An-Nisa (51-100)

Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা

(আয়াত: ৫১-১০০)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

আয়াত-৫১ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যাদের দেয়া হয়েছিল কিতাবের এক অংশ, তারা ঈমান রাখে জিবত ও তাগূতে এবং তারা কাফেরদের সন্মন্ধে বলেঃ এরাই মু’মিনদের চেয়ে অধিকতর সরল-সঠিক পথে রয়েছে।

আয়াত-৫২ঃ এরা সেসব লোক আল্লাহ যাদের লা’নত করেছেন, আর আল্লাহ্ যাকে লা’নত করেন তুমি কখনও তার জন্য সাহায্যকারী পবে না। 

আয়াত-৫৩ঃ তবে কি তাদের কাছে রাজত্বের কোন অংশ আছে? তাহলে সে অবস্থায় তারা লোকদের তিল পরিমাণও দেবে না।

আয়াত-৫৪ঃ অথবা তারা কি মানুষকে ঈর্ষা করে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন সেজন্য? আর আমি তো ইবরাহীমের বংশধরকেও কিতাব ও হেকমত দিয়েছিলাম এবং সুবিশাল রাজ্যও তাদের দিয়েছিলাম।

আয়াত-৫৫ঃ তারপর তাদের কতক তাতে ঈমান এনেছে এবং কতক তা থেকে দূরে সরে রয়েছে। জ্বালাবার জন্য দোযখই যথেষ্ট।

আয়াত-৫৬ঃ নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে, অবশ্যই আমি তাদের আগুনে জ্বালাব; যখনই তাদের চামড়া জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখনই তা আমি পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা শাস্তি আস্বাদন করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-৫৭ঃ আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে অবশ্যই আমি দাখিল করব তাদের জান্নাতে যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। তাদের জন্য সেখানে রয়েছে পূত-পবিত্র স্ত্রীগণ। আর আমি তাদের দাখিল করব চির স্নিগ্ধ ছায়ায়।

আয়াত-৫৮ঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত পৌঁছে দাও তার প্রাপকদের কাছে। আর যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক বিচার করবে। আল্লাহ যে উপদেশ তোমাদের দেন তা কত উত্তম! নিশ্চয় আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন।

আয়াত-৫৯ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ফয়সালার অধিকারী। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা প্রত্যর্পণ কর আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি-যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে কল্যাণকর।

আয়াত-৬০ঃ আপনি কি তাদের দেখেননি যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাসী? অথচ তারা বিচারপ্রার্থী হতে চায় তাগুতের কাছে, যদিও তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করতে। আর শয়তান তাদের পথভ্রষ্ট করে বহু দূরে নিয়ে যেতে চায়।

আয়াত-৬১ঃ আর যখন তাদের বলা হয়, এস আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন আপনি মোনাফেকদের দেখবেন আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে সরে যাচ্ছে।

আয়াত-৬২ঃ তাদের কি দশা হবে যখন তাদের কৃতকর্মের দরুন তাদের উপর কোন মসিবত আপতিত হবে? তারপর তারা আপনার কাছে এসে আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে। আমরা তো কল্যাণ ও সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কিছু চাইনি।

আয়াত-৬৩ঃ তারা এমন লোক যাদের অন্তরের বিষয়ে আল্লাহ জানেন। সুতরাং আপনি তাদের উপেক্ষা করুন এবং তাদের সদুপদেশ দিন আর এমন কথা তাদের বলুন যা তাদের মর্ম স্পর্শ করে।

আয়াত-৬৪ঃ আমি তো রাসূল শুধু এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে। আর যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার কাছে আসত, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তবে নিশ্চয় তারা আল্লাহকে অতিশয় তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু পেত।

আয়াত-৬৫ঃ তবে না; আপনার রবের কসম! তারা মু’মিন হবে না যে পর্যন্ত না তারা আপনার উপর বিচারের ভার অর্পণ করে সেসব বিবাদ-বিসম্বাদের যা তাদের মধ্যে সংঘটিত হয়, তারপর তারা নিজেদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ না করে আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।

আয়াত-৬৬ঃ আর যদি আমি তাদের প্রতি ফরয করে দিতাম যে, তোমরা নিজেদের হত্যা কর অথবা নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তাদের কয়েকজন ছাড়া কেউই তা করত না। আর যদি তারা তা করত যা করতে তাদের উপদেশ দেয়া হয় তবে তা তাদের জন্য উত্তম হত এবং ঈমানকে দৃঢ়তর করত।

