞ্ছিত করলে; আর জালিমদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই।
আয়াত-১৯৩ঃ হে আমাদের পালনকর্তা নিশ্চয় আমরা শুনেছি এক আহ্বানকারীকে ঈমান আনার জন্য আহবান করতেঃ “তোমরা ঈমান আন তোমাদের রবের প্রতি” সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতএব তুমি মাফ করে দাও আমাদের গুনাহগুলো এবং দূরীভূত করে দাও আমাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ আর আমাদের মৃত্যু দাও নেককারদের সাথে।
আয়াত-১৯৪ঃ হে আমাদের রব! আর তুমি আমাদের দাও, যা তোমার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদের দিতে ওয়াদা করেছ এবং লাঞ্ছিত কর না আমাদের কেয়ামতের দিন। তুমি তো কখনও ওয়াদা খেলাফ কর না।
আয়াত-১৯৫ঃ তারপর তাদের রব তাদের প্রর্থনা কবুল করে বললেনঃ “আমি বিনষ্ট করি না তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর কর্ম, তা সে হোক পুরুষ কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা একে অন্যের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, আমর পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে; অবশ্যই আমি তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদের দাখিল করব বেহেশতে, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ। এই হল পুরস্কার আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম পুরস্কার।
আয়াত-১৯৬ঃ তোমাকে যেন ধোঁকা না দেয়, কাফেরদের দেশে দেশে অবাধ বিচরণ।
আয়াত-১৯৭ঃ এ তো ক্ষণিকের উপভোগ। তারপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর তা কত নিকৃষ্ট আবাস!
আয়াত-১৯৮ঃ কিন্তু যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এ আপ্যায়ন আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা নেককারদের জন্য শ্ৰেয়।
আয়াত-১৯৯ঃ আর আহলে কিতাবের মধ্যে অবশ্য এমন লোকও আছে যারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং যা তোমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে আর যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে তার উপরও আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত অবস্থায়। তারা আল্লাহর আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে না। তারাই হল সে লোক যাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।
আয়াত-২০০ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।
Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ১২৬-১৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦ ۗ وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ ١٢٦
আয়াত-১২৬: এটা তো আল্লাহ শুধু এজন্য করেছেন যেন তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয়, যাতে তোমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো শুধুমাত্র পরাক্রমশালী মাহাবিজ্ঞ আল্লাহ̖র তরফ থেকে হয়ে থাকে,
لِيَقْطَعَ طَرَفًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنقَلِبُوا۟ خَآئِبِينَ ١٢٧
আয়াত-১২৭: যাতে ধ্বংস করে দেন কাফেরদের কোন দলকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন তাদের, যেন তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।
لَيْسَ لَكَ مِنَ ٱلْأَمْرِ شَىْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَـٰلِمُونَ ١٢٨
আয়াত-১২৮: আপনার কিছু করণীয় নেই এ ব্যাপারে যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দেবেন। কারণ তারা তো জালিম।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٢٩
আয়াত-১২৯: যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে সবই আল্লাহর। তিনি মাফ করেন যাকে চান এবং আযাব দেন যাকে চান। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوا۟ ٱلرِّبَوٰٓا۟ أَضْعَـٰفًۭا مُّضَـٰعَفَةًۭ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ١٣٠
আয়াত-১৩০: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সুদ খেয়ো না চক্রবৃদ্ধি হারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাতে সফলতা লাভ করতে পার।
وَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِىٓ أُعِدَّتْ لِلْكَـٰفِرِينَ ١٣١
আয়াত-১৩১: আর তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ١٣٢
আয়াত-১৩২: আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং রাসূলের যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।
وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا ٱلسَّمَـٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ١٣٣
আয়াত-১৩৩: তোমরা প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে ধাবমান হও তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা এবং ঐ জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মোত্তাকীদের জন্য,
ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِى ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلْكَـٰظِمِينَ ٱلْغَيْظَ وَٱلْعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ١٣٤
আয়াত-১৩৪: যারা ব্যয় করে সচ্ছল অবস্থায়ও এবং অসচ্ছল অবস্থায়ও আর তারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের অপরাধ ক্ষমাকারী। আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন,
وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةً أَوْ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا۟ ٱللَّهَ فَٱسْتَغْفَرُوا۟ لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلُوا۟ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ١٣٥
আয়াত-১৩৫: এবং যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদের অপরাধের জন্য। আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে অপরাধ মার্জনা করবে? তারা যা করে ফেলে, জেনে-শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে ন।
أُو۟لَـٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغْفِرَةٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّـٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ ٱلْعَـٰمِلِينَ ١٣٦
আয়াত-১৩৬: এরাই তারা যাদের প্রতিদান হল তাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং ঐ জান্নাত যার পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের!
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌۭ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ ١٣٧
আয়াত-১৩৭: অবশ্যই গত হয়েছে তোমাদের আগে অনেক জীবনাচরণ। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং লক্ষ্য কর, মিথ্যাশ্রয়ীদের পরিণতি কি হয়েছিল?
هَـٰذَا بَيَانٌۭ لِّلنَّاسِ وَهُدًۭى وَمَوْعِظَةٌۭ لِّلْمُتَّقِينَ ١٣٨
আয়াত- ১৩৮: এই হল সকল মানুষের জন্য বিশদ বর্ণনা এবং হেদায়াত ও উপদেশ মোত্তাকীদের জন্য।
وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ١٣٩
আয়াত-১৩৯: আর তোমরা সাহস হারিয়ো না এবং দুঃখও কর না, তোমরাই পরিণামে বিজয়ী হবে, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও।
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌۭ فَقَدْ مَسَّ ٱلْقَوْمَ قَرْحٌۭ مِّثْلُهُۥ ۚ وَتِلْكَ ٱلْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ ٱلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَآءَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٤٠
আয়াত-১৪০: যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে তবে অনুরূপ আঘাত তো তাদেরও লেগেছিল। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মাঝে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত করি। যাতে আল্লাহ জানতে পারেন কারা ঈমান এনেছে এবং যাতে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করতে পারেন। আল্লাহ জালিমদের ভালবাসেন না,
وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَمْحَقَ ٱلْكَـٰفِرِينَ ١٤١
আয়াত-১৪১: এবং যাতে আল্লাহ নির্মল করতে পারেন মুমিনদের আর নিপাত করতে পারেন কাফেরদের।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٤٢
আয়াত-১৪২: তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করবে, এখনও আল্লাহ প্রকাশ করেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল?
وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ ٱلْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ١٤٣
আয়াত-১৪৩: আর তোমরা তো মরণ কামনা করতে মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই। এখন তো তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছ।
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌۭ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ ۚ أَفَإِي۟ن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيْـًۭٔا ۗ وَسَيَجْزِى ٱللَّهُ ٱلشَّـٰكِرِينَ ١٤٤
আয়াত-১৪৪: মুহাম্মদ তো একজন রাসূল ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। তার পূর্বেও অনেক রাসূল চলে গেছে। অতএব যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা পায়ের গোড়ালিতে ভর করে পেছনে ফিরে যাবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ অতি সত্বর কৃতজ্ঞদের পুরষ্কার দেবেন।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ كِتَـٰبًۭا مُّؤَجَّلًۭا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلْـَٔاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِى ٱلشَّـٰكِرِينَ ١٤٥
আয়াত-১৪৫: আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ মরতে পারে না, এজন্য নির্দিষ্ট সময় লিখিত আছে। যে কেউ পার্থিব পুরস্কার চায় আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দেই, আর যে পারলৌকিক পুরস্কার চায় আমি তাকে তা সেখানে দেব। অতি সত্বর আমি কৃতজ্ঞদের পুরস্কার দেব।
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّۢ قَـٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌۭ فَمَا وَهَنُوا۟ لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا۟ وَمَا ٱسْتَكَانُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٤٦
আয়াত-১৪৬: আর নবীদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধ করেছে, তাদের সাথে ছিল বহু আল্লাহওয়ালা। তারা সাহস হারায়নি আল্লাহর পথে তাদের উপর আপতিত বিপদ-আপদের কারণে, আর না তারা দুর্বল হয়েছে, আর না দমে গেছে। আল্লাহ এরূপ দৃঢ়পদ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন।
وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِىٓ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ ١٤٧
আয়াত-১৪৭: আর তাদের কোন কথা ছিল না একথা ছাড়াঃ হে আমাদের রব! মার্জনা করে দাও আমাদের অপরাধ এবং আমাদের কাজে যে বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে তা; আর দৃঢ়পদ রাখ আমাদের এবং কাফের কওমের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য কর।
فَـَٔاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ ٱلْـَٔاخِرَةِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ١٤٨
আয়াত-১৪৮: তারপর আল্লাহ তাদের দিয়েছেন পার্থিব পুরস্কার এবং আখেরাতের উত্তম পুরস্কারও। আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمْ فَتَنقَلِبُوا۟ خَـٰسِرِينَ ١٤٩
আয়াত-১৪৯: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা মেনে চল, তবে তারা তোমাদের পেছনে ফিরিয়ে দেবে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
بَلِ ٱللَّهُ مَوْلَىٰكُمْ ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلنَّـٰصِرِينَ ١٥٠
আয়াত-১৫০: বরং আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ১০১-১২৫)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُۥ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ١٠١
আয়াত-১০১: কেমন করে তোমরা কুফরী করবে? অথচ তোমাদের পাঠ করে শুনান হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং তোমাদেরই মধ্যে আছেন আল্লাহর রাসূল। আর যে কেউ দৃঢ়ভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে সে অবশ্যই পরিচালিত হবে সরল-সঠিক পথে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ١٠٢
আয়াত-১০২: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে সেরূপ ভয় করা যেরূপ তাকে ভয় করা উচিত। আর তোমরা প্রকৃত মুসলিম না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর না।
وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟ ۚ وَٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَآءًۭ فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِۦٓ إِخْوَٰنًۭا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍۢ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ١٠٣
আয়াত-১০৩: আর তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জু ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। আর স্মরণ কর আল্লাহর সে অনুগ্রহ যা তোমাদের উপর রয়েছে-তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, আল্লাহ তোমাদের হৃদয়ে মহব্বত সৃষ্টি করেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা ছিলে এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেন। এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা সঠিক পথে চলতে পার।
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌۭ يَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ ١٠٤
আয়াত-১০৪: আর তোমাদের মধ্যে এমন একদল থাকা আবশ্যক যারা মানুষের কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং আদেশ করবে ভালো কাজের আর নিষেধ করবে মন্দ কাজে। এরাই হলো সফলকাম।
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ ١٠٥
আয়াত-১০৫: আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃস্টি করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌۭ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌۭ ۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَـٰنِكُمْ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ١٠٦
আয়াত-১০৬: সেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু চেহারা কালো হবে। যাদের চেহারা কালো হবে তাদের বলা হবে: তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা যে কুফরী করতে তার জন্য এখন আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱبْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِى رَحْمَةِ ٱللَّهِ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ١٠٧
আয়াত-১০৭: আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে আল্লাহর রহমতের মধ্যে, তাতে তারা চিরকাল থাকবে।
تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۗ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًۭا لِّلْعَـٰلَمِينَ ١٠٨
আয়াত-১০৮: এসব হল আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনাকে যথাযথভাবে পাঠ করে শুনাচ্ছি। আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি জুলুম করতে চান না।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ١٠٩
আয়াত-১০৯: আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেসবই আল্লাহর, আর যাবতীয় বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তীত হবে।
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ ۗ وَلَوْ ءَامَنَ أَهْلُ ٱلْكِتَـٰبِ لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ ٱلْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ ١١٠
