Surah Al-Maidah / সূরা মায়িদাহ
(আয়াত: ৫১-১০০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-৫১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয় আল্লাহ̖ সৎপথে পরিচালিত করেন না সীমালংঘনকারী লোকদের।
আয়াত–৫২ঃ আর আপনি তাদের দেখবেন যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে যে, তারা দৌড়ে গিয়ে ওদেরই মধ্যে প্রবেশ করে এই বলে যে, আমরা আশংকা করছি পাছে আমাদের উপর না কোন বিপদ আপতিত হয়। অচিরেই আল্লাহ̖ বিজয় দেবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে। এমন কিছু দেবেন ফলে তারা যা অন্তরে গোপন রেখেছিল সেজন্য অনুতপ্ত হবে।
আয়াত-৫৩ঃ আর যারা ঈমান এনেছে তারা বলবেঃ এরাই কি সেসব লোক যারা আল্লাহ̖র নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, “তারা তো তোমাদেরই সাথে আছে?” তাদের কৃতকর্মসমূহ নিস্ফল হয়েছে। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আয়াত-৫৪ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে অচিরেই আল্লাহ̖ এমন এক কওম নিয়ে আসবেন যাদের তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে; তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল হবে আর কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহ̖র পথে জেহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটা আল্লাহ̖র অনুগ্রহ, যাকে তিনি ইচ্ছে করেন তা দান করেন। আল্লাহ̖ প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।
আয়াত-৫৫ঃ তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ̖, তার রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, এ অবস্থায় যে, তারা বিনত বিনম্র।
আয়াত-৫৬ঃ আর যারা আল্লাহ̖, তার রাসূল এবং মুমিনদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই আল্লাহ̖র দল, তারাই বিজয়ী হবে।
আয়াত-৫৭ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না আহলে কিতাবের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও খেলার বস্তু মনে করে তাদের এবং অন্যান্য কাফেরদের। তোমরা আল্লাহ̖কে ভয় কর যদি মু’মিন হও।
আয়াত–৫৮ঃ আর যখন তোমরা নামাযের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে হাসি-তামাশা ও খেলা বলে মনে করে। কারণ তারা এমন লোক যাদের বোধশক্তি নেই।
আয়াত-৫৯ঃ বলুন – হে আহলে কিতাব! তোমরা কি শুধু এ কারণেই আমাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ̖র প্রতি, আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার উপর এবং পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তার উপরও? তোমাদের অধিকাংশই ফাসেক।
আয়াত-৬০ঃ আপনি বলুন: আমি কি তোমাদের বলে দেব, এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণাম কার রয়েছে, আল্লাহ̖র কাছে? যাকে আল্লাহ̖ লা’নত করেছেন, যার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে তিনি বানর ও কতককে শূকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা তাগূতের উপাসনা করে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্ট এবং সঠিক পথ থেকেও বহু দূরে বিচ্যুত।
আয়াত-৬১ঃ আর তারা যখন তোমাদের কাছে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, অথচ তারা এসেছিল কুফর নিয়ে এবং তারা বেরিয়েও গেছে তা নিয়েই। তারা যা গোপন করে, আল্লাহ̖ তা খুব ভাল জানেন।
আয়াত-৬২ঃ আর আপনি তাদের অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালংঘনে এবং হারাম ভক্ষণে অতি তৎপর। কতই না নিকৃষ্ট তারা যা করছে!
