Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ১০১-১২৫)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
وَإِذْ قَالَ إِبْرَٰهِـۧمُ رَبِّ ٱجْعَلْ هَـٰذَا بَلَدًا ءَامِنًۭا وَٱرْزُقْ أَهْلَهُۥ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ مَنْ ءَامَنَ مِنْهُم بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُۥ قَلِيلًۭا ثُمَّ أَضْطَرُّهُۥٓ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلنَّارِ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ ١٢٦
আয়াত-১২৬: ম্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিল: হে আমার পালনকর্তা! এ জায়গাকে তুমি নিরাপদ শহর কর এবং এর বাসিন্দাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে ফলমূল দিয়ে তাদের জীবিকা দান কর। তিনি বললেনঃ যে কেউ কুফর করে তাকেও কিছুকালের জন্য জীবন উপভোগ করতে দেব। অবশেষে তাবে দোযখের শাস্তি ভোগ করতে ঠেলে দেব। তা কতইনা নিকৃষ্ট পরিনাম!
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَٰهِـۧمُ ٱلْقَوَاعِدَ مِنَ ٱلْبَيْتِ وَإِسْمَـٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ١٢٧
আয়াত-১২৭: স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবা ঘরের ভিত নির্মাণ করছিল তখন তারা দোয়া করেছিল: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এ প্রয়াস কবুল কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةًۭ مُّسْلِمَةًۭ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٢٨
আয়াত-১২৮: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উভয়কে বানাও তোমার প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী এবং আমাদের বংশধর থেকেও তোমার প্রতি আত্মসমর্পণকারী এক উম্মত বানাও। এবং দেখিয়ে দাও আমাদের হজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। নিশ্চয়ই তুমি পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
رَبَّنَا وَٱبْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًۭا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ١٢٩
আয়াত-১২৯: হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ কর, যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের কাছে আবৃত্তি করবে, তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَٰهِـۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُۥ ۚ وَلَقَدِ ٱصْطَفَيْنَـٰهُ فِى ٱلدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُۥ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ١٣٠
আয়াত-১৩০: ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ থেকে কে বিমুখ হবে সে ছাড়া যে নিজেকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছে? আমি তো তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং আখেরাতেও সে সৎকম˝পরায়নদের অর্ন্তভুক্ত।
إِذْ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسْلِمْ ۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ١٣١
আয়াত-১৩১: যখন তার পালনকর্তা তাকে বললেনঃ আত্মসমর্পণ কর, তখন সে বলল : আমি আত্মসমর্পণ করলাম বিশ্বপালকের কাছে।
وَوَصَّىٰ بِهَآ إِبْرَٰهِـۧمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَـٰبَنِىَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ١٣٢
আয়াত-১৩২: আর এরই অসিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও: হে পুত্ৰগণ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ কর না।
أَمْ كُنتُمْ شُهَدَآءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ ٱلْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنۢ بَعْدِى قَالُوا۟ نَعْبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ ءَابَآئِكَ إِبْرَٰهِـۧمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ إِلَـٰهًۭا وَٰحِدًۭا وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ ١٣٣
আয়াত-১৩৩: যখন ইয়াকুবের মৃত্যু উপস্থিত হল, তোমরা কি তখন সেখানে ছিলে? সে যখন পুত্রদের জিজ্ঞেস করলঃ আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? তখন তারা বললঃ আমরা ইবাদত করব আপনার ইলাহ-এর এবং আপনার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহ-এর ইবাদত করব। তিনি তো একমাত্র ইলাহ। আমরা সবাই তার কাছে আত্মসমৰ্পণকারী।
تِلْكَ أُمَّةٌۭ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْـَٔلُونَ عَمَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٣٤
আয়াত-১৩৪: তারা ছিল এক উন্মত যারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তা তাদের, আর তোমরা যা কর তা তোমাদের। তারা যা করত সে ব্যাপারে তোমাদের কোন প্রশ্ন করা হবে না।
وَقَالُوا۟ كُونُوا۟ هُودًا أَوْ نَصَـٰرَىٰ تَهْتَدُوا۟ ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَٰهِـۧمَ حَنِيفًۭا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ١٣٥
আয়াত-১৩৫: তারা বলে: তোমরা ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান হয়ে যাও, সঠিক পথ পাবে। আপনি বলুনঃ বরং আমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করব। আর সে তো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
قُولُوٓا۟ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ إِلَىٰٓ إِبْرَٰهِـۧمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَآ أُوتِىَ ٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍۢ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ ١٣٦
আয়াত-১৩৬: তোমরা বল: আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি, এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের প্রতি এবং যা দেয়া হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা দেয়া হয়েছে অন্যান্য নবীদের তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আর আমরা তারই কাছে আত্মসমর্পণকারী।
فَإِنْ ءَامَنُوا۟ بِمِثْلِ مَآ ءَامَنتُم بِهِۦ فَقَدِ ٱهْتَدَوا۟ ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّمَا هُمْ فِى شِقَاقٍۢ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ ٱللَّهُ ۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ١٣٧
আয়াত-১৩৭: অতএব তারা যদি ঈমান আনে তোমাদের ঈমান আনার মত, তাহলে নিশ্চয় তারা সৎপথ পাবে। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে অবশ্যই তারা রয়েছে হঠকারিতায়। কাজেই এখন তাদের ব্যাপারে আপনার জন্য আল্লাহই যথথেষ্ট। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।
صِبْغَةَ ٱللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ صِبْغَةًۭ ۖ وَنَحْنُ لَهُۥ عَـٰبِدُونَ ١٣٨
আয়াত-১৩৮: আমরা গ্রহণ করলাম আল্লহর রং। আল্লহর রং-এর চেয়ে উত্তম রং আর কর হতে পারে? আর আমরা তারই ইবাদত কর।
قُلْ أَتُحَآجُّونَنَا فِى ٱللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ وَلَنَآ أَعْمَـٰلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَـٰلُكُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُخْلِصُونَ ١٣٩
আয়াত-১৩৯: আপনি বলুনঃ তোমরা কি আমাদের সঙ্গে আল্লাহ সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? অথচ তিনি আমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা আর আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। আমরা তার জন্য নিবেদিত।
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَٰهِـۧمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطَ كَانُوا۟ هُودًا أَوْ نَصَـٰرَىٰ ۗ قُلْ ءَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ ٱللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَـٰدَةً عِندَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ١٤٠
আয়াত-১৪০: তোমরা কি বল যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধররা ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান ছিল? আপনি বলুনঃ তোমরা বেশি জান, না আল্লাহ? তার চেয়ে অধিক জালিম কে হতে পারে যে গোপন করে তার কাছে আল্লাহ̖র পক্ষ থেকে যে প্রমাণ আছে তা। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন।
تِلْكَ أُمَّةٌۭ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْـَٔلُونَ عَمَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٤١
আয়াত-১৪১: তারা ছিল এক উম্মত, অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তা তাদের জন্য এবং তোমরা যা করছ তা তোমাদের জন্য। তারা যা করছে সে সম্বন্ধে তোমাদের কোন প্রশ্ন করা হবে না।
سَيَقُولُ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَ ٱلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ ٱلَّتِى كَانُوا۟ عَلَيْهَا ۚ قُل لِّلَّهِ ٱلْمَشْرِقُ وَٱلْمَغْرِبُ ۚ يَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ١٤٢