আয়াত-৬৭ঃ এবং এ অবস্থায় আমি অবশ্যই নিজের তরফ থেকে তাদের মহান প্রতিদান প্রদান করতাম;

আয়াত-৬৮ঃ এবং নিশ্চয়ই আমি তাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করতাম।

আয়াত-৬৯ঃ আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে আল্লাহ ও রাসূলের, এরূপ ব্যক্তিরা সে ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন: নবী, সিদীক, শহীদ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ। আর কত উত্তম সঙ্গী এরা।

আয়াত-৭০ঃ এটা হল আল্লাহর অনুগ্রহ। আর জ্ঞানে আল্লাহই যথেষ্ট।

আয়াত-৭১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর এবং তারপর বেরিয়ে পড় দলে দলে বিভক্ত হয়ে অথবা অগ্রসর হও একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে।

আয়াত-৭২ঃ আর তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গড়িমসি করবেই; আর তোমাদের উপর কোন মসিবত আপতিত হলে বলবেঃ অবশ্যই আল্লাহ্ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, কেননা আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না।

আয়াত-৭৩ঃ আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর তরফ থেকে কোন অনুগ্রগহ আসে তখন এমনভাবে বলতে শুরু করবে যেন তোমাদের ও তাদের মধ্যে কোন মিত্রতাই ছিল না: “হায়! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম তাহলে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।”

আয়াত-৭৪ঃ সুতরাং তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে যারা আখেরাতের এ বিনিময়ে পার্থিব জীবন বিক্রি করে দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, তারপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক, অবশ্যই আমি তাকে দান করব মহাপুরস্কার।

আয়াত-৭৫ঃ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করছ না আল্লাহর পথে এবং সেসব অসহায়-দুর্বল নর-নারী ও শিশুদের জন্য যারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক। এ জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও, এখানকার অধিবাসীরা ভয়ানক অত্যাচারী? আর তোমার তরফ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার তরফ থেকে কাউকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী করে দাও।

আয়াত-৭৬ঃ যারা ঈমান এনেছে তারা তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কুফরী করেছে তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা যুদ্ধ কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। শয়তানের কৌশল তো নিতান্তই দুর্বল।  

আয়াত-৭৭ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যাদের বলা হয়েছিলঃ তোমরা নিজেদের হাত সংবরণ কর, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও? তারপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হল, তখন তাদের মধ্যে একদল লোকদের এরূপ ভয় করতে লাগল যেমন কেউ আল্লাহকে ভয় করে অথবা তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল? হে আমাদের রব কেন আমাদের উপর যুদ্ধের বিধান দিলে? যদি আমাদের আরও কিছু সময় অবকাশ দিতে? বলুনঃ পার্থিব ভোগ-বিলাস সামান্য আর আখেরাত উত্তম তার জন্য যে মোত্তাকী। আর তোমাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।

আয়াত-৭৮ঃ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও থাক। আর যদি তাদের কোন মঙ্গল হয় তবে তারা বলেঃ “এটা আল্লাহর তরফ থেকে।” আর যদি তাদের কোন অমঙ্গল হয় তবে তার বলেঃ “এটা তোমার পক্ষ থেকে” বলে দিনঃ “এসবই আল্লাহর তরফ থেকে।” তবে এসব লোকের কি হল যে, এর কোন কথা বুঝার কাছেও যায় না।

আয়াত-৭৯ঃ আপনার প্রতি যে মঙ্গল আসে তা তো আল্লাহর তরফ থেকে আসে এবং যে অমঙ্গল আপনার হয় তা তো আপনারই কারণে হয়। আর আপনাকে তো আমি পাঠিয়েছি মানুষের জন্য রাসূলরুপে। সাক্ষ্য হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।

আয়াত-৮০ঃ যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে তো আল্লাহ̖রই আনুগত্য করল। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তো আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠাইনি।

আয়াত-৮১ঃ আর তারা বলে: আনুগত্য আমাদের কাজ। তারপর যখন তারা মুখে বলেছিল তার বিপরীতে আর আল্লাহ লিখে রাখেন যা তারা রাতে পরামর্শ করে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি ভ্ৰক্ষেপ করবেন না এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা করুন। এ কার্যসম্পাদনকারী হিসেবে আল্লাহ̖ই যথেষ্ট।