আয়াত-৬৩ঃ কেন তাদের নিষেধ করছে না রাববানী ও পণ্ডিতরা পাপ কথা উচ্চারণ করতে ও হারাম ভক্ষণ করতে? অবশ্যই তারা গর্হিত কাজ করছে।
আয়াত-৬৪ঃ আর ইহুদীরা বলে, ‘আল্লাহ̖র হাত বন্ধ হয়ে গেছে’। তাদেরই হাত বন্ধ হয়েছে। তারা যা বলে সে কথার জন্য তাদের উপর অভিসম্পাত। বরং আল্লাহ̖র উভয় তরফ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা তাদের মধ্যের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফর বৃদ্ধি করবেই। আমি তাদের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত সত্রুতা ও হিংসা সঞ্চারিত করে দিয়েছি। যখনই ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ̖ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।
আয়াত-৬৫ঃ আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন তাদের দাখিল করতাম।
আয়াত-৬৬ঃ আর তারা যদি পুরোপুরি পালন করত তাওরাত, ইন̖জিল ও তাদের রবের তরফ থেকে তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা, তাহলে তারা তাদের উপর থেকে এবং তাদের পায়ের নিচ থেকে আহার্য লাভ করত। তাদের মধ্যের একদল সরল পথের পথিক, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নিকৃষ্ট কাজ করে যাচ্ছে।
আয়াত-৬৭ঃ হে রাসূল! আপনি পৌছে দিন যা আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে নাযিল করা হয়েছে তা, আর যদি তা না করেন তবে তো তার পয়গাম পৌছালেন না। আল্লাহ̖ আপনাকে মানুষের থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ̖ কাফের কওমকে হেদায়েত দান করেন না।
আয়াত-৬৮ঃ আপনি বলে দিনঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা কোন কিছুর উপরই প্রতিষ্ঠিত নও, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরোপুরি পালন করবে তাওরাত, ইন̖জিল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের তরফ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা। আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবেই। সুতরাং আপনি এ কাফের কওমের জন্য দুঃখ করবেন না।
আয়াত-৬৯ঃ নিশ্চয় যারা মু’মিন, যারা ইহুদী, সাবেয়ী বা নাসারা, তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ̖র প্রতি, আখেরাতের প্রতি এবং নেক কাজ করেছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃক্ষিতও হবে না।
আয়াত–৭০ঃ আমি তো অঙ্গীকার নিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এবং তাদের কাছে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। যখনই তাদের কাছে কোন রাসূল এমন কিছু নিয়ে আসত যা তাদের মনঃপূত নয় তখনই তারা কতককে মিথ্যাবাদী বলত এবং কতককে হত্যা করত।
আয়াত-৭১ঃ আর তারা ধারণা করেছিল যে, তাদের কোন অনিষ্ট হবে না। ফলে তারা আরও অন্ধ ও বধির হয়ে গেল। তারপর আল্লাহ̖ তাদের তওবা কবুল করলেন। এরপরও তাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হয়ে রইল। তারা যা করে আল্লাহ̖ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-৭২ঃ নিঃসন্দেহে তারা কাফের যারা বলে, মসীহ ইবন মরিয়মই আল্লাহ̖, অথচ মসীহ বলেছিলঃ হে বনী ইসরাঈল! তোমরা ইবাদত কর আল্লাহ̖র যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। নিশ্চয় যে কেউ আল্লাহ̖র শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ̖ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার আবাসস্থল হয় দোযখ। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
আয়াত-৭৩ঃ অবশ্যই তারা কাফের, যারা বলেঃ “আল্লাহ̖ তো তিনের মধ্যে একজন ” অথচ এক ইলাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ̖ নেই। আর যদি তারা নিবৃত্ত না হয় যা তারা বলে তা থেকে, তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফর করেছে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আপতিত হবেই।
আয়াত-৭৪ঃ তবে কি তারা আল্লাহ̖র কাছে তওবা করবে না এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ̖ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত–৭৫ঃ মসীহ ইবন মরিয়াম একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়। তার পূর্বে অনেক রাসূল গত হয়েছে এবং তার মা একজন সত্যনিষ্ঠ মহিলা ছিল। তারা উভয়ে খাদ্য ভক্ষণ করত। দেখ, তাদের জন্য কিরূপ যুক্তি-প্রমাণ বিশদভাবে বর্ণনা করি, আরও দেখ তারা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে।