আয়াত–১৪২: অচিরেই নির্বোধ লোকেরা বলবে: কিসে ফিরিয়ে দিল তাদের সে কেবল থেকে, যে কেবল তারা এ যাবত অনুসরণ করে আসছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَـٰكُمْ أُمَّةًۭ وَسَطًۭا لِّتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًۭا ۗ وَمَا جَعَلْنَا ٱلْقِبْلَةَ ٱلَّتِى كُنتَ عَلَيْهَآ إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ ٱلرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَـٰنَكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٤٣
আয়াত-১৪৩: আর এভাবে আমি তোমাদের করেছি এক মধ্যপন্থী জাতি যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষ্যদাতা হও এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হন। আপনি যে কেবলার এ যাবত অনুসরণ করছিলেন তাকে আমি এজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি-কে রাসূলের অনুসরণ করে, আর কে পিঠটান দেয়? আল্লাহ যাদের সৎপথ প্রদর্শন করেছেন তাদের ছাড়া অন্যদের কাছে এটা নিশ্চিত কঠোরতর বিষয়। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু।
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِى ٱلسَّمَآءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةًۭ تَرْضَىٰهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُۥ ۗ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ ١٤٤
আয়াত-১৪৪: বার বার আকাশের দিকে আপনার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি। কাজেই এমন কেবলার দিকে আমি আপনাকে ফিরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি আল-মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরান। আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকে মুখ কর। আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, এটাই তাদের পালনকর্তার প্রেরিত সত্য। আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখবর নন যা তারা করে।
وَلَئِنْ أَتَيْتَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ بِكُلِّ ءَايَةٍۢ مَّا تَبِعُوا۟ قِبْلَتَكَ ۚ وَمَآ أَنتَ بِتَابِعٍۢ قِبْلَتَهُمْ ۚ وَمَا بَعْضُهُم بِتَابِعٍۢ قِبْلَةَ بَعْضٍۢ ۚ وَلَئِنِ ٱتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُم مِّنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ ۙ إِنَّكَ إِذًۭا لَّمِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٤٥
আয়াত-১৪৫: যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে আপনি সমস্ত প্রমাণ পেশ করলেও তারা আপনার কেবলার অনুসরণ করবে না, আর আপনিও তাদের কেবলা অনুসরণ করার নন। আর তারা একে অন্যের কেবলা অনুসরণ করে না। আপনি যদি আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বেন।
ٱلَّذِينَ ءَاتَيْنَـٰهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ يَعْرِفُونَهُۥ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَآءَهُمْ ۖ وَإِنَّ فَرِيقًۭا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ ٱلْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ١٤٦
আয়াত-১৪৬: যাদের আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চেনে, যেরূপ তারা তাদের পুত্রদের চেনে। আর তাদের একদল জেনে-শুনে নিশ্চিতভাবে সত্য গোপন করে।
ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلْمُمْتَرِينَ ١٤٧
আয়াত-১৪৭: প্রকৃত সত্য তো তা, যা তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রাপ্ত। কাজেই তুমি সন্দিহানদের দলভুক্ত হয়ে না।
وَلِكُلٍّۢ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا ۖ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ ۚ أَيْنَ مَا تَكُونُوا۟ يَأْتِ بِكُمُ ٱللَّهُ جَمِيعًا ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ١٤٨
আয়াত-১৪৮: আর প্রত্যেকেরই রয়েছে একটি দিক, যেদিকে সে মুখ করে। সুতরাং তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্রে সমবেত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ۖ وَإِنَّهُۥ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ١٤٩
আয়াত-১৪৯: যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও। নিশ্চয় এটা হল তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে অবধারিত সত্য। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন।
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُۥ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَٱخْشَوْنِى وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِى عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ١٥٠
আয়াত-১৫০: এবং যেখান থেকেই তুমি বের হও না কেন, তোমার মুখ আল-মসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকেই মুখ ফেরাবে, যাতে মানুষের কোন অবকাশ না থাকে তোমাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক করার, তাদের মধ্যে যারা জালিম তাদের কথা আলাদা। অতএব তাদের ভয় কর না, কেবল আমাকেই ভয় কর, যাতে আমি আমার অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তোমাদের দান করতে পারি এবং তোমরা সৎপথে পরিচালিত হতে পার।
Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ১০১-১২৫)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
وَلَمَّا جَآءَهُمْ رَسُولٌۭ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٌۭ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌۭ مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ١٠١
আয়াত-১০১: আর যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে একজন রাসূল এল, যে তাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক, তখন যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহর কিতাবকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল, যেন তারা জানেই না।
وَٱتَّبَعُوا۟ مَا تَتْلُوا۟ ٱلشَّيَـٰطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَـٰنَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَـٰنُ وَلَـٰكِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ وَمَآ أُنزِلَ عَلَى ٱلْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَـٰرُوتَ وَمَـٰرُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌۭ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيْنَ ٱلْمَرْءِ وَزَوْجِهِۦ ۚ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا۟ لَمَنِ ٱشْتَرَىٰهُ مَا لَهُۥ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ مِنْ خَلَـٰقٍۢ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا۟ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ ١٠٢
আয়াত-১০২: তারা তা অনুসরণ করল যা শয়তানরা করত সুলায়মানের রাজত্বকালে। সুলায়মান কুফর করেনি, বরং শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে যাদু এবং বাবেল শহরে হারূত ও মারত ফেরেশতাদ্বয়ের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিখাত। তারা কাউকে একথা না বলে শিখাত না যে, “আমরা পরীক্ষাস্বরূপ, কাজেই তুমি কুফরী কর না।” তারা তাদের কাছ থেকে এমন যাদু শিখত যা বিচ্ছেদ ঘটাত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। আর তারা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না। তারা শিখত এমন কিছু যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোন উপকার করতে পারত না। আর তারা নিশ্চিতভাবে জানত যে, যে কেউ অবলম্বন করে পরকালে তার কোন অংশ নেই। কতইনা নিকৃষ্ট তা যার বিনিময়ে তারা আত্মাকে বিক্রি করছে, যদি তারা জানত!
وَلَوْ أَنَّهُمْ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَمَثُوبَةٌۭ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ خَيْرٌۭ ۖ لَّوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ ١٠٣
আয়াত-১০৩: যদি তারা ঈমান আনত ও মোত্তাকী হত, তবে তারা আল্লাহর কাছ থেকে অধিক কল্যাণকর প্রতিদান পেত। যদি তারা জানত।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَقُولُوا۟ رَٰعِنَا وَقُولُوا۟ ٱنظُرْنَا وَٱسْمَعُوا۟ ۗ وَلِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ١٠٤
আয়াত-১০৪: ওহে তোমরা যারা ঈমান এনছ! তোমরা ‘রায়েনা’ বল না বরং ‘উন̖যুরনা’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি।
مَّا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ وَلَا ٱلْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَٱللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِۦ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ ١٠٥
আয়াত-১০৫: কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফের তারা এবং মুশরিকরা চায় না যে, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষভাবে নিজ অনুগ্রহের জন্য মনোনীত করেন, এবং আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
مَا نَنسَخْ مِنْ ءَايَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍۢ مِّنْهَآ أَوْ مِثْلِهَآ ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ ١٠٦
আয়াত-১০৬: আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে তার চেয়ে উত্তম অথবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান?