আয়াত–৮২ঃ তবে কি তারা কোরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো তরফ থেকে এ কোরআন হত তবে তারা এতে অনেক বৈপরীত্য পেত।

আয়াত-৮৩ঃ আর যখন তাদের কাছে পৌছে কোন সংবাদ নিরাপত্তা কিংবা ভয় সংক্রান্ত, তখন তারা তা প্রচার করে দেয়। যদি তারা তা সোপর্দ করত রাসূলের কাছে, কিংবা তাদের মধ্যে যারা ফায়সালার অধিকারী তাদের কাছে, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের উপর যদি আল্লাহর এ অনুগ্রহ ও করুণা না থাকত, তাহলে অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা সবাই শয়তানের অনুগামী হয়ে যেতে।

আয়াত-৮৪ঃ অতএব আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন; আপনাকে শুধু আপনার এ নিজের কাজের জন্য দায়ী করা হবে; আর আপনি মুমিনদের উৎসাহিত করুন। অচিরেই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং কঠোর শাস্তিদাতা।

আয়াত-৮৫ঃ যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের সুপারিশ করবে তার জন্য তাতে অংশ থাকবে, আর কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতেও তার অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সতর্ক নজর রাখেন।

আয়াত-৮৬ঃ আর যখন তোমাদের সালাম করা হয় তখন তোমরাও উত্তর দেবে তার চেয়ে উত্তমরূপে অথবা তারই মত ফিরিয়ে বলবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।

আয়াত-৮৭ঃ আল্লাহ এমন যে, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। অবশ্যই তিনি কেয়ামতের দিন তোমাদের একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কার কথা আল্লাহর কথার চেয়ে অধিক সত্য?

আয়াত-৮৮ঃ তোমাদের কি হল যে, তোমরা মোনাফেকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের কৃতকর্মের দরুন তোমরা কি তাকে হেদায়াত করতে চাও যাকে আল্লাহ গোমরাহীর মধ্যে রেখেছেন? আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন তুমি কখনও তার জন্য কোন পথ পাবে না।

আয়াত-৮৯ঃ তারা কামনা করে যেন তোমরা কুফরী কর যেমন তারা কুফরী করেছে, যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, যে পর্যন্ত তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে না আসে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তাদের পাকড়াও কর এবং হত্যা কর যেখানেই তাদের পাও, এবং তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ কর না,

আয়াত-৯০ঃ কিন্তু তাদের নয় যারা এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয়েছে, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি আছে; অথবা যারা তোমাদের কাছে এমন অবস্থায় আসে যে, তাদের মন তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অথবা তাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সংকুচিত হয়। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদের প্রবল করে দিতেন; ফলে অবশ্যই তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব দেয় তবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখেননি।

আয়াত-৯১ঃ তোমরা এ ছাড়া এমন কিছু লোকও পাবে যারা তোমাদের থেকেও নিরাপদ থাকতে চায় এবং নিজেদের কওমের থেকেও নিরাপদ থাকতে চায়। যখনই তাদের ফিতনার দিকে আকর্ষণ করা হয় তখনই তারা তাতে ঝাপিয়ে পড়ে। অতএব তারা যদি তোমাদের কাছ থেকে সরে না যায়, তোমাদের কাছে শান্তি প্রস্তাব না দেয় এবং নিজেদের হস্ত সংবরণ না করে, তবে তাদের পাকড়াও করবে এবং হত্যা করবে যেখানেই তাদের পাবে। আর আমি তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রমাণ প্রদান করেছি।

আয়াত-৯২ঃ ভুলক্রমে ছাড়া স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়। কেউ কোন মুমিনকে ভুলক্রমে হত্যা করলে সে একজন মু’মিন দাস মুক্ত করবে এবং তার স্বজনদের রক্ত-বিনিময় অর্পণ করবে, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শক্র পক্ষের লোক হয় এবং মু’মিন হয় তবে একজন মু’মিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি সে এমন এক কওমের লোক হয় যার সাথে তোমাদের চুক্তি আছে তবে তার স্বজনদের রক্তবিনিময় অর্পণ করবে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। কিন্তু যার সংগতি নেই সে একাদিক্ৰমে দু’মাস রোজা রাখবে। এটা হল আল্লাহর তরফ থেকে তওবারূপে নির্ধারিত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-৯৩ঃ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবেন, স্বীয় করুণা থেকে তাকে দূরে রাখবেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।