আয়াত-৭৬ঃ বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহ̖ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত কর যার কোন ক্ষমতা নেই তোমাদের অপকার বা উপকার করার? আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন।
আয়াত–৭৭ঃ বলুনঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা নিজেদের দ্বীন সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি কর না। আর যে সম্প্রদায় পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর না।
আয়াত-৭৮ঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, দাউদ ও ঈসা ইবন মারইয়ামের মুখে তাদের লা’নত করা হয়েছিল। এটা এ কারণে যে, তারা নাফরমানি করেছিল এবং সীমালংঘনও করত।
আয়াত-৭৯ঃ তারা যেসব অন্যায় কাজ করত তা থেকে পরম্পরকে তারা বারণ করত না। কতই না নিকৃষ্ট ছিল তা যা তারা করত।
আয়াত-৮০ঃ আপনি তাদের অনেককে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখতে পাবেন। সে কাজ খুবই মন্দ যা তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য করেছে, যে কারণে আল্লাহ̖ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তারা চিরকাল আযাবের মধ্যে থাকবে।
আয়াত-৮১ঃ যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহ̖র প্রতি এবং নবীর প্রতি আর তার প্রতি যা নাযিল করা রয়েছে তাতে, তাহলে তারা কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসেক।
আয়াত-৮২ঃ আপনি সকল মানুষের মধ্যে মু’মিনদের প্রতি অধিক সত্রুতা পোষণকারী পাবেন ইহুদী ও মুশরিকদের আর মানুষের মধ্যে মু’মিনদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী আপনি তাদের পাবেন যারা বলে? “আমরা তো নাসারা”। কারণ তাদের মধ্যে আছে অনেক আলেম ও সংসার-বিরাগী দরবেশ। আর তারা অহংকারও করে না।
আয়াত-৮৩ঃ আর তারা যখন শোনে রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রুবিগলিত দেখতে পাবেন, কারণ তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলেঃ হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদের সত্যকে স্বীকারকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।
আয়াত-৮৪ঃ আর আমাদের কি ওজর থাকতে পারে যে, আমরা ঈমান আনব না আল্লাহ̖র প্রতি এবং সে সত্যের প্রতি যা আমাদের কাছে এসেছে, অথচ আমরা আশা করি যে, আমাদের রব নেককার লোকদের সাথে আমাদের শামিল করবেন?
আয়াত-৮৫ঃ ফলে তাদের এ উক্তির জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার দেবেন জান্নাত যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটাই নেককারদের প্রতিদান।
আয়াত-৮৬ঃ আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখবাসী।
আয়াত-৮৭ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা হারাম কর না সেসব উৎকৃষ্ট বস্তু যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করেছেন এবং সীমালংঘন কর না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালবাসেন না।
আয়াত-৮৮ঃ আর আল্লাহ তোমাদের যেসব বস্তু দিয়েছেন তার মধ্যে যা হালাল ও উৎকৃষ্ট তা খাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা ঈমান রাখ।
আয়াত-৮৯ঃ আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য, কিন্তু তিনি তোমাদের পাকড়াও করবেন সেসব শপথের জন্য যা তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে করা আর এর কাফফারা হল দশজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা, মধ্যম ধরনের খাদ্য যা তোমরা সাধারণত তোমাদের পরিবারের লোকদের খেতে দাও; অথবা তাদের পরিধেয় বস্ত্র প্রদান করা; অথবা একজন ক্রীতদাস/দাসী মুক্ত করা; কিন্তু যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না তার জন্য তিন দিন রোজা রাখা। এ হল তোমাদের শপথের কাফফারা, যখন তোমরা শপথ করবে। তোমরা তোমাদের শপথসমূহ রক্ষা কর। এভাবে আল্লাহ̖ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।
আয়াত-৯০ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ণায়ক শর-এসব নোংরা-অপবিত্র, শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এসব থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
আয়াত-৯১ঃ শয়তান তো চায় তোমাদের মধ্যে সত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে এবং আল্লাহ̖র স্মরণ ও নামায থেকেও সে তোমাদের বিরত রাখতে চায়। তবে কি তোমরা এখনও নিবৃত্ত হবে না?