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِن وَلِىٍّۢ وَلَا نَصِيرٍ ١٠٧
আয়াত-১০৭: তুমি কি জান না যে, একমাত্র আল্লাহর জন্যই আসমান ও জমিনের আধিপত্য? আর আল্লাহ ব্যতিরেকে তোমাদের নেই কোন বন্ধু এবং নেই কোন সাহায্যকারী।
أَمْ تُرِيدُونَ أَن تَسْـَٔلُوا۟ رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ ٱلْكُفْرَ بِٱلْإِيمَـٰنِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ ٱلسَّبِيلِ ١٠٨
আয়াত-১০৮: তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেরূপ প্রশ্ন করতে চাও যেরূপ প্রশ্ন করা হয়েছিল মূসাকে ইতিপূর্বে? যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফর গ্রহণ করে, সে নিশ্চিতভাবে সরল পথ হারায়।
وَدَّ كَثِيرٌۭ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعْدِ إِيمَـٰنِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًۭا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلْحَقُّ ۖ فَٱعْفُوا۟ وَٱصْفَحُوا۟ حَتَّىٰ يَأْتِىَ ٱللَّهُ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ١٠٩
আয়াত-১০৯: কিতাবীদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও তাদের অনেকেই ঈর্ষাবশত তোমাদের ঈমান আনার পর আবার তোমাদের কাফেররূপে ফিরে পাওয়ার আকাঙক্ষা করে। যতক্ষণ না আল্লাহর কোন নির্দেশ আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا۟ لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍۢ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌۭ ١١٠
আয়াত-১১০: তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও তোমরা নিজেদের জন্য উত্তম কাজের যা কিছু পূর্বে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
وَقَالُوا۟ لَن يَدْخُلَ ٱلْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصَـٰرَىٰ ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ ۗ قُلْ هَاتُوا۟ بُرْهَـٰنَكُمْ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ١١١
আয়াত-১১১: আর তারা বলে: ইহুদী বা খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য কেউ বেহেশতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের অলীক বাসনা। আপনি বলুন: যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে প্রমাণ নিয়ে এস।
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌۭ فَلَهُۥٓ أَجْرُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ١١٢
আয়াত –১১২: হাঁ, যে কেউ নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণরূপে সমৰ্পণ করে এবং সে সৎকর্মপরায়ণও, তার জন্য রয়েছে তার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার। তাদের নেই কোন ভয় এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ لَيْسَتِ ٱلنَّصَـٰرَىٰ عَلَىٰ شَىْءٍۢ وَقَالَتِ ٱلنَّصَـٰرَىٰ لَيْسَتِ ٱلْيَهُودُ عَلَىٰ شَىْءٍۢ وَهُمْ يَتْلُونَ ٱلْكِتَـٰبَ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ ۚ فَٱللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ١١٣
আয়াত-১১৩: ইহুদীরা বলে, খ্রিস্টানরা কোন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং খ্রিস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। অথচ তারা সবাই কিতাব পাঠ করে। এভাবেই যারা কিছু জানে না তারাও ওদের মতই বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সে বিষয়ে ফয়সালা করে দিবেন।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَـٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا ٱسْمُهُۥ وَسَعَىٰ فِى خَرَابِهَآ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَآ إِلَّا خَآئِفِينَ ۚ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌۭ وَلَهُمْ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ ١١٤
আয়াত-১১৪: যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করতে চেষ্টা করে, তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে? অথচ ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা বৈধ ছিল না। তাদের জন্য রয়েছে পৃথিবীতে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে তাদের জন্য মহাশাস্তি।
وَلِلَّهِ ٱلْمَشْرِقُ وَٱلْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا۟ فَثَمَّ وَجْهُ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٰسِعٌ عَلِيمٌۭ ١١٥
আয়াত-১১৫: পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী সব́জ্ঞ।
وَقَالُوا۟ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدًۭا ۗ سُبْحَـٰنَهُۥ ۖ بَل لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ كُلٌّۭ لَّهُۥ قَـٰنِتُونَ ١١٦
আয়াত-১১৬: আর তারা বলে: আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি অতি পবিত্র; বরং আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তার, সবই তার আজ্ঞাবহ।
بَدِيعُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ١١٧
আয়াত –১১৭: তিনি আসমান ও জমিনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী; তিনি যখন কিছু করতে চান তখন সেটিকে বলেন, হয়ে যাও, অমনি তা হয়ে যায়।
وَقَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا ٱللَّهُ أَوْ تَأْتِينَآ ءَايَةٌۭ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ ۘ تَشَـٰبَهَتْ قُلُوبُهُمْ ۗ قَدْ بَيَّنَّا ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يُوقِنُونَ ١١٨
আয়াত-১১৮: যারা কিছু জানে না তারা বলে; কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না; কিংবা কেন আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে না? এমনিভাবে তাদের পূর্ববতীরাও তাদেরই মত কথা বলত। তাদের অন্তর এক রকম। অবশ্যই আমি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি নিদর্শনাবলী দৃঢ় প্রত্যয়শীলদের জন্য।
إِنَّآ أَرْسَلْنَـٰكَ بِٱلْحَقِّ بَشِيرًۭا وَنَذِيرًۭا ۖ وَلَا تُسْـَٔلُ عَنْ أَصْحَـٰبِ ٱلْجَحِيمِ ١١٩
আয়াত-১১৯: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনাকে দোযখবাসীদের সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ ٱلْيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَـٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى ٱللَّهِ هُوَ ٱلْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ ٱتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُم بَعْدَ ٱلَّذِى جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن وَلِىٍّۢ وَلَا نَصِيرٍ ١٢٠
আয়াত-১২০: ইহুদী ও খ্রিস্টানরা আপনার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না; আপনি তাদের ধর্ম অনুসরণ করেন। বলে দিন, নিশ্চয় আল্লাহ যে পথ নির্দেশ করেন, তা-ই প্রকৃত সরল ও সঠিক পথ। জ্ঞানলাভের পর আপনি যদি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করেন, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী থাকবে না।
ٱلَّذِينَ ءَاتَيْنَـٰهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ يَتْلُونَهُۥ حَقَّ تِلَاوَتِهِۦٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِۦ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِهِۦ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ ١٢١
আয়াত-১২১: আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তাদের মধ্যে যারা তা যথাযথভাবে আবৃত্তি করে, তারাই তাতে বিশ্বাস করে; আর যারা তা অবিশ্বাস করে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّى فَضَّلْتُكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ ١٢٢
আয়াত-১২২: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। বিশ্ববাসীর উপর আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
وَٱتَّقُوا۟ يَوْمًۭا لَّا تَجْزِى نَفْسٌ عَن نَّفْسٍۢ شَيْـًۭٔا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌۭ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَـٰعَةٌۭ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ ١٢٣
আয়াত-১২৩: এবং তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যে দিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না এবং কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না এবং কোন সুপারিশ কারো জন্য ফলপ্ৰদ হবে না, আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
وَإِذِ ٱبْتَلَىٰٓ إِبْرَٰهِـۧمَ رَبُّهُۥ بِكَلِمَـٰتٍۢ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّى جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًۭا ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِى ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِى ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٢٤
আয়াত-১২৪: এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার পালনকর্তা কয়েকটি কথা দিয়ে পরীক্ষা করলেন, তারপর সে তা পূর্ণ করল; তখন আল্লাহ বললেনঃ আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব। সে বললঃ আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও? আল্লাহ বলেন: আমার অঙ্গীকার জালিমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।
وَإِذْ جَعَلْنَا ٱلْبَيْتَ مَثَابَةًۭ لِّلنَّاسِ وَأَمْنًۭا وَٱتَّخِذُوا۟ مِن مَّقَامِ إِبْرَٰهِـۧمَ مُصَلًّۭى ۖ وَعَهِدْنَآ إِلَىٰٓ إِبْرَٰهِـۧمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِىَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلْعَـٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥
আয়াত-১২৫: এবং স্মরণ কর, যখন আমি কাবা ঘরকে মানবজাতির জন্য মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তার স্থান করেছিলাম এবং বলেছিলাম: তোমরা ইবরাহীমের দাড়ানোর জায়গাকে সালাতের জায়গারূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম যে, ‘তোমরা উভয়ে আমার ঘরকে তওয়াফকার, ইতিকাফকার এবং রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’
Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ৭৬-১০০)
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
وَإِذَا لَقُوا۟ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَا بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍۢ قَالُوٓا۟ أَتُحَدِّثُونَهُم بِمَا فَتَحَ ٱللَّهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَآجُّوكُم بِهِۦ عِندَ رَبِّكُمْ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ٧٦
আয়াত-৭৬: আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে: আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা নিভৃতে পরস্পরের সাথে মিলিত হয় তখন বলে: আল্লাহ তোমাদের কাছে যা প্রকাশ করেছেন, তোমরা কি তা তাদের বলে দিচ্ছ? তাহলে এ নিয়ে তারা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করবে। তোমরা কি বুকু না?
أَوَلَا يَعْلَمُونَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ٧٧
আয়াত-৭৭: তারা কি এতটুকুও জানে না যে, তারা যা গোপন করে কিংবা যা প্রকাশ করে, নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা জানেন?