আয়াত-১১০: তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ উন্মত, মানুষের হিতের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটান হয়েছে, তোমরা ভাল কাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। আহলে কিতাব যদি ঈমান আনত তবে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হত। তাদের মধ্যে কতক মুমিন কিন্তু অধিকাংশই হল পাপাচারী-ফাসিক।
لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّآ أَذًۭى ۖ وَإِن يُقَـٰتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ ٱلْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ ١١١
আয়াত-১১১: তারা কখনও তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, সামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে তবে তারা তোমাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে, তারপর তাদের কোনরকম সাহায্য করা হবে না।
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوٓا۟ إِلَّا بِحَبْلٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبْلٍۢ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلْمَسْكَنَةُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلْأَنۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ١١٢
আয়াত-১১২: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাইরে তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের উপর সেখানেই লাঞ্ছনার ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তারা আল্লাহর গজবের পাত্র হয়েছে এবং ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের উপর হীনতা-দীনতার। এসব এজন্য যে, তারা প্রত্যাখ্যান করত আল্লাহর আয়াত এবং অন্যায়ভাবে হত্যা করত নবীদের। এ কারণে যে, তারা নাফরমানী করেছিল এবং সীমালংঘন করেছিল।
لَيْسُوا۟ سَوَآءًۭ ۗ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ أُمَّةٌۭ قَآئِمَةٌۭ يَتْلُونَ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ ١١٣
আয়াত-১১৩: তারা সবাই সমান নয়; আহলে কিতাবের মধ্যে একদল আছে অবিচলিত, রাতের বেলায় তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে ও সিজদা করে।
يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُسَـٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ١١٤
আয়াত-১১৪: তারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি। তারা আদেশ করে ভাল কাজের এবং নিষেধ করে মন্দ কাজে এবং তারা প্রতিযোগিতা করে নেক কাজে। তারাই নেককারদের মধ্যে সামিল।
وَمَا يَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُتَّقِينَ ١١٥
আয়াত-১১৫: তারা যেসব নেক কাজ করে তার বিনিময় থেকে তাদের কখনও বঞ্চিত করা হবে না। আর মোত্তাকীদের ব্যাপারে আল্লাহ খুব ভাল জানেন।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَـٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ١١٦
আয়াত-১১৬: নিশ্চয় যারা কুফরী করে, আল্লাহর সামনে কোন কাজে আসবে না তাদের ধন-সম্পদ আর না তাদের সন্তান-সন্ততি। আর তারাই দোযখবাসী, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।
مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِى هَـٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍۢ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍۢ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ ٱللَّهُ وَلَـٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ١١٧
আয়াত-১১৭: তারা এ পার্থিব জীবনে যা কিছু ব্যয় করে তার উদাহরণ ঐ বায়ুর ন্যায় যাতে রয়েছে প্রচণ্ড হিম, যা আঘাত করল এমন লোকদের শস্যক্ষেত্রকে যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল, ফলে সে বায়ু শস্যক্ষেত্রটি ধ্বংস করে দিল। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন অন্যায় করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অবিচার করেছে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةًۭ مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًۭا وَدُّوا۟ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ ٱلْبَغْضَآءُ مِنْ أَفْوَٰهِهِمْ وَمَا تُخْفِى صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ١١٨
আয়াত-১১৮: হে যারা ঈমান এনেছে! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাওকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহন কর না। তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করে না। যা তোমাদের কষ্ট দেয় তা তারা কামনা করে। আর কখনো কখনো তাদের মুখ থেকে বিদ্বেষ প্রকাশ পায়; কিন্তু যা তাদের হৃদয় গোপন রাখে তা তো আরো গুরুতর। আমি তো তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে প্রকাশ করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার।
هَـٰٓأَنتُمْ أُو۟لَآءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِٱلْكِتَـٰبِ كُلِّهِۦ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوْا۟ عَضُّوا۟ عَلَيْكُمُ ٱلْأَنَامِلَ مِنَ ٱلْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا۟ بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ١١٩
আয়াত-১১৯: হাঁ, তোমরা এরুপ যে, তোমরা তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের ভালবাসে না। আর তোমরা সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমাণ এনেছি। কিন্তু যখন তারা পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে। বলুনঃ তোমরা মর তোমাদেরই আক্রোশে। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের কথা সবিশেষ অবহিত।
إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌۭ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌۭ يَفْرَحُوا۟ بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْـًٔا ۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌۭ ١٢٠
আয়াত-১২০: যদি তোমাদের কোন মঙ্গল হয়, তবে তা তাদের খারাপ লাগে, আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল হয়, তাহলে তাতে তারা আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন যা তারা করে।
وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ ٱلْمُؤْمِنِينَ مَقَـٰعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٢١
আয়াত-১২১: আর স্মরণ কর, যখন আপনি আপনার পরিজনদের কাছ থেকে ভোরবেলায় বের হয়ে মুমিনদের যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করছিলেন, আর আল্লাহ তো সব শোনেন, সব জানেন।
إِذْ هَمَّت طَّآئِفَتَانِ مِنكُمْ أَن تَفْشَلَا وَٱللَّهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ١٢٢
আয়াত-১২২: যখন তোমাদের মধ্যের দুটি দল সাহস হারাতে বসল, অথচ আল্লাহ তাদের সহায়ক ছিলেন; আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدْرٍۢ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌۭ ۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ١٢٣
আয়াত-১২৩: আর এ তো সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ বদর যুদ্ধে তোমাদের সাহায্যে করেছিলেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা শোকরগুজারী করতে পার।
إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَـٰثَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤
আয়াত-১২৪: স্মরণ কর, আপনি যখন মু’মিনদের বলছিলেনঃ তোমাদের জন্য একি যথেষ্ট নয় যে, আসমান থেকে নাযিল হওয়া তিন হাজার ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের রব তোমাদের সাহায্যে করবেন?