আয়াত-৯২ঃ তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ̖র ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং সতর্ক হও; কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রেখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্ট প্রচার করা।
আয়াত-৯৩ঃ যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের কোন গুনাহ নেই পূর্বে তারা যা খেয়েছে সেজন্য, যখন তারা সাবধান হয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে। তারপর সাবধান হয় ও ঈমানে দৃঢ় থাকে। তারপর সাবধান হয় ও নেক কাজ করে। আর আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন।
আয়াত-৯৪ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! অবশ্যই আল্লাহ̖ তোমাদের পরীক্ষা করবেন এমন কিছু শিকারের মাধ্যমে যা তোমাদের হাত ও বর্শা সহজেই শিকার করতে পারে, যাতে আল্লাহ̖ বুঝতে পারেন কে তাকে না দেখেও ভয় করে। অতএব যে কেউ এরপরও সীমালংঘন করবে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-৯৫ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ইহরামে থাকা অবস্থায় শিকারকে হত্যা কর না। তোমাদের মধ্যে কেউ ইচ্ছে করে শিকার হত্যা করলে তার উপর বিনিময় বর্তাবে, যা সমান হবে হত্যাকৃত জন্তুর, তোমাদের মধ্যের দু’জন ন্যায়বান লোক এর ফয়সালা করবে; সে জন্তুটি হাদিয়া হিসেবে কা’বায় পৌছাতে হবে। অথবা তার উপর কাফফারা বর্তাবে-কয়েকজন মিসকীনকে খাওয়ানো; অথবা তার সমপরিমাণ রোজা রাখবে যেন সে আস্বাদন করে তার কৃতকর্মের প্রতিফল। যা গত হয়েছে আল্লাহ̖ তা মাফ করেছেন। তবে কেউ তা পুনরায় করলে আল্লাহ̖ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহ̖ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম।
আয়াত-৯৬ঃ তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ধরা এবং তা খাওয়া, তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য। আর তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে স্থলের শিকার ধরা, যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকবে। ভয় কর আল্লাহ̖কে যার কাছে তোমাদের একত্র করা হবে।
আয়াত-৯৭ঃ আল্লাহ̖ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন মহাসম্মানিত ঘর কাবাকে, সম্মানিত মাসকে, কোরবানীর জন্য কা’বায় প্রেরিত পশুকে এবং গলায় মালা পরিহিত পশুকে। এর কারণ এই যে, তোমরা যেন জানতে পার যে, অবশ্যই আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে, আর আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
আয়াত–৯৮ঃ তোমরা জেনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা এবং অবশ্যই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৯৯ঃ রাসূলের দায়িত্ব তো শুধু প্রচার করা। আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর।
আয়াত-১০০ঃ বলে দিনঃ সমান নয় অপবিত্র ও পবিত্র, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং ভয় কর আল্লাহ̖কে, হে জ্ঞানবানরা! যেন তোমরা সফলকাম হও।
Surah Al-Maidah / সূরা মায়িদাহ
(আয়াত: ১-৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু, সেগুলো ছাড়া যা তোমাদের কাছে বর্ণিত হচ্ছে, তবে ইহ̖রাম অবস্থায় শিকার করাকে হালাল মনে করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।
আয়াত-২ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা হালাল মনে কর না আল্লাহ̖র নিদর্শনসমূহকে, আর না পবিত্র মাসসমূহকে, আর না কোরবানীর জন্য হরমে প্রেরিত পশুকে, আর না সেসব পশু যার গলায় চিহ্ন পরান হয়েছে, আর না ঐ সব লোককে যারা বায়তুল হারামের দিকে যাচ্ছে স্বীয় রবের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় তোমরা যখন ইহ̖রাম মুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার। মসজিদে হারামে তোমাদের প্রবেশে বাধা দেয়ার দরুন কোন কওমের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের কখনও সীমা লংঘনে প্ররোচিত না করে তোমরা একে অন্যকে নেক কাজে এবং তাকওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে, কিন্তু পাপ কাজে ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য করবে না। আল্লাহ̖̖কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ শাস্তিদানে কঠোর।