আয়াত-৯৪ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে বের হবে তখন যাচাই করে নিবে এবং কেউ তোমাদের সালাম করলে তাকে বল নাঃ “তুমি তো মুমিন নও”। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুত আল্লাহর কাছে আছে প্রচুর সম্পদ। তোমরা তো ইতিপূর্বে এমনি ছিলে, তারপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং তোমরা যাচাই করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।

আয়াত-৯৫ঃ সমান নয় সেসব মু’মিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মু’মিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে। যারা স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের উপর যারা ঘরে বসে থাকে। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে মহান পুরস্কারে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপরে।

আয়াত-৯৬ঃ এসব তাঁর তরফ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আয়াত-৯৭ঃ নিশ্চয় যারা নিজেদের উপর জুলুম করে, ফেরেশতারা তাদের জান কবজের সময় বলবেঃ “তোমরা কি অবস্থায় ছিলে?” তারা বলবেঃ “আমরা দুনিয়ায় অসহায় অবস্থায় ছিলাম।” ফেরেশতারা বলবেঃ “আল্লাহর দুনিয়া কি এমন প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা সেখানে হিজরত করে চলে যেতে?” অতএব এদেরই ঠিকানা হল জাহান্নাম। আর কতই মন্দ এ ঠিকানা?

আয়াত-৯৮ঃ তবে সেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু যারা কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন পথেরও সন্ধান জানে না?

আয়াত-৯৯ঃ এদের ব্যাপারে আশা করা যায় যে, আল্লাহ্ এদের মাফ করবেন। কারণ আল্লাহ্ অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।

আয়াত-১০০ঃ যে কেউ আল্লাহর পথে হিজরত করবে সে দুনিয়ায় বহু আশ্রয়স্থল ও প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য, তারপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার প্রতিদান অবধারিত হয়ে আছে আল্লাহ̖র কাছে। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

An-Nisa (1-50)

Surah An-Nisa / সূরা আন নিসা

(আয়াত: ১-৫০)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

আয়াত–১ঃ হে মানব! তোমরা ভয় কর তোমাদের রবকে, যিনি পয়দা করেছেন তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে এবং যিনি পয়দা করেছেন তার থেকে তার জোড়া, আর ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দু’জন থেকে অনেক নর ও নারী। আর তোমরা ভয় কর। আল্লাহকে যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাঞ্ছা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

আয়াত-২ঃ আর দিয়ে দাও এতিমদের তাদের সম্পদ এবং বদল কর না খারাপ মালের সাথে ভাল মালের। আর গ্রাস কর না তাদের মাল তোমাদের মালের সাথে মিশিয়ে নিশ্চয় এরূপ করা গুরুতর পাপ।

আয়াত-৩ঃ আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের ব্যাপারে সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করে নাও অন্য নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের মনঃপুত হয়- দুই, তিন কিংবা চারজন পর্যন্ত। কিন্তু যদি আশংকা কর যে, তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের স্বত্বাধীন ক্রীতদাসীকে। এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।

আয়াত-৪ঃ আর তোমরা দিয়ে দাও স্ত্রীদের তাদের মহর সন্তুষ্টচিত্তে; তবে তারা খুশী হয়ে মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তা তোমরা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে ভোগ কর।

আয়াত-৫ঃ আর তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের ঐ সম্পদ যা আল্লাহ তোমাদের জীবন নির্বাহের অবলম্বন করেছেন; বরং তা থেকে তাদের খাওয়াও, পরাও এবং শুনাও তাদের সান্তনার বাণী।

আয়াত-৬ঃ আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করে নেবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌছে। যদি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পাও, তবে তাদের মাল তাদের হাতে ফিরিয়ে দেবে। এতিমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ কর না এবং তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেল না। যে স্বচ্ছল সে যেন এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। যখন তোমরা তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করবে, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য হিসাব গ্রহণে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

আয়াত-৭ঃ পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশি। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।

আয়াত-৮ঃ আর যদি সম্পত্তি বণ্টনকালে (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয় এতিম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তবে তা থেকে তাদের কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।

আয়াত-৯ঃ আর তারা যেন ভয় করে যে, যদি তারা তাদের পেছনে দুর্বল অসহায় সন্তানদের ছেড়ে যেত, তবে তারাও তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সাথে যথোপযোগী কথা বলে।