بَلَىٰٓ ۚ إِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥
আয়াত- ১২৫: হাঁ, অবশ্যই। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর; তবে কাফের বাহিনী অতর্কিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন।
Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ৭৬-১০০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِۦ وَٱتَّقَىٰ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَّقِينَ ٧٦
আয়াত-৭৬: হাঁ, অবশ্যই যে ব্যক্তি তার অঙ্গীকার পালন করে এবং আল্লাহকে ভয় করে চলে, তবে তো এরূপ মোত্তাকীদের আল্লাহ̖ ভালবাসেন।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ ٱللَّهِ وَأَيْمَـٰنِهِمْ ثَمَنًۭا قَلِيلًا أُو۟لَـٰٓئِكَ لَا خَلَـٰقَ لَهُمْ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ٧٧
আয়াত-৭৭: নিশ্চয় যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদার পরিবর্তে এবং নিজেদের শপথের পরিবর্তে সামান্য বিনিময় গ্রহণ করে তাদের জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। আর কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না; তাদের জন্য নির্ধারিত আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًۭا يَلْوُۥنَ أَلْسِنَتَهُم بِٱلْكِتَـٰبِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ ٱلْكِتَـٰبِ وَمَا هُوَ مِنَ ٱلْكِتَـٰبِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ٧٨
আয়াত-৭৮: আর তাদের মধ্যে তো একদল লোক এমন আছে যারা নিজেদের জিহবা বাঁকা করে কিতাব পাঠ করে যাতে তোমরা মনে কর যে, তা কিতাবেরই অংশ, অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। আর তারা বলেঃ “এসব আল্লাহর তরফ থেকে”, আসলে তা আল্লাহর তরফ থেকে নয়। তারা জেনে-শুনে আল্লাহ̖র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে।
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحُكْمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا۟ عِبَادًۭا لِّى مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَـٰكِن كُونُوا۟ رَبَّـٰنِيِّـۧنَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ ٱلْكِتَـٰبَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ ٧٩
আয়াত-৭৯: কোন মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হেকমত ও নবুওত দান করবেন তারপর সে লোকদের বলবেঃ “তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার বান্দা হয়ে যাও।” বরং সে বলবেঃ “তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, এজন্য যে, তোমরা শেখাও কিতাব এবং নিজেরাও পাঠ কর।”
وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا۟ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّـۧنَ أَرْبَابًا ۗ أَيَأْمُرُكُم بِٱلْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ ٨٠
আয়াত-৮০: সে তোমাদের আদেশ দেবে না যে, তোমরা ফেরেশতাদের এবং নবীদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ কর। সে কি তোমাদের নির্দেশ দেবে কুফরীর, এ অবস্থায় যে, তোমরা মুসলিম?
وَإِذْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَـٰقَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ لَمَآ ءَاتَيْتُكُم مِّن كِتَـٰبٍۢ وَحِكْمَةٍۢ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُولٌۭ مُّصَدِّقٌۭ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِۦ وَلَتَنصُرُنَّهُۥ ۚ قَالَ ءَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِى ۖ قَالُوٓا۟ أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَٱشْهَدُوا۟ وَأَنَا۠ مَعَكُم مِّنَ ٱلشَّـٰهِدِينَ ٨١
আয়াত-৮১: আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন নবীদের কাছ থেকে যে, যা কিছু আমি তোমাদের কিতাব ও হেকমত দিয়েছি এবং তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে যখন একজন রাসূল আসবে তখন অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ বিষয়ে আমার অঙ্গীকার কবুল করলে? তারা বললঃ আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা সাক্ষী থেক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম।
فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ ٨٢
আয়াত-৮২: এরপর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে তারাই হবে নাফরমান।
أَفَغَيْرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُۥٓ أَسْلَمَ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ طَوْعًۭا وَكَرْهًۭا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ ٨٣
আয়াত-৮৩: তবে কি তারা আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন অন্বেষণ করে? অথচ তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তারই দিকে তারা সবাই প্রত্যাবর্তিত হবে।
قُلْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍۢ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ ٨٤
আয়াত-৮৪: বলুনঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তার প্রতি এবং যা কিছু নাযিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার সন্তানদের উপর এবং যা কিছু প্রদান করা হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদের তাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আর আমরা তারই জন্য নিবেদিত আত্মসমর্পণকারী।
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَـٰمِ دِينًۭا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ ٨٥
আয়াত-৮৫: যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন অন্বেষণ করবে, কখনও তা তার থেকে কবুল করা হবে না; আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
كَيْفَ يَهْدِى ٱللَّهُ قَوْمًۭا كَفَرُوا۟ بَعْدَ إِيمَـٰنِهِمْ وَشَهِدُوٓا۟ أَنَّ ٱلرَّسُولَ حَقٌّۭ وَجَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ ۚ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٨٦
আয়াত-৮৬: কিরূপে আল্লাহ এমন জাতিকে সৎপথে পরিচালিত করবেন যারা কুফরী করে তাদের ঈমান আনার পর এবং রাসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর আর তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর? আল্লাহ জালিম কওমকে হেদায়াত দান করেন না।
أُو۟لَـٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ ٱللَّهِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ ٨٧
আয়াত-৮৭: এরূপ লোকদের কৃতকর্মের প্রতিফল হল এই যে, নিশ্চয়ই তাদের প্রতি লা’নত আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং মানুষ সকলেরই।
خَـٰلِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ ٱلْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ٨٨