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ ٱلْكِتَـٰبَ إِلَّآ أَمَانِىَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ ٧٨
আয়াত-৭৮: তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যারা মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাবের কিছুই জানে না। তারা শুধু ধারণাই পোষণ করে।
فَوَيْلٌۭ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ ٱلْكِتَـٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشْتَرُوا۟ بِهِۦ ثَمَنًۭا قَلِيلًۭا ۖ فَوَيْلٌۭ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌۭ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ ٧٩
আয়াত-৭৯: সুতরাং আফসোস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে এবং বলে: এটা আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ,-যাতে এর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য পেতে পারে। কাজেই তাদের প্রতি আক্ষেপ তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য এবং তারা যা উপার্জন করেছে তার জন্যও আক্ষেপ তাদের প্রতি।
وَقَالُوا۟ لَن تَمَسَّنَا ٱلنَّارُ إِلَّآ أَيَّامًۭا مَّعْدُودَةًۭ ۚ قُلْ أَتَّخَذْتُمْ عِندَ ٱللَّهِ عَهْدًۭا فَلَن يُخْلِفَ ٱللَّهُ عَهْدَهُۥٓ ۖ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ٨٠
আয়াত-৮০: তারা বলে: কখনও আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না গণাগণতির কয়েক দিন ব্যতিরেকে। আপনি বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার নিয়েছ, অতএব আল্লাহ তার অঙ্গীকার কখনও খেলাফ করবেন না কিংবা তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?
بَلَىٰ مَن كَسَبَ سَيِّئَةًۭ وَأَحَـٰطَتْ بِهِۦ خَطِيٓـَٔتُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٨١
আয়াত-৮১: হাঁ, যে ব্যক্তি পাপ উপার্জন করেছে এবং তার পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, এরূপ লোকেরাই দোযখের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٨٢
আয়াত-৮২: আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই বেহেশতের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا ٱللَّهَ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَانًۭا وَذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَـٰمَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينِ وَقُولُوا۟ لِلنَّاسِ حُسْنًۭا وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًۭا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ ٨٣
আয়াত-৮৩: স্মরণ কর, যখন আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবিাদত করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সাথে সদয় ব্যবহার করবে, মানুষের সাথে সদালাপ করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে, তখন অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা অগ্রাহ্যকারী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَكُمْ لَا تَسْفِكُونَ دِمَآءَكُمْ وَلَا تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن دِيَـٰرِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ ٨٤
আয়াত-৮৪: আর যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা পরস্পরের রক্তপাত করবে না এবং তোমাদের আপনজনদের দেশ থেকে বহিষ্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং এ বিষয়ে তোমরা সাক্ষ্য দিচ্ছিলে।
ثُمَّ أَنتُمْ هَـٰٓؤُلَآءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًۭا مِّنكُم مِّن دِيَـٰرِهِمْ تَظَـٰهَرُونَ عَلَيْهِم بِٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَـٰرَىٰ تُفَـٰدُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ ۚ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ ٱلْكِتَـٰبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍۢ ۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْىٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلْعَذَابِ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٨٥
আয়াত-৮৫: তারপর তোমরাই তারা যারা নিজেদের হত্যা করছ এবং তোমাদের এক দলকে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করছ, পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছ। আর যদি তারা বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তাহলে মুক্তিপণ নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিষ্কার করাই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে তাদের দুৰ্গতি ছাড়া কোন পথ নেই এবং কেয়ামতের দিন কঠোরতর শাস্তির দিকে তাদের নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে বে-খবর নন।
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا۟ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا بِٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ ٱلْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ ٨٦
আয়াত-৮৬: এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে; সুতরাং তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তারা সাহায্য-প্রাপ্তও হবে না।
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَـٰبَ وَقَفَّيْنَا مِنۢ بَعْدِهِۦ بِٱلرُّسُلِ ۖ وَءَاتَيْنَا عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱلْبَيِّنَـٰتِ وَأَيَّدْنَـٰهُ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِ ۗ أَفَكُلَّمَا جَآءَكُمْ رَسُولٌۢ بِمَا لَا تَهْوَىٰٓ أَنفُسُكُمُ ٱسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًۭا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًۭا تَقْتُلُونَ ٨٧
আয়াত-৮৭: আর আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলদের পাঠিয়েছি; মরিয়মের পুত্র ঈসাকে আমি স্পষ্ট মু’জিযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। তারপর যখনই কোন রাসূল এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা তোমাদের মনঃপূত হয়নি তখনই তোমরা অহংকার করেছ, আর তাদের কতককে মিথ্যাবাদী বলেছ এবং কতককে হত্যা করেছ।
وَقَالُوا۟ قُلُوبُنَا غُلْفٌۢ ۚ بَل لَّعَنَهُمُ ٱللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلًۭا مَّا يُؤْمِنُونَ ٨٨
আয়াত-৮৮: তারা বলেছিল: আমাদের অন্তর আচ্ছাদিত; বরং সত্য প্রত্যাখ্যানের দরুন আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তাদের খুব কম সংখ্যকই ঈমান আনে।
وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَـٰبٌۭ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٌۭ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا۟ مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَلَمَّا جَآءَهُم مَّا عَرَفُوا۟ كَفَرُوا۟ بِهِۦ ۚ فَلَعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ ٨٩
আয়াত-৮৯: যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এল যা তাদের কাছে যা রয়েছে তার সমর্থক, আর তারা পূর্বে এর সাহায্যে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের বিরুদ্ধে বিজয় প্রার্থনা করত; অবশেষে যখন তাদের কাছে পৌছল যা তারা জ্ঞাত ছিল তখন তারা তা অস্বীকার করে বসল। সুতরাং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।
بِئْسَمَا ٱشْتَرَوْا۟ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمْ أَن يَكْفُرُوا۟ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بَغْيًا أَن يُنَزِّلَ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ فَبَآءُو بِغَضَبٍ عَلَىٰ غَضَبٍۢ ۚ وَلِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ ٩٠
আয়াত-৯০: কতইনা মন্দ তা যার বিনিময়ে তারা তাদের আত্মাকে বিক্রি করেছে। তা হল, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তারা অস্বীকার করত ঈর্ষান্বিত হয়ে শুধু এ কারণে যে, আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে। সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য তো রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ ءَامِنُوا۟ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُوا۟ نُؤْمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَآءَهُۥ وَهُوَ ٱلْحَقُّ مُصَدِّقًۭا لِّمَا مَعَهُمْ ۗ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنۢبِيَآءَ ٱللَّهِ مِن قَبْلُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ٩١
আয়াত-৯১: আর যখন তাদের বলা হয়: তোমরা ঈমান আন তাতে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন; তখন তারা বলে: আমরা ঈমান রাখি তাতে যা আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সেটি ছাড়া সবকিছুই তারা অস্বীকার করে যদিও তা সত্য এবং যা তাদের কাছে আছে তার সমর্থক। আপনি বলে দিন, যদি তোমরা প্রকৃত বিশ্বাসী হবে তাহলে ইতিপূর্বে নারীদের কেন হত্যা করলে?
وَلَقَدْ جَآءَكُم مُّوسَىٰ بِٱلْبَيِّنَـٰتِ ثُمَّ ٱتَّخَذْتُمُ ٱلْعِجْلَ مِنۢ بَعْدِهِۦ وَأَنتُمْ ظَـٰلِمُونَ ٩٢
আয়াত-৯২: আর মূসা তো তোমাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট মু’জিযাসহ, তারপর তার অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুর বানিয়ে নিয়েছ, তোমরা তো সীমালংঘনকারী।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ ٱلطُّورَ خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَـٰكُم بِقُوَّةٍۢ وَٱسْمَعُوا۟ ۖ قَالُوا۟ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَأُشْرِبُوا۟ فِى قُلُوبِهِمُ ٱلْعِجْلَ بِكُفْرِهِمْ ۚ قُلْ بِئْسَمَا يَأْمُرُكُم بِهِۦٓ إِيمَـٰنُكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ٩٣
আয়াত-৯৩: স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুরকে তোমাদের উপর তুলে ধরেছিলাম, বলেছিলাম: দৃঢ়ভাবে ধর যা আমি তোমাদের দিয়েছি এবং শোন। তারা বলেছিল: আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম কুফরের কারণে তাদের হৃদয়ে বাছুর-প্রীতি সিঞ্চিত হয়েছিল। আপনি বলে দিন: যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তাহলে তোমাদের বিশ্বাস যার আদেশ দেয় তা কতই না মন্দ!
قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ ٱلدَّارُ ٱلْـَٔاخِرَةُ عِندَ ٱللَّهِ خَالِصَةًۭ مِّن دُونِ ٱلنَّاسِ فَتَمَنَّوُا۟ ٱلْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٩٤
আয়াত-৯৪: আপনি বলুন: যদি অন্য লোকদের ছাড়া শুধু তোমাদেরই জন্য বিশেষভাবে আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে বরাদ হয়ে থাকে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।
وَلَن يَتَمَنَّوْهُ أَبَدًۢا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلظَّـٰلِمِينَ ٩٥
আয়াত-৯৫: কিন্তু তারা কখনও মৃত্যু কামনা করবে না, সে কারণে যা তাদের হাত পূর্বে পাঠিয়েছে। আর আল্লাহ জালিমদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ ٱلنَّاسِ عَلَىٰ حَيَوٰةٍۢ وَمِنَ ٱلَّذِينَ أَشْرَكُوا۟ ۚ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍۢ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِۦ مِنَ ٱلْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ ۗ وَٱللَّهُ بَصِيرٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ ٩٦
আয়াত-৯৬: অবশ্যই আপনি সবার চেয়ে এমনকি মুশরিকদের চেয়েও জীবনের প্রতি তাদের অধিক লোভী দেখতে পাবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যেন হাজার বছর বাঁচতে পারে। কিন্তু এ ধরনের দীর্ঘায়ু শাস্তি থেকে তাদের রক্ষা করতে পারবে না। তারা যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّۭا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُۥ نَزَّلَهُۥ عَلَىٰ قَلْبِكَ بِإِذْنِ ٱللَّهِ مُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًۭى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ ٩٧
আয়াত-৯৭: আপনি বলে দিন: যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু—এ কারণে যে, সে আল্লাহর নির্দেশে আপনার অন্তরে কোরআন নাযিল করেছে, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং যা মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ__
مَن كَانَ عَدُوًّۭا لِّلَّهِ وَمَلَـٰٓئِكَتِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَىٰلَ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَدُوٌّۭ لِّلْكَـٰفِرِينَ ٩٨
আয়াত-৯৮: যে কেউ আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তার রাসূল এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের সত্রু, সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের শত্রু।
وَلَقَدْ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ءَايَـٰتٍۭ بَيِّنَـٰتٍۢ ۖ وَمَا يَكْفُرُ بِهَآ إِلَّا ٱلْفَـٰسِقُونَ ٩٩
আয়াত-৯৯: আর আমি আপনার প্রতি স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নাযিল করেছি। কাফেররা ছাড়া কেউ তা প্রত্যাখ্যান করে না।
أَوَكُلَّمَا عَـٰهَدُوا۟ عَهْدًۭا نَّبَذَهُۥ فَرِيقٌۭ مِّنْهُم ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ١٠٠
আয়াত-১০০: কি আশ্চর্য, যখনই তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের কোন একদল তা ভঙ্গ করে, বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ৫০-৭৫)
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
51
وَإِذْ وَٰعَدْنَا مُوسَىٰٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ ثُمَّ ٱتَّخَذْتُمُ ٱلْعِجْلَ مِنۢ بَعْدِهِۦ وَأَنتُمْ ظَـٰلِمُونَ٥١
আয়াত-৫১: আর যখন আমি মূসার সাথে চল্লিশ রাতের ওয়াদা করেছিলাম, তারপর তোমরা তার অনুপস্থিতিতে বাছুর বানিয়ে নিয়েছিলে; তোমরা ছিলে জালিম।
52
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥٢
আয়াত-৫২: এরপরও আমি তোমাদের ক্ষমা করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
53
وَإِذْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ٥٣
আয়াত-৫৩: আর স্মরণ কর, যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দান করেছিলাম যাতে তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও।
54
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦ يَـٰقَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُم بِٱتِّخَاذِكُمُ ٱلْعِجْلَ فَتُوبُوٓا۟ إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَٱقْتُلُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ٥٤
আয়াত-৫৪: আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা বাছুর বানিয়ে নিজেদের উপর ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং এখন তোমরা তোমাদের স্রষ্টার দিকে ফিরে যাও এবং নিজেদের হত্যা কর। এটাই কল্যাণকর তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
55
وَإِذْ قُلْتُمْ يَـٰمُوسَىٰ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهْرَةًۭ فَأَخَذَتْكُمُ ٱلصَّـٰعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ٥٥
আয়াত-৫৫: আর যখন তোমরা বললে: হে মূসা আমরা কখনও তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাব। তখন তোমাদের পাকড়াও করল বজ্র আর তা তোমরা প্রত্যক্ষ করছিলে।
56
ثُمَّ بَعَثْنَـٰكُم مِّنۢ بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥٦
আয়াত-৫৬: তারপর আমি তোমাদের পুনরুজ্জীবিত করলাম তোমাদের মৃত্যুর পর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
57
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ ٱلْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ ۖ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ٥٧
আয়াত-৫৭: আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। “তোমরা খাও সেসব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের দান করেছি।” তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই জুলুম করেছিল।
58
وَإِذْ قُلْنَا ٱدْخُلُوا۟ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةَ فَكُلُوا۟ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًۭا وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًۭا وَقُولُوا۟ حِطَّةٌۭ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَـٰيَـٰكُمْ ۚ وَسَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ ٥٨
আয়াত–৫৮ স্বরণ কর, যখন আমি বললাম: তোমরা প্রবেশ কর এ নগরীতে এবং এখানে যা, যেভাবে খুশী আহার করে স্বচ্ছন্দে বিচরণ কর এবং দরজার ভিতর দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর এবং বল: আমাদের ক্ষমা করে দাও-তাহলে আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেব আর সৎকর্মপরায়ণ লোকদের অতিরিক্ত দান করব।
59
فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ قَوْلًا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ ٥٩
আয়াত-৫৯: কিন্তু যারা জুলুম করেছিল তারা তাদের যা বলা হয়েছিল তার স্থলে অন্য কথা বলল। সুতরাং আমি আসমান থেকে জালিমদের উপর আযাব অবতী́ণ।
60
۞ وَإِذِ ٱسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦ فَقُلْنَا ٱضْرِب بِّعَصَاكَ ٱلْحَجَرَ ۖ فَٱنفَجَرَتْ مِنْهُ ٱثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًۭا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍۢ مَّشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ مِن رِّزْقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ ٦٠
আয়াত-৬০: স্মরণ কর, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানি প্রার্থনা করেছিল। তখন আমি বললাম: তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত কর। ফলে তা থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। প্রত্যেক গোত্রই নিজ নিজ ঘাট চিনে নিল। বললাম: তোমরা আল্লাহর দেয়া জীবিকা থেকে পানাহার কর আর পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কর না।
61
وَإِذْ قُلْتُمْ يَـٰمُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍۢ وَٰحِدٍۢ فَٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلْأَرْضُ مِنۢ بَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ ٱلَّذِى هُوَ أَدْنَىٰ بِٱلَّذِى هُوَ خَيْرٌ ۚ ٱهْبِطُوا۟ مِصْرًۭا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ وَٱلْمَسْكَنَةُ وَبَآءُو بِغَضَبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ٦١