আয়াত-৩ঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ̖ ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা পশু, শ্বাসরোধে মৃত পশু, আঘাতে মৃত পশু, উচ্চস্থান থেকে পতনের কারণে মৃত পশু, শিং-এর আঘাতে মৃত পশু, হিংস্ৰ জানোয়ারে ভক্ষণ করা পশু, তবে যা তোমরা জবাই করতে পেরেছ, তাছাড়া যা মূর্তিপূজার বেদীতে বলি দেয়া হয় এবং যা লটারীর তীর দিয়ে ভাগ করা হয়। এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তাদের ভয় কর না, বরং আমাকেই ভয় কর। আজ পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়ে কিন্তু কোন পাপের প্রতি আকৃষ্ট না হয়, তবে আল্লাহ̖ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৪ঃ লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কি কি জিনিস তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুনঃ তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে পবিত্র জিনিসসমূহ এবং যেসব শিকারী পশু-পক্ষীকে তোমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছ শিকারের জন্য, যেভাবে আল্লাহ̖ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, এমন শিকার জন্তু যে শিকারকে তোমাদের জন্য ধরে আনে তা খাবে এবং তার উপর আল্লাহ̖র নাম নেবে, আর আল্লাহ̖কে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ̖ সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।
আয়াত-৫ঃ আজ তোমাদের জন্য হালাল করা হল পবিত্র বস্তুসমূহ। আহলে কিতাবের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্য হালাল সতী-সাধী মু’মিন নারী এবং আহলে কিতাবের সতী-সাধ্বী নারী, যখন তোমরা তাদের মহর প্রদান কর স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার কিংবা উপপত্নীরূপে গ্রহণের জন্য নয়। যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে ঈমান তার কর্মফল অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আয়াত-৬ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন নামাযের জন্য দাড়াতে চাও। মুখমণ্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত আর মসেহ করে নেবে নিজেদের মস্তক এবং ধৌত করে নেবে নিজেদের পা পর্যন্ত। কিন্তু যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে উত্তমরূপে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্ৰস্ৰাব-পায়খান সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে-ঐ মাটি দিয়ে নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত মসেহ করে নেবে। আল্লাহ̖ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পাক-পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আয়াত-৭ঃ তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা এবং তার সে অঙ্গীকারের কথা যা তিনি তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। যখন তোমরা বলেছিলে, আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। তোমরা আল্লাহ̖কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে পুরোপুরি খবর রাখেন।
আয়াত-৮ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা অবিচল থাকবে আল্লাহ̖র উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে; এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের কখনও প্ররোচিত না করে ন্যায়বিচার বর্জন করতে। ন্যায়বিচার করবে। ন্যায়বিচার করাই তাকওয়ার নিকটতর। আল্লাহ̖কে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ̖ খুব খবর রাখেন সে বিষয়ে যা তোমরা কর।
আায়াত-৯ঃ আল্লাহ̖ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এরূপ লোকদের যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে যে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
আয়াত-১০ঃ আর যারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা মনে করে, তারা দোযখের অধিবাসী।
আয়াত-১১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা, যখন এক সম্প্রদায় সংকল্প করেছিল তোমাদের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতে, তখন তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে প্রতিহত করে দিয়েছিলেন। তোমরা ভয় কর আল্লাহ̖কে। আর আল্লাহ̖রই উপর যেন মুমিনরা ভরসা করে।