আয়াত-৮৮: তারা অনন্তকাল এ লানতে থাকবে; তাদের আযাব হালকা করা হবে না এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না।
إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ ٨٩
আয়াত-৮৯: তবে তাদের ব্যতিরেকে যারা এরপর তওবা করে নেয় এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بَعْدَ إِيمَـٰنِهِمْ ثُمَّ ٱزْدَادُوا۟ كُفْرًۭا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ٩٠
আয়াত-৯০: অবশ্য যারা কুফরী করে তাদের ঈমান আনার পর এবং বৃদ্ধি পেতে থাকে তাদের কুফরী প্রবৃত্তি, কখনও কবুল করা হবে না তাদের তওবা। এরাই প্রকৃত গোমরাহ।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَمَاتُوا۟ وَهُمْ كُفَّارٌۭ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ ٱلْأَرْضِ ذَهَبًۭا وَلَوِ ٱفْتَدَىٰ بِهِۦٓ ۗ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ وَمَا لَهُم مِّن نَّـٰصِرِينَ ٩١
আয়াত-৯১: নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফের অবস্থায়ই যাদের মৃত্যু ঘটেছে, তাদের কারো কাছ থেকে পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণও কখনো কবুল করা হবে না, যদিও তারা তা কুফরীর বিনিময় দিতে চায়। এদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থাকবে না এদের জন্য কোন সাহায্যকারী।
لَن تَنَالُوا۟ ٱلْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا۟ مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِن شَىْءٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌۭ ٩٢
আয়াত-৯২: তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করবে না যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয়বস্তু থেকে ব্যয় করবে, আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর, আল্লাহ তো তা খুব জানেন।
كُلُّ ٱلطَّعَامِ كَانَ حِلًّۭا لِّبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَٰٓءِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ ٱلتَّوْرَىٰةُ ۗ قُلْ فَأْتُوا۟ بِٱلتَّوْرَىٰةِ فَٱتْلُوهَآ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٩٣
আয়াত-৯৩: সব খাদ্যই বনী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল তাছাড়া, যা ইয়াকুব নিজের জন্য হারাম করেছিল তাওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে। বলুন, তাওরাত নিয়ে এস এবং তা পাঠ কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
فَمَنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٩٤
আয়াত-৯৪: সুতরাং এরপরও যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করবে তারাই প্রকৃত জালিম।
قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُ ۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٩٥
আয়াত-৯৫: বলুন, আল্লাহ সত্য বলেছেন। অতএব তোমরা মিল্লাতে ইব্রাহীমের অনুসরণ কর, যাতে কোন বক্রতা নেই। ইব্রাহীম মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍۢ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِى بِبَكَّةَ مُبَارَكًۭا وَهُدًۭى لِّلْعَـٰلَمِينَ ٩٦
আয়াত-৯৬: নিশ্চয় সর্বপ্রথম যে ঘর মানুষের জন্য স্থাপিত হয়েছিল তা তো সে ঘর যা মক্কায় অবস্থিত যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত।
فِيهِ ءَايَـٰتٌۢ بَيِّنَـٰتٌۭ مَّقَامُ إِبْرَٰهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنًۭا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًۭا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٩٧
আয়াত-৯৭: এতে রয়েছে অনেক প্রকাশ্য নিদর্শন, মাকামে ইব্রাহীম’ তার অন্যতম। যে কেউ এ ঘরে প্রবেশ করে সে নিরাপদ হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে তার উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু কেউ কুফরী করলে সে জেনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ্ সারাজাহান থেকে বেনিয়াজ__অমুখাপেক্ষী।
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعْمَلُونَ ٩٨
আয়াত-৯৮: বলুন, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর এ আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান কর? তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তার সাক্ষী।
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَأَنتُمْ شُهَدَآءُ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٩٩
আয়াত-৯৯: বলুন, হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা তাদের আল্লাহর পথে বাধা দাও, যারা ঈমান এনেছে, তাতে বক্রতা অনুপ্রবেশ করানোর পন্থা অন্বেষণ করে, অথচ তোমরা এর সত্যতার সাক্ষ্য বহনকারী। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ فَرِيقًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَـٰنِكُمْ كَـٰفِرِينَ ١٠٠
আয়াত-১০০: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যদি আহলে কিতাবের কোন দলের কথা মান, তবে তারা তোমাদের ঈমান আনার পর আবার কাফেরে পরিণত করে দেবে।
Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ৫১-৭৫)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
إِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۗ هَـٰذَا صِرَٰطٌۭ مُّسْتَقِيمٌۭ ٥١
আয়াত-৫১: নিশ্চয় আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। সুতরাং তোমরা তারই ইবাদত কর। এটাই সরল-সঠিক পথ।
فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ ٱلْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ قَالَ ٱلْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ٥٢
আয়াত-৫২: তারপর যখন ঈসা তাদের মধ্যে কুফরী উপলব্ধি করতে পারল তখন সে বললঃ কেউ কি আছে যে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে? সঙ্গী-সাথীরা বললঃ আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা তো আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম-আত্মসমর্পণকারী।
رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلْتَ وَٱتَّبَعْنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكْتُبْنَا مَعَ ٱلشَّـٰهِدِينَ ٥٣
আয়াত-৫৩: হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি যা নাযিল করেছ আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং আনুগত্য করেছি রাসূলের। সুতরাং তুমি আমাদের সাক্ষ্য বহনকারীদের তালিকাভুক্ত করে নাও।
وَمَكَرُوا۟ وَمَكَرَ ٱللَّهُ ۖ وَٱللَّهُ خَيْرُ ٱلْمَـٰكِرِينَ ٥٤
আয়াত-৫৪: আর তারা গোপন ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করলেন। বস্তুত আল্লাহ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।
إِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَـٰعِيسَىٰٓ إِنِّى مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَىَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَجَاعِلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوكَ فَوْقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۖ ثُمَّ إِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ٥٥
আয়াত-৫৫: স্বরণ কর, যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা। অবশ্যই আমি তোমার কাল পূর্ণ করব, তোমাকে আমার দিকে তুলে নেব এবং যারা কুফর করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র ও মুক্ত করব। আর যারা প্রকৃতভাবে তোমার অনুসরণ করবে কেয়ামত পর্যন্ত তাদের আমি কাফেরদের উপর স্থান দেব। অতঃপর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে। তখন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে, আমি তোমাদের মধ্যে তার মীমাংসা করে দেব।
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًۭا شَدِيدًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّـٰصِرِينَ ٥٦
আয়াত-৫৬: অতএব যারা কুফরী করেছে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের কঠোর শাস্তি দেব, আর তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٥٧
আয়াত-৫৭: আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তিনি তাদের পুরোপুরি দেবেন তাদের প্রতিফল। আল্লাহ জালিমদের ভালবাসেন না।
ذَٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ ٱلْـَٔايَـٰتِ وَٱلذِّكْرِ ٱلْحَكِيمِ ٥٨
আয়াত-৫৮: এসব যা আমি তোমার কাছে পাঠ করি, তা নিদর্শন ও জ্ঞানগর্ভ।
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَ ۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍۢ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٥٩
আয়াত-৫৯: নিশ্চয় আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তের মত। তিনি আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন, তারপর তাকে বলেছিলেনঃ হয়ে যাও; তখনই সে হয়ে গেল।
ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْمُمْتَرِينَ ٦٠
আয়াত-৬০: এ সত্য তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে, সুতরাং সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে না।
فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَـٰذِبِينَ ٦١
আয়াত-৬১: যে কেউ তোমার সাথে ঈসা সম্বন্ধে বিতর্ক করে তোমার কাছে জ্ঞান আসার পরেও, তাকে বলে দাও; এস আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের, তারপর সবাই মিলে বিনীতভাবে প্রার্থনা করি আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত দেই।
إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلْقَصَصُ ٱلْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَـٰهٍ إِلَّا ٱللَّهُ ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٦٢
আয়াত-৬২: নিশ্চয়ই এ বর্ণনা অতি সত্য বৃত্তান্ত একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ।
فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُفْسِدِينَ ٦٣
আয়াত-৬৩: এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ তো ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত।
قُلْ يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ كَلِمَةٍۢ سَوَآءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِۦ شَيْـًۭٔا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًۭا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقُولُوا۟ ٱشْهَدُوا۟ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ٦٤
আয়াত-৬৪: আপনি বলে দিন: হে আহলে কিতাব! এস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তা হল আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই যেন তার শরীক সাব্যস্ত না করি এবং আমাদের কেউ যেন কাউকে পালনকর্তারূপে গ্রহণ না করে আল্লাহকে ত্যাগ করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমরা বল, “তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা তো মুসলিম।”
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تُحَآجُّونَ فِىٓ إِبْرَٰهِيمَ وَمَآ أُنزِلَتِ ٱلتَّوْرَىٰةُ وَٱلْإِنجِيلُ إِلَّا مِنۢ بَعْدِهِۦٓ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ٦٥
আয়াত-৬৫: হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা ইব্রাহীম সম্পর্কে তর্ক কর? অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো তার অনেক পরে নাযিল করা হয়েছিল। তবুও কি তোমরা বুঝ না?
هَـٰٓأَنتُمْ هَـٰٓؤُلَآءِ حَـٰجَجْتُمْ فِيمَا لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ فَلِمَ تُحَآجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ ۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ٦٦
আয়াত-৬৬: হাঁ, তোমরা তো ইতিপূর্বে তর্ক করেছ এমন বিষয়ে যাতে তোমাদের কিছুমাত্র জ্ঞান আছে, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? আল্লাহ খুব জানেন, তোমরা জান না।
مَا كَانَ إِبْرَٰهِيمُ يَهُودِيًّۭا وَلَا نَصْرَانِيًّۭا وَلَـٰكِن كَانَ حَنِيفًۭا مُّسْلِمًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٦٧
আয়াত-৬৭: ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না এবং নাসারাও ছিল না। সে ছিল একনিষ্ঠ সরলপন্থী মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
إِنَّ أَوْلَى ٱلنَّاسِ بِإِبْرَٰهِيمَ لَلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ وَهَـٰذَا ٱلنَّبِىُّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٦٨
আয়াত-৬৮: মানুষের মধ্যে ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম তারা যারা তার অনুসরণ করেছিল এবং এই নবী ও যারা তার প্রতি ঈমান এনেছে। আল্লাহ মু’মিনদের বন্ধু।
وَدَّت طَّآئِفَةٌۭ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ ٦٩
আয়াত-৬৯: আহলে কিতাবের এক দল মনে-প্রাণে চায় যেন তোমাদের বিপথগামী করতে পারে, কিন্তু তারা কাউকে বিপথগামী করতে পারে না নিজেদের ছাড়া, অথচ তারা তা উপলব্ধি করে না।
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ ٧٠
আয়াত-৭০: হে আহলে কিতাব। কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরাই তার সাক্ষ্য দিচ্ছ?
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لِمَ تَلْبِسُونَ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَـٰطِلِ وَتَكْتُمُونَ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ٧١
আয়াত-৭১: হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্য গোপন করছ, অথচ তোমরা জান?