আয়াত-৬১: আর তোমরা যখন বললেঃ হে মূসা, আমরা কখনও একই রকম খাদ্যে ধৈর্যধারণ করব না। সুতরাং আপনি আপনার তার কাছে আমাদের জন্ম প্রার্থনা করেন, তিনি যেন আমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করেন তরকারি, কাঁকড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ। মূসা বললঃ তোমরা কি উৎকৃষ্ট বস্তুর পরিবর্তে নিকৃষ্ট বস্তু নিতে চাও? তাহলে কোন নগরীতে তোমরা অবতরণ কর, সেখানে তোমরা যা চাও তা পাবে। তাদের উপর আরোপিত হল লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য। আর তারা আল্লাহর গজবে পতিত হয়ে ঘুরতে রইল। এরূপ হল এজন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তারা নাফরমানি ও সীমালংঘন করেছিল বলেই এমন পরিণতি হয়েছিল।
62
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلنَّصَـٰرَىٰ وَٱلصَّـٰبِـِٔينَ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ٦٢
আয়াত-৬২: যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইহুদী হয়েছে আর খ্রিস্টান ও সাবিঈন- তাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
63
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَـٰقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ ٱلطُّورَ خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَـٰكُم بِقُوَّةٍۢ وَٱذْكُرُوا۟ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ٦٣
আয়াত-৬৩: আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর-কে তোমাদের উপর তুলে ধরে বলেছিলামঃ আমি তোমাদের যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ রেখ, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার।
64
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ لَكُنتُم مِّنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ ٦٤
আয়াত-৬৪: এরপরও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। অতএব, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী না থাকলে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে।
65
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ ٱلَّذِينَ ٱعْتَدَوْا۟ مِنكُمْ فِى ٱلسَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔينَ ٦٥
আয়াত-৬৫: তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছিল, তোমরা তাদের ভালরূপে জানতে। আমি তাদের বলেছিলামঃ তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।
66
فَجَعَلْنَـٰهَا نَكَـٰلًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةًۭ لِّلْمُتَّقِينَ ٦٦
আয়াত-৬৬: তারপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমকালীন ও পরবতীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং মোক্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ করে দিয়েছি।
67
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا۟ بَقَرَةًۭ ۖ قَالُوٓا۟ أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًۭا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِٱللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْجَـٰهِلِينَ ٦٧
আয়াত-৬৭: স্বরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ আল্লাহতোমাদের একটি গরু জবাই করতে আদেশ দিয়েছেন। তখন তারা বলেছিল; তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছ? মূসা বললঃ আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে।
68
قَالُوا۟ ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِىَ ۚ قَالَ إِنَّهُۥ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌۭ لَّا فَارِضٌۭ وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌۢ بَيْنَ ذَٰلِكَ ۖ فَٱفْعَلُوا۟ مَا تُؤْمَرُونَ ٦٨
আয়াত-৬৮: তারা বলল: তুমি প্রার্থনা কর আমাদের জন্য তোমার পালনকর্তার কাছে, তিনি যেন সেটি কী তা আমাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। মূসা বলল: আল্লাহ বলেছেন, সেটা হবে এমন গাভী যা বৃদ্ধও নয় অল্পবয়স্কও নয়, এ দুয়ের মধ্যবয়সী। সুতরাং যা আদিষ্ট হয়েছ তা কর।
69
قَالُوا۟ ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُهَا ۚ قَالَ إِنَّهُۥ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌۭ صَفْرَآءُ فَاقِعٌۭ لَّوْنُهَا تَسُرُّ ٱلنَّـٰظِرِينَ ٦٩
আয়াত-৬৯: তারা বলল: তুমি প্রার্থনা কর আমাদের জন্য তোমার পালনকর্তার কাছে, তিনি যেন আমাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন সেটির রং কিরূপ হবে? বললঃ আল্লাহ বলেছেন, সেটি হবে হলুদ বর্ণের গাভী, যা দর্শকদের আনন্দ দেবে।
70
قَالُوا۟ ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِىَ إِنَّ ٱلْبَقَرَ تَشَـٰبَهَ عَلَيْنَا وَإِنَّآ إِن شَآءَ ٱللَّهُ لَمُهْتَدُونَ ٧٠
আয়াত–৭০: তারা বলল: তুমি প্রার্থনা কর আমাদের জন্য তোমার আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। আর আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই আমরা পথপ্রাপ্ত হব।
71
قَالَ إِنَّهُۥ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌۭ لَّا ذَلُولٌۭ تُثِيرُ ٱلْأَرْضَ وَلَا تَسْقِى ٱلْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌۭ لَّا شِيَةَ فِيهَا ۚ قَالُوا۟ ٱلْـَٔـٰنَ جِئْتَ بِٱلْحَقِّ ۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُوا۟ يَفْعَلُونَ ٧١
আয়াত-৭১: মূসা বলল: তিনি বলেন, এটি এমন গাভী যা জমি চাষে এবং ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, এটি সুস্থ, নিখুঁত। তারা বললঃ এবার তুমি সঠিক তথ্য এনেছ। তারপর তারা সেটা জবাই করল, যদিও তারা জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।
72
وَإِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًۭا فَٱدَّٰرَْٰٔتُمْ فِيهَا ۖ وَٱللَّهُ مُخْرِجٌۭ مَّا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ ٧٢
আয়াত-৭২: স্মরণ কর, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং পরে সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করছিলে, যা তোমরা গোপন করছিলে তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল আল্লাহর ইচ্ছা।
73
فَقُلْنَا ٱضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا ۚ كَذَٰلِكَ يُحْىِ ٱللَّهُ ٱلْمَوْتَىٰ وَيُرِيكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ٧٣
আয়াত-৭৩: তারপর আমি বললামঃ মৃতকে আঘাত কর গরুর একটি খণ্ড দিয়ে। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের দেখিয়ে থাকেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
74
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِىَ كَٱلْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةًۭ ۚ وَإِنَّ مِنَ ٱلْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ ٱلْأَنْهَـٰرُ ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ ٱلْمَآءُ ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ ٱللَّهِ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٧٤
আয়াত-৭৪: এরপরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথরের মৃত অথবা তার চেয়েও কঠিন। কতক পাথর এমনও আছে যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং কতক এমন আছে যে, তা বিদীর্ণ হয় ও পরে তা থেকে পানি নির্গত হয়, আবার কতক এরূপ আছে যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ অনবহিত না।
75
۞ أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُوا۟ لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌۭ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَـٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُۥ مِنۢ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ٧٥
আয়াত- ৭৫: তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে তো একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শুনত, তারপর হৃদয়ংগম করে তা বিকৃত করত তারা সজ্ঞানে।
Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ২৬-৫০)
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
26
إِنَّ اللَّهَ لا يَستَحيي أَن يَضرِبَ مَثَلًا ما بَعوضَةً فَما فَوقَها ۚ فَأَمَّا الَّذينَ آمَنوا فَيَعلَمونَ أَنَّهُ الحَقُّ مِن رَبِّهِم ۖ وَأَمَّا الَّذينَ كَفَروا فَيَقولونَ ماذا أَرادَ اللَّهُ بِهٰذا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثيرًا وَيَهدي بِهِ كَثيرًا ۚ وَما يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الفاسِقينَ