আত্মাত-১২ঃ আল্লাহ̖ বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বারজন নেতা নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ̖ বলেছিলেনঃ অবশ্যই আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহ̖কে “করজে হাসানা” দাও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের পাপ মোচন করব এবং অবশ্যই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ। এরপরও তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ কুফরী করবে, সে নিশ্চয়ই সরল পথ হারাবে।
আয়াত-১৩ঃ অতএব তাদের এ অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদের লা’নত করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। তারা আল্লাহ̖র কালামকে যথাস্থান থেকে বিকৃত করে দেয় এবং ভুলে গেছে তার এক অংশ যার উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল। তুমি তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সবাইকে দেখতে পাবে কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতা করতে। সুতরাং তাদের ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ নেককারদের ভালবাসেন।
আয়াত-১৪ঃ যারা বলেঃ “আমরা নাসারা”, আমি তাদেরও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, কিন্তু তারাও যে উপদেশ লাভ করেছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছিল। সুতরাং আমি কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী পারস্পরিক সত্রুতা ও বিদ্বেষ তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছি। আর অচিরেই আল্লাহ̖ তাদের জানিয়ে দেবেন যা তারা করত।
আয়াত-১৫ঃ হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছেন, তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করেন কিতাবের এমন অনেক কিছু যা তোমরা গোপন করতে এবং অনেক বিষয় উপেক্ষা করেন। তোমাদের কাছে এসেছে আল্লাহ̖র তরফ থেকে এক জ্যোতি ও একটি সমুজ্জ্বল কিতাব।
আয়াত-১৬ঃ যারা আল্লাহ̖র সন্তুষ্টি কামনা করে, এ কিতাব দিয়ে তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদের তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে স্বীয় অনুমতিক্রমে, আর তাদের তিনি পরিচালিত করেন সরল-সঠিক পথে।
আয়াত-১৭ঃ নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে: “মসীহ ইবন মারইয়ামই হল আল্লাহ̖̖।” আপনি বলুনঃ আল্লাহ̖̖ যদি ইচ্ছে করেন মসীহ ইবন মরিয়াম, তার মা এবং দুনিয়ার সবাইকে ধ্বংস করে দিতেন, তবে তাকে বাধা দেবার বিন্দুমাত্র শক্তি কার আছে? আসমান ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহ̖̖র তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৮ঃ ইহুদী ও খৃষ্ট্রানরা বলেঃ আল্লাহ̖̖র পূত্র ও তার প্রিয়জন।” আপনি বলুন; তবে তিনি কেন তোমাদের শাস্তি দেন তোমাদের পাপের জন্য? বরং তোমরাও তাদেরই মত মানুষ যাদের আল্লাহ̖ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ক্ষমা করেন যাকে ইচ্ছে করেন এবং শাস্তি দেন যাকে ইচ্ছে করেন। আসমান ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহ̖র, আর তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আয়াত-১৯ঃ হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে এসেছেন আমার রাসূল, যিনি রাসূল আগমনের বিরতির পর তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন যাতে তোমরা বলতে না পার যে, “আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি “এখন তো তোমাদের কাছে এসে গেছেন একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-২০ঃ স্মরণ কর, মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ হে আমার কওম! তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে অনেক নবী সৃষ্টি করেছিলেন এবং তোমাদের করেছিলেন রাজ্যাধিপতি, আর তোমাদের দিয়েছিলেন এমন জিনিস যা বিশ্বজগতে অন্য কাউকে দেননি।
আয়াত-২১ঃ হে আমার কওম! তোমরা প্রবেশ কর পবিত্র ভূমিতে যা আল্লাহ̖ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছনে ফিরে যেও না, গেলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
আয়াত-২২ঃ তারা বললঃ হে মূসা সেখানে রয়েছে এক দুর্দান্ত জাতি। আমরা কখনও সেখানে প্রবেশ করব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যদি তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে অবশ্যই আমরা প্রবেশ করব।
আয়াত-২৩ঃ যারা ভয় করত, তাদের মধ্য থেকে দু’ ব্যক্তি, যাদের প্রতি আল্লাহ̖ অনুগ্রহ করেছিলেন, বললঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ করে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। আর যখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে তখনই তোমরা জয়ী হবে। আর আল্লাহ̖রই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।