وَقَالَت طَّآئِفَةٌۭ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ ءَامِنُوا۟ بِٱلَّذِىٓ أُنزِلَ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَجْهَ ٱلنَّهَارِ وَٱكْفُرُوٓا۟ ءَاخِرَهُۥ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ٧٢
আয়াত-৭২: আহলে কিতাবের একদল বললঃ “মু’মিনদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমরা দিনের প্রথম ভাগে তাতে ঈমান আন এবং দিনের শেষে তা প্রত্যাখ্যান কর, হয়ত এতে তারা ইসলাম থেকে ফিরে যাবে।”
وَلَا تُؤْمِنُوٓا۟ إِلَّا لِمَن تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ ٱلْهُدَىٰ هُدَى ٱللَّهِ أَن يُؤْتَىٰٓ أَحَدٌۭ مِّثْلَ مَآ أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَآجُّوكُمْ عِندَ رَبِّكُمْ ۗ قُلْ إِنَّ ٱلْفَضْلَ بِيَدِ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌۭ ٧٣
আয়াত-৭৩: “আর তোমরা বিশ্বাস করবে না স্বধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য কাউকে।” আপনি বলে দিন; নিশ্চয় প্রকৃত হেদায়াত হল আল্লাহর হেদায়াত। আর এসব এজন্য যে, তোমরা যা পেয়েছিলে তা অন্য কেউ কেন পাবে? কিংবা তারা কেন তোমাদের পরাভূত করবে যুক্তিতে তোমাদের পালনকর্তার সামনে? বলুনঃ নিশ্চয়ই যাবতীয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছে তা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِۦ مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ ٧٤
আয়াত-৭৪: তিনি যাকে ইচ্ছে স্বীয় অনুগ্রহের জন্য বিশেষ করে বেছে নেন। আর আল্লাহ হল মহা অনুগ্রহশীল।
وَمِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍۢ يُؤَدِّهِۦٓ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍۢ لَّا يُؤَدِّهِۦٓ إِلَيْكَ إِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًۭا ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا۟ لَيْسَ عَلَيْنَا فِى ٱلْأُمِّيِّـۧنَ سَبِيلٌۭ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ٧٥
আয়াত-৭৫: আর আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও আছে, যদি তুমি তার কাছে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তা সে তোমাকে ফেরত দেবে। তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যদি তুমি তার কাছে একটিমাত্র দীনারও আমানত রাখ এবং তার পেছনে লেগে না থাক, তাহলে সে তা তোমাকে ফেরত দেবে না। এটা এজন্য যে, তারা বলে; আমাদের উপর নিরক্ষরদের ব্যাপারে কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা নেই। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে।
Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ২৬-৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
قُلِ ٱللَّهُمَّ مَـٰلِكَ ٱلْمُلْكِ تُؤْتِى ٱلْمُلْكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلْمُلْكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُ ۖ بِيَدِكَ ٱلْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٢٦
আয়াত-২৬: বলুনঃ হে আল্লাহ! তুমিই মালিক সার্বভৌম শক্তির। তুমি যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছে তুমি সম্মানিত কর এবং যাকে ইচ্ছে অপমানিত কর। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয় তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
تُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ ٱلْحَىَّ مِنَ ٱلْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ ٱلْمَيِّتَ مِنَ ٱلْحَىِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍۢ ٢٧
আয়াত-২৭: তুমিই প্রবেশ করাও রাতকে দিনের ভেতরে এবং দিনকে রাতের ভেতরে। তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন, আবার মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। যাকে চাও তুমি অপরিমিত রিযিক দান কর।
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَـٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُوا۟ مِنْهُمْ تُقَىٰةًۭ ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ ٢٨
আয়াত-২৮: মু’মিনরা যেন কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে মুমিনদের বন্ধুত্ব ছেড়ে। যে কেউ এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তাদের তরফ থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা কর, তাহলে ব্যতিক্রম। আর আল্লাহ তার সত্তা সর্ম্পকে তোমাদের সতর্ক করেছেন। আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
قُلْ إِن تُخْفُوا۟ مَا فِى صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ ٱللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٢٩
আয়াত-২৯: বলে দিনঃ তোমাদের অন্তরে যা আছে, তোমরা যদি তা গোপন রাখ অথবা ব্যক্ত কর, আল্লাহ তা জানেন এবং যা কিছু আছে আসমানে ও যা কিছু আছে জমিনে তাও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍۢ مُّحْضَرًۭا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوٓءٍۢ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُۥٓ أَمَدًۢا بَعِيدًۭا ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَٱللَّهُ رَءُوفٌۢ بِٱلْعِبَادِ ٣٠
আয়াত-৩০: যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কৃত ভাল কাজসমূহ সামনে উপস্থিত পাবে এবং সে যে মন্দ কাজ করেছে তাও পাবে, সেদিন সে ব্যক্তি তার ও সেসব মন্দ কাজের মধ্যে দূর ব্যবধান কামনা করবে। আল্লাহ নিজের সত্তা সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করছেন। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মমতাময়।
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِى يُحْبِبْكُمُ ٱللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٣١
আয়াত-৩১: আপনি বলে দিনঃ যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٣٢
আয়াত-৩২: বলে দিনঃ তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর এবং রাসূলের। তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রেখ, আল্লাহ কাফেরদের ভালবাসেন না।
إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰٓ ءَادَمَ وَنُوحًۭا وَءَالَ إِبْرَٰهِيمَ وَءَالَ عِمْرَٰنَ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ ٣٣
আয়াত-৩৩: নিশ্চয় আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদমকে, নুহকে, ইবরাহীমের বংশধরকে এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্য।
ذُرِّيَّةًۢ بَعْضُهَا مِنۢ بَعْضٍۢ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٣٤
আয়াত-৩৪: তারা একে অন্যের সন্তান। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
إِذْ قَالَتِ ٱمْرَأَتُ عِمْرَٰنَ رَبِّ إِنِّى نَذَرْتُ لَكَ مَا فِى بَطْنِى مُحَرَّرًۭا فَتَقَبَّلْ مِنِّىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ٣٥
আয়াত-৩৫: স্মরণ কর, ইমরানের স্ত্রী যখন বলেছিলঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি মানত করলাম তোমার জন্য যা আছে আমার গর্ভে সবকিছু থেকে মুক্ত রেখে, সুতরাং আমার কাছ থেকে তা কবুল কর। তুমি তো সব শুন, সব জান।
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّى وَضَعْتُهَآ أُنثَىٰ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ ٱلذَّكَرُ كَٱلْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّى سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّىٓ أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٣٦
আয়াত-৩৬: তারপর যখন সে তাকে প্রসব করল, তখন সে বললঃ হে আমার পরওয়ারদেগার! আমি তো এক কন্যা প্রসব করেছি। আসলে সে কি প্রসব করেছে আল্লাহ তা খুব ভালই জানেন__যে ছেলে সে কামনা করেছিল, সে ছেলে এ কন্যার সমকক্ষ নয়। __আর আমি তার নাম রেখেছি মরিয়ম এবং তাকে ও তার সন্তানদের তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করছি অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে বাচার জন্য।