আয়াত-২৬: নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন না উপমা দিতে কোন বস্তু দিয়ে, হোক তা মশা কিংবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কিছু। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তারা জানে যে, তাদের পালনকর্তার তরফের এ উপমা নির্ভুল ও সঠিক। কিন্তু যারা কাফের তারা বলে, আল্লাহ কি উদ্দেশ্যে এ তুচ্ছ বস্তুর উপমা দিয়েছেন? এ দিয়ে আল্লাহ অনেককে বিপথগামী করেন এবং অনেককে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তবে ফাসেকদের ছাড়া অন্য কাউকে তিনি এরূপ উপমা দিয়ে গোমরাহ করেন না।
27
الَّذينَ يَنقُضونَ عَهدَ اللَّهِ مِن بَعدِ ميثاقِهِ وَيَقطَعونَ ما أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يوصَلَ وَيُفسِدونَ فِي الأَرضِ ۚ أُولٰئِكَ هُمُ الخاسِرونَ
আয়াত-২৭: (ফাসেক ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। ওরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।
28
الَّذينَ يَنقُضونَ عَهدَ اللَّهِ مِن بَعدِ ميثاقِهِ وَيَقطَعونَ ما أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يوصَلَ وَيُفسِدونَ فِي الأَرضِ ۚ أُولٰئِكَ هُمُ الخاسِرونَ
আয়াত-২৮: কিরূপে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন। তারপর তিনি প্রাণ দান করলেন তোমাদের, আবার তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় তিনিই তোমাদের জীবন দান করবেন। পরিণামে তাঁরই সমীপে তোমরা উপস্থাপিত হবে।
29
هُوَ الَّذي خَلَقَ لَكُم ما فِي الأَرضِ جَميعًا ثُمَّ استَوىٰ إِلَى السَّماءِ فَسَوّاهُنَّ سَبعَ سَماواتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ
আয়াত-২৯: তিনি এমন যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের কল্যাণের জন্য পৃথিবীর সবকিছু। তারপর তিনি মনোযোগ দিলেন আকাশের প্রতি এবং বিন্যস্ত করলেন তা সাত আসমানরূপে। আর তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহহিত।
30
وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلائِكَةِ إِنّي جاعِلٌ فِي الأَرضِ خَليفَةً ۖ قالوا أَتَجعَلُ فيها مَن يُفسِدُ فيها وَيَسفِكُ الدِّماءَ وَنَحنُ نُسَبِّحُ بِحَمدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قالَ إِنّي أَعلَمُ ما لا تَعلَمونَ
আয়াত-৩০: আর স্মরণ কর, তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি, তখন তারা বলল: আপনি কি সেথায় এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে সেখানে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে? আর আমরা তো সদা আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেনঃ অবশ্যই আমি জানি, যা তোমরা জান না।
31
وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسماءَ كُلَّها ثُمَّ عَرَضَهُم عَلَى المَلائِكَةِ فَقالَ أَنبِئوني بِأَسماءِ هٰؤُلاءِ إِن كُنتُم صادِقينَ
আয়াত-৩১: আর তিনি শিখালেন আদমকে সব কিছুর নাম। তারপর সে সবকিছু ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন: তোমরা আমাকে এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
32
قالوا سُبحانَكَ لا عِلمَ لَنا إِلّا ما عَلَّمتَنا ۖ إِنَّكَ أَنتَ العَليمُ الحَكيمُ
আয়াত-৩২: তারা বলল: আপনি পবিত্র। আপনি যা আমাদের শিখিয়েছেন তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি প্রকৃত জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
33
قالَ يا آدَمُ أَنبِئهُم بِأَسمائِهِم ۖ فَلَمّا أَنبَأَهُم بِأَسمائِهِم قالَ أَلَم أَقُل لَكُم إِنّي أَعلَمُ غَيبَ السَّماواتِ وَالأَرضِ وَأَعلَمُ ما تُبدونَ وَما كُنتُم تَكتُمونَ
আয়াত-৩৩: তিনি বললেন: হে আদম, বলে দাও তাদের এ সব কিছুর নাম। তারপর যখন সে বলে দিল সেসবের নাম, তখন তিনি বললেন: আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমান ও জমিনের সকল গোপন বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে অবগত এবং তাও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন রাখ।
34
وَإِذ قُلنا لِلمَلائِكَةِ اسجُدوا لِآدَمَ فَسَجَدوا إِلّا إِبليسَ أَبىٰ وَاستَكبَرَ وَكانَ مِنَ الكافِرينَ
আয়াত-৩৪: আর যখন আমি আদমকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদের বললাম, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে আদেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
35
وَقُلنا يا آدَمُ اسكُن أَنتَ وَزَوجُكَ الجَنَّةَ وَكُلا مِنها رَغَدًا حَيثُ شِئتُما وَلا تَقرَبا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكونا مِنَ الظّالِمينَ
আয়াত-৩৫: আর আমি বললাম: হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেশ̖তে বসবাস করতে থাক এবং সেখানে যা, যেভাবে, যেখান থেকে চাও, তৃপ্তিসহকারে খাও, কিন্তু এ গাছের কাছেও যেও না। গেলে, তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।
36
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيطانُ عَنها فَأَخرَجَهُما مِمّا كانا فيهِ ۖ وَقُلنَا اهبِطوا بَعضُكُم لِبَعضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُم فِي الأَرضِ مُستَقَرٌّ وَمَتاعٌ إِلىٰ حينٍ
আয়াত-৩৬: কিন্তু শয়তান তাদের উভয়কে সেখান থেকে পদস্খলিত করল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদের বের করে দিল। আর আমি বললাম: তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু, তোমাদের জন্য রইল পৃথিবীতে কিছু কালের অবস্থান ও জীবিকা।
37
فَتَلَقّىٰ آدَمُ مِن رَبِّهِ كَلِماتٍ فَتابَ عَلَيهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوّابُ الرَّحيمُ
আয়াত-৩৭: তারপর আদম তার পালনকর্তার কাছ থেকে কিছু বাণী শিখে নিল। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হলেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
38
قُلنَا اهبِطوا مِنها جَميعًا ۖ فَإِمّا يَأتِيَنَّكُم مِنّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدايَ فَلا خَوفٌ عَلَيهِم وَلا هُم يَحزَنونَ
আয়াত-৩৮: আমি বললামঃ তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হেদায়াত আসবে তখন যারা আমার হেদায়াত অনুসারে চলবে তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না।
39
وَالَّذينَ كَفَروا وَكَذَّبوا بِآياتِنا أُولٰئِكَ أَصحابُ النّارِ ۖ هُم فيها خالِدونَ
আয়াত-৩৯: আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করে তারাই হবে জাহান্নামী, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।
40
يا بَني إِسرائيلَ اذكُروا نِعمَتِيَ الَّتي أَنعَمتُ عَلَيكُم وَأَوفوا بِعَهدي أوفِ بِعَهدِكُم وَإِيّايَ فَارهَبونِ
আয়াত–৪০: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং পূর্ণ কর আমার সংগে কৃত তোমাদের অঙ্গীকার, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর।
41
وَآمِنوا بِما أَنزَلتُ مُصَدِّقًا لِما مَعَكُم وَلا تَكونوا أَوَّلَ كافِرٍ بِهِ ۖ وَلا تَشتَروا بِآياتي ثَمَنًا قَليلًا وَإِيّايَ فَاتَّقونِ
আয়াত-৪১: আর তোমরা ঈমান আন তাতে, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, তা তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারী। আর তোমরাই তার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ কর না। আর তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর।
42
وَلا تَلبِسُوا الحَقَّ بِالباطِلِ وَتَكتُمُوا الحَقَّ وَأَنتُم تَعلَمونَ
আয়াত-৪২: তোমরা মিশিয়ে দিও না সত্যকে মিথ্যার সাথে এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কর না।
43
وَأَقيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكاةَ وَاركَعوا مَعَ الرّاكِعينَ
আয়াত-৪৩: আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং সালাতে অবনত হও তাদের সংগে যারা অবনত হয়।
44
أَتَأمُرونَ النّاسَ بِالبِرِّ وَتَنسَونَ أَنفُسَكُم وَأَنتُم تَتلونَ الكِتابَ ۚ أَفَلا تَعقِلونَ
আয়াত-৪৪: তোমরা কি মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেদের ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর। তবে কি তোমাদের জ্ঞান নেই?