আয়াত-২৪ঃ তারা বললঃ হে মূসা! আমরা কখনও সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব আপনি ও আপনার রব যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা তো এখানেই বসলাম।
আয়াত-২৫ঃ মূসা বললেনঃ হে আমার রব! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারো উপর আমার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও এ ফাসেক কওমের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দাও।
আয়াত-২৬ঃ আল্লাহ̖ বললেনঃ তাদের জন্য এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত হারাম করা হল, তারা উদভ্রান্তের মত পৃথিবীতে ঘুরে ফিরবে। অতএব ফাসেক কওমের জন্য তুমি দুঃখ কর না।
আয়াত-২৭ঃ তুমি তাদের যথাযথভাবে শুনাও আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত। যখন তারা কোরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কোরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কবুল করা হয়নি। সে বললঃ “অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।” অপরজন বললঃ “আল্লাহ̖ কেবলমাত্র মোত্তাকীদের কোরবানী কবুল করেন।”
আয়াত-২৮ঃ যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে তোমার হাত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে আমার হাত প্রসারিত করব না। কেননা আমি তো ভয় করি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে”
আয়াত-২৯ঃ “আমি চাই, তুমি বহন কর আমার ও তোমার পাপের বোঝা, তারপর তুমি দোযখবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এটাই হল জালিমদের প্রতিফল।”
আয়াত-৩০ঃ তারপর তার প্রবৃত্তি তাকে ভ্রাতৃ-হত্যায় প্ররোচিত করল এবং সে তাকে হত্যা করল, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।
আয়াত-৩১ঃ তারপর আল্লাহ̖̖ একটি কাক পাঠালেন, সে মাটি খনন করতে লাগল, তাকে দেখাবার জন্য যে, কিভাবে সে তার ভাইয়ের শবদেহ গোপন করবে। সে বলল: আফসোস! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না যে, আমার ভাইয়ের শবদেহ গোপন করতে পারি? তারপর সে অনুতপ্ত হল!
আয়াত-৩২ঃ এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি এ বিধান দিয়েছি যে, কেউ কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়া হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল। তাদের কাছে তো এসেছিল আমার অনেক রাসূল স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। কিন্তু এরপরও তাদের অনেকেই দুনিয়ায় সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল।
আয়াত-৩৩ঃ যারা আল্লাহ̖ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হল-তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ান হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে। এ হল তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
আয়াত-৩৪ঃ তবে যারা তোমাদের গ্রেফতার করে নেয়ার পূর্বে তওবা করল, (তাদের সম্বন্ধে) জেনে রেখ যে, অবশ্যই আল্লাহ̖ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৩৫ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ̖কে ভয় কর, তার নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর এবং তার পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
আয়াত-৩৬ঃ যারা কুফরী করেছে, যদি তাদের কাছে দুনিয়ার সমুদয় সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে আর এগুলোর বিনিময়ে কেয়ামতের দিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-৩৭ঃ তারা চাইবে বের হয়ে আসতে দোযখ থেকে কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।