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍۢ وَأَنۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًۭا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا ٱلْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًۭا ۖ قَالَ يَـٰمَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَـٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ٣٧
আয়াত-৩৭: অতঃপর তার পালনকর্তা মরিয়মকে উত্তমরূপে গ্রহণ করলেন এবং উত্তমরূপে তাকে লালন-পালন করার ব্যবস্থা করলেন আর তার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তিনি যাকারিয়াকে দিলেন। যখনই যাকারিয়া মরিয়মের কক্ষে যেত তখনই তার কাছে কিছু পানাহারের বস্তু দেখতে পেত। সে জিজ্ঞেস করত: হে মরিয়ম এসব কোথা থেকে তোমার কাছে এল? সে বলত: এসব আল্লাহর কাছ থেকে আসে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন বেহিসেব রিযিক দান করেন।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥ ۖ قَالَ رَبِّ هَبْ لِى مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةًۭ طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨
আয়াত-৩৮: সেখানেই যাকারিয়া তার পালনকর্তার কাছে প্রার্থনা করে বললঃ হে আমার পরওয়ারদেগার! তুমি আমাকে তোমার কাছ থেকে পূত-পবিত্র সন্তান দান কর। তুমিই তো শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা শ্রবণকারী।
فَنَادَتْهُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌۭ يُصَلِّى فِى ٱلْمِحْرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَسَيِّدًۭا وَحَصُورًۭا وَنَبِيًّۭا مِّنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ٣٩
আয়াত-৩৯: তারপর যখন সে মেহরাবে দাড়িয়ে নামায পড়ছিল, তখন ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল: আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহ̖ইয়ার; সে হবে আল্লাহর বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা, জিতেন্দ্রিয় এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী।
قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى غُلَـٰمٌۭ وَقَدْ بَلَغَنِىَ ٱلْكِبَرُ وَٱمْرَأَتِى عَاقِرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكَ ٱللَّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ ٤٠
আয়াত-৪০: যাকারিয়া বলল: হে আমার পরওয়ারদেগার কেমন করে আমার পুত্র হবে? আমার তো বাৰ্ধক্য এসে গেছে এবং আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা। আল্লাহ বললেন; এ অবস্থাতেই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা করে দেন।
قَالَ رَبِّ ٱجْعَل لِّىٓ ءَايَةًۭ ۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَـٰثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمْزًۭا ۗ وَٱذْكُر رَّبَّكَ كَثِيرًۭا وَسَبِّحْ بِٱلْعَشِىِّ وَٱلْإِبْكَـٰرِ ٤١
আয়াত-৪১: সে বললঃ হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার জন্য কিছু লক্ষণ দাও। আল্লাহ বললেন: তোমার লক্ষণ এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত লোকের সাথে কথা বলতে পারবে না, তবে ইশারা-ইংগিতে পারবে। আর তোমার পালনকর্তাকে বেশি করে স্মরণ করবে এবং সন্ধ্যায় ও সকালে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।
وَإِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ يَـٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰكِ وَطَهَّرَكِ وَٱصْطَفَىٰكِ عَلَىٰ نِسَآءِ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٤٢
আয়াত-৪২: আর স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মরিয়ম আল্লাহ তোমাকে বেছে নিয়েছেন, পবিত্র করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বনারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন।
يَـٰمَرْيَمُ ٱقْنُتِى لِرَبِّكِ وَٱسْجُدِى وَٱرْكَعِى مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣
আয়াত-৪৩: হে মরিয়ম! তুমি আনুগত্য কর তোমার পালনকর্তার এবং সিজদা কর আর রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ কর।
ذَٰلِكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۚ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَـٰمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ ٤٤
আয়াত-৪৪: এসব হলো গায়েবী সংবাদ যা আমি আপনাকে ঐশী বাণী দিয়ে জানাই। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না যখন তারা নিজ নিজ কলম নিক্ষেপ করছিল এ উদ্দেশ্যে যে, তাদের মধ্য থেকে মরিয়মের অভিভাবক কে হবে তা নির্ধারণ করতে। তারা যখন নিজেরা বাদানুবাদ করছিল তখনও আপনি তাদের কাছে ছিলেন না।
إِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ يَـٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍۢ مِّنْهُ ٱسْمُهُ ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ وَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ ٤٥
আয়াত-৪৫: স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মরিয়ম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কলেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, তার নাম মসীহ ঈসা ইবন মরিয়ম, সে সম্মানিত দুনিয়া ও আখেরাতে এবং সে আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্যতম।
وَيُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِى ٱلْمَهْدِ وَكَهْلًۭا وَمِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ٤٦
আয়াত-৪৬: সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় থাকা অবস্থায় এবং প্রাপ্তবয়সেও এবং সে হবে নেককারদের অন্যতম।
قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى وَلَدٌۭ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٧
আয়াত-৪৭: মরিয়ম বললঃ হে আমাদের পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে, অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেনঃ এভাবেই হবে। আল্লাহ সৃষ্টি করেন যা ইচ্ছে করেন। যখন তিনি কোন কাজ করতে মনস্থ করেন তখন তাকে শুধু বলেন “হও”, অমনি তা হয়ে যায়।
وَيُعَلِّمُهُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ ٤٨
আয়াত-৪৮: আর তিনি সে সন্তানকে শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হেকমত, তাওরাত ও ইন্জীল।
وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ٤٩
আয়াত-৪৯: এবং তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য রাসূল হিসেবে মনোনীত করবেন। সে বলবেঃ আমি তো তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে নিদর্শন নিয়ে। তা এই যে, তোমাদের জন্য আমি কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির ন্যায় আকার গঠন করব, তারপর তাতে ফুৎকার দেব, ফলে তা আল্লাহর হুকুমে উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হবে। আর আমি আরোগ্য করব জন্মান্ধকে ও শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে এবং জীবিত করব মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদের বলে দেব যা তোমরা খাও এবং যা তোমরা তোমাদের ঘরে মওজুদ কর। নিশ্চয় এতে রয়েছে যথেষ্ট প্রমাণ তোমাদের জন্য যদি তোমরা মুমিন হও!
وَمُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ ٱلَّذِى حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ وَجِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ٥٠
আয়াত-৫০: আর আমি এসেছি আমার সামনে তাওরাতে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে এবং তোমাদের জন্য কতিপয় বস্তু হালাল করার জন্য যা তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছিল। আর আমি তোমাদের কাছে এসেছি নিদর্শন নিয়ে তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে। সুতরাং তোমরা ভয় কর আল্লাহকে এবং অনুসরণ কর আমাকে।