45
وَاستَعينوا بِالصَّبرِ وَالصَّلاةِ ۚ وَإِنَّها لَكَبيرَةٌ إِلّا عَلَى الخاشِعينَ
আয়াত-৪৫: তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে। অবশ্য তা অত্যন্ত কঠিন, তবে সেসব বিনীত লোকদের ব্যতিরেকে___
46
الَّذينَ يَظُنّونَ أَنَّهُم مُلاقو رَبِّهِم وَأَنَّهُم إِلَيهِ راجِعونَ
আয়াত-৪৬: যারা বিশ্বাস করে যে, নিশ্চিতভাবে তাদের স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখীন হতে হবে এবং তারই দিকে তাদের ফিরে যেতে হবে।
47
يا بَني إِسرائيلَ اذكُروا نِعمَتِيَ الَّتي أَنعَمتُ عَلَيكُم وَأَنّي فَضَّلتُكُم عَلَى العالَمينَ
আয়াত-৪৭: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং আমিই তোমাদের উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলাম সমগ্র বিশ্বের উপর।
48
وَاتَّقوا يَومًا لا تَجزي نَفسٌ عَن نَفسٍ شَيئًا وَلا يُقبَلُ مِنها شَفاعَةٌ وَلا يُؤخَذُ مِنها عَدلٌ وَلا هُم يُنصَرونَ
আয়াত-৪৮: আর ভয় কর সেদিনকে যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না এবং কারো পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল করা হবে না এবং কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও গৃহীত হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
49
وَإِذ نَجَّيناكُم مِن آلِ فِرعَونَ يَسومونَكُم سوءَ العَذابِ يُذَبِّحونَ أَبناءَكُم وَيَستَحيونَ نِساءَكُم ۚ وَفي ذٰلِكُم بَلاءٌ مِن رَبِّكُم عَظيمٌ
আয়াত-৪৯: আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম ফেরআউনের লোকদের হাত থেকে যারা তোমাদের কঠিন শাস্তি দিত, তোমাদের তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা ছিল।
50
وَإِذ فَرَقنا بِكُمُ البَحرَ فَأَنجَيناكُم وَأَغرَقنا آلَ فِرعَونَ وَأَنتُم تَنظُرونَ
আয়াত-৫০: আর স্মরণ কর, যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলাম এবং তোমাদের উদ্ধার করেছিলাম ও ফেরআউনের লোকদের ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
- Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা (আয়াত: ১-২৫)
Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ১-২৫)
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
1. الم
আয়াত-১: আলিফ̖-লাম-মীম।
2.ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
আয়াত-২: আল-কোরআন সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, এতে রয়েছে মোত্তাকীদের জন্য পথের দিশা।
3. الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
আয়াত-৩: মোত্তাকী তারা, যারা গায়েবে ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রুযী দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
4. وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ 4.يُوقِنُونَ
আয়াত-৪: আর যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে এবং আপনার পূর্ববতীদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে। আর তারা আখেরাতের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
5. أُولَـٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
আয়াত-৫: তারাই রয়েছে হেদায়াতের উপর তাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এবং তারাই প্রকৃত সফলকাম।
6. إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
আয়াত-৬: নিশ্চয় যারা কাফের হয়েছে, তাদের আপনি ভয় দেখান বা না দেখান, উভয়ই তাদের জন্য সমান, তারা ঈমান আনবে না।
7. خَتَمَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আয়াত – ৭: মোহর মেরে দিয়েছেন আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর এবং তাদের কানের উপর, তাদের চোখের উপর রয়েছে পর্দা, আর তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।
8. وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
আয়াত-৮: আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন লোকও আছে যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি’; কিন্তু আসলে তারা ঈমানদার নয়।
9. يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
আয়াত-৯: তারা ধোঁকা দিতে চায় আল্লাহ এবং ঈমানদারদের। অথচ তারা যে নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না তা তারা বুঝতে পারে না।
10. فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
আয়াত-১০: তাদের অন্তরে রয়েছে রোগ। তারপর আল্লাহ তাদের রোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কেননা তারা মিথ্যা বলত।
11. وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ
আয়াত-১১: আর যখন তাদের বলা হয় যে, দুনিয়ায় তোমরা ফাসাদ সৃষ্টি করনা, তখন তারা বলে, আমরা তো কেবল শান্তি স্থাপনকারী।
12. أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـٰكِن لَّا يَشْعُرُونَ
আয়াত-১২: সাবধান তারাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।
13. وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَـٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
আয়াত-১৩: আর যখন তাদের বলা হয়, অন্যান্য লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন; তখন তারা বলে, ‘আমরা কি সেরূপ ঈমান আনব যেরূপ ঈমান এনেছে বোকারা?’ সাবধান! তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারছে না।
14. وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
আয়াত-১৪: আর যখন তারা ঈমানদারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তারা একান্তে তাদের শয়তানদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা তো শুধু ঈমানদারগণের সঙ্গে তামাশা করে থাকি।
15. اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
আয়াত-১৫: আল্লাহ̖ই তামাশা করছেন তাদের সাথে। আর তাদের তিনি অবকাশ দিয়েছেন, ফলে তারা নিজেদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
16. أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
আয়াত-১৬: এরাই সেসব লোক, যারা হেদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী ক্রয় করেছে। অতএব তাদের এ ব্যবসা লাভজনক হয়নি। আর তারা সঠিক পথেও পরিচালিত নয়।
17. مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ
আয়াত-১৭: তাদের অবস্থা ঐ লোকের মত যে কোথাও আগুন জ্বালাল, পরে যখন আগুন তার চারদিকের সবকিছু আলোকিত করল, তখন আল্লাহ তাদের আলো নিয়ে গেলেন এবং তাদের ছেড়ে দিলেন ঘোর অন্ধকারে, ফলে তারা কিছুই দেখতে পায় না।
18. صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
আয়াত-১৮: তারা বধির, মূক ও অন্ধ। কাজেই তারা ফিরে আসবে না।
19. أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ ۚ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ
আয়াত-১৯: অথবা তাদের অবস্থা সেসব পথিকের ন্যায়, যারা আকাশ থেকে মুষলধারে বর্ষিত বৃষ্টিতে পথ চলে, যাতে থাকে ঘোর অন্ধকার, বজধ্বনি ও বিদ্যু চমক। মৃত্যুর ভয়ে তারা বজগর্জনের সময় নিজেদের আঙ্গুল কানে গুজে দেয়। আর আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রেখেছেন কাফেরদের।
20. يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
আয়াত-২০: বিদ্যুতের চমক এমন যে, মনে হয় যেন তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়ে যায়, যখনই বিদ্যু তাদের জন্য আলো বিচ্ছুরিত করে তখনই তারা সে আলোতে চলতে থাকে, আবার যখন অন্ধকার তাদের ঢেকে ফেলে তখন তারা থমকে দাড়ায়। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তাহলে ছিনিয়ে নিতেন তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি। অবশ্যই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
21. يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
আয়াত-২১: হে মানুষ! তোমর ইবাদত কুর তোমাদের পালনকর্তার যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকেও। আশা করা যায় তোমরা মোত্তাকী হতে পারবে।
22. الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
আয়াত-২২: তিনি সেই পালনকর্তা যিনি তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদস্বরূপ করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেন। অতএব, তোমরা জেনে-বুঝে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় কর না।
23. وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
আয়াত-২৩: আর যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ কর তাতে যা আমি নাযিল করেছি আমার বান্দার প্রতি, তাহলে তোমরা এর মত একটি সূরা নিয়ে এস। ডেকে নাও তোমাদের সাহায্যকারীদেরও এক আল্লাহ ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
24. فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
আয়াত-২৪: আর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং কখনও তা করতে পারবে না, তাহলে সে আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
25. وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَـٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আয়াত-২৫: শুভ সংবাদ দিন তাদের যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে যে, তাদের জন্য রয়েছে এমন বেহেশত̖ যার পাদদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। যখনই তাদের সেখানে কোন ফল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, এ তো অবিকল তা-ই যা ইতিপূর্বে আমাদের দেয়া হত। বস্তুত সাদৃশ্যপূর্ণ ফলই তাদের দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সঙ্গিনী। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।
- Al-Fatihah
- Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা (26-50)