আয়াত-৩৮ঃ যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে, এ হল আল্লাহ̖র পক্ষ থেকে দণ্ড। আল্লাহ̖ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-৩৯ঃ তারপর যে তওবা করে নিজের এ জুলুম করার পর এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ̖̖ তার তওবা কবুল করেন। আল্লাহ̖ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৪০ঃ তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহ̖রই, তিনি শাস্তি দেন যাকে ইচ্ছে করেন এবং ক্ষমা করেন যাকে ইচ্ছে করেন। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-৪১ঃ হে রাসূল! আপনাকে যেন দুঃখ না দেয় তারা যারা দ্রুত কুফরীর দিকে ধাবিত হয়, তাদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের মুখে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি,” অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি এবং ইহুদীদের মধ্যে যারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত, যারা আপনার কথা কান পেতে শুনে এমন এক কওমের জন্য যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা আল্লাহ̖র কালামকে বিকৃত করে তা যথাস্থানে সুবিন্যস্ত থাকার পরেও তারা বলে, যদি তোমাদের এরূপ বিধান দেয়া হয় তবে তা গ্রহণ করবে কিন্তু যদি তা না পাও তবে তা বর্জন করবে। যাকে আল্লাহ̖ ফেতনায় ফেলতে চান তার জন্য আপনি আল্লাহ̖র কাছে কিছুই করতে পারবেন না। এরাই এমন লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ̖ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে তাদের জন্য মহাশাস্তি।
আয়াত-৪২ঃ তারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত, হারাম খেতে অত্যন্ত আসক্ত। সুতরাং তারা যদি আপনার কাছে আসে তবে তাদের মধ্যে বিচার নিম্পত্তি করে দিন অথবা তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। আর যদি আপনি তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকেন তবে তারা আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার ফয়সালাই করেন তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ̖ ভালবাসেন ন্যায়বিচারকারীদের।
অনায়াত-৪৩ঃ তারা কিরূপে আপনার উপর বিচারভার ন্যস্ত করবে অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত? যে তাওরাতে আছে আল্লাহ̖র আদেশ। তারপরও তারা পেছনে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনও মমিন নয়।
আয়াত-৪৪ঃ আমি তো নাযিল করেছিলাম তাওরাত যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। এ তাওরাতের মাধ্যমে ইহুদীদের ফয়সালা দিত আল্লাহ̖র অনুগত নবী, দরবেশ ও আর তারা ছিল তার সাক্ষী। অতএব তোমরা মানুষকে ভয় কর না, বরং আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি কর না। যারা আল্লাহ̖̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দেয় না তারাই কাফের।
আয়াত-৪৫ঃ আমি তাদের জন্য তাতে ফরয করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাতের বদলে দাত এবং অনুরূপভাবে জখমের বদলে জখম। তবে কেউ তা মাফ করে দিলে তা তার জন্য গুনাহের কাফফারা হবে। আর যারা আল্লাহ̖̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দেয় না তারাই জালিম।
আয়াত-৪৬ঃ আর আমি তাদের পেছনে প্রেরণ করেছিলাম ঈসা ইবন মরিয়মকে, তিনি ছিলেন পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারী। আমি তাকে দিয়েছিলাম ইনজিল৷ তাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। তা ছিল পূর্ববতী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী, হেদায়াত ও উপদেশ মোত্তাকীদের জন্য।
আয়াত-৪৭ঃ আর ইন্জিলের অনুসারীরা যেন বিধান দেয় তাতে আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিধান দেয় না তারা তো ফাসেক।
আয়াত-৪৮ঃ আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি সত্যসহ এ কিতাব যা সত্যয়নকারী পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের এবং সংরক্ষণকারী তাতে যা আছে তার। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছি নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা। আর যদি আল্লাহ̖ চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহ̖র দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয় যাতে তোমরা মতভেদ করতে।
আয়াত-৪৯ঃ আর আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না, আর তাদের সম্বন্ধে সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে বিচ্যুত না করতে পারে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার কোন কিছু থেকে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ̖ চান তাদের কোন কোন পাপের জন্য তাদের শাস্তি প্রদান করতে। আর মানুষের মধ্যে তো অনেকেই নাফরমান।
আয়াত-৫০ঃ তবে কি তারা জাহেলী আমলের বিধান কামনা করে? কে উত্তম আল্লাহ̖র চাইতে বিধান প্রদানে দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য?