আয়াত-১0ঃ নিশ্চয় যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা তো শুধু তাদের পেটে আগুন ভর্তি করছে; আর তারা সত্বরই দোযখের আগুনে জ্বলবে।

আয়াত-১১: আল্লাহ্ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদের আদেশ করেন; এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। তবে যদি শুধু কন্যা থাকে দু’জনের অধিক তাহলে তাদের জন্য ছেড়ে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি কন্যা একজন থাকে তবে তার জন্য অর্ধেক। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে। যদি সে নিঃসন্তান হয় এবং তার পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তাহলে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ; কিন্তু যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। এসবই মৃত ব্যক্তির যে অসিয়ত করে গেছে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। তোমাদের পিতা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারে কারা তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জান না। এ ব্যবস্থা আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-১২ঃ আর তোমরা পাবে অর্ধেক তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমরা তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তোমাদের সন্তান না থাকে। তবে তোমাদের সন্তান থাকলে তারা পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারী মারা যায় এ অবস্থায় যে, তারা এক বৈপিত্রেয় ভাই কিংবা এক বৈপিত্রেয় বোন তার উত্তরাধিকারী, তবে তারা প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তারা যদি এর অধিক হয় তবে সবাই তিন ভাগের এক ভাগে সম অংশীদার হবে। এটা হবে যে অসিয়ত করা হয় তা পালন করার এবং ঋণ পরিশোধ করার পর; অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়। এ হল আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।

আয়াত-১৩ঃ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলে তিনি তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।

আয়াত-১৪ঃ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দোযখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

আয়াত-১৫ঃ তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করবে, যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে ব্যভিচারিণীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখবে যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।

আয়াত-১৬ঃ তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এ কুকর্মে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি দেবে; তবে যদি তারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদের রেহাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহা তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

আয়াত-১৭ঃ অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে ফেলে, তারপর অবিলম্বে তওবা করে; এরূপ লোকের তওবাই আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়াল।

আয়াত-১৮ঃ আর তওবা তাদের জন্য নয় যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে; আমি এখন তওবা করছি; আর তাদের জন্যও নয় যারা মারা যায় কাফের অবস্থায়। এরূপ লোকদের জন্যই আমি প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আয়াত–১৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য হালাল নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে, কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে। তারপর তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, তোমরা এরূপ জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।

আয়াত-২০ঃ আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছে কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ কর না। তোমরা কি তা গ্রহণ করবে মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে?

আয়াত-২১ঃ কিরূপে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা একে অপরের সাথে সংগত হয়েছ এবং সে নারীরা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছে?

আয়াত-২২ঃ তোমরা বিয়ে কর না সে নারীদের যাদের বিয়ে করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষরা, তবে যা পূর্বে গত হয়েছে তা গত হয়েছে। নিশ্চয় এটা নিতান্ত অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ।

আয়াত-২৩ঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের ভগিনী, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগিনী কন্যা, দুধমাতা, দুধবোন, শাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে সহবাস করে থাক। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তাহলে কোন অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা। পূর্বে যা গত হয়েছে, তা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আয়াত-২৪ঃ সকল সধবা নারীকে তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, কিন্তু তোমাদের স্বত্বাধীন যেসব দাসী রয়েছে তাদের হারাম করা হয়নি। এ হল তোমাদের জন্য আল্লাহর বিধান। এদের ছাড়া অন্য সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদের কামনা করবে অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য ব্যভিচারের জন্য নয়। বিয়ের মাধ্যমে যে নারীদের তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের দিয়ে দেবে তাদের নির্ধারিত মহর। আর তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি মহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-২৫ঃ আর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বাধীন মুসলমান নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না রাখে, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ে করবে। আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে ভাল জানেন। তোমরা পরস্পর এক-অভিন্ন। সুতরাং তোমরা তাদের বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের মহর তাদের দিয়ে দেবে, এই হিসেবে যে, তারা বিবাহিতা স্ত্রী; এই হিসেবে নয় যে, তারা ব্যভিচারিণী ও উপ-পতি গ্রহণকারিণী। যদি বিবাহিতা হওয়ার পর তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক। এই ব্যবস্থা (দাসীকে বিয়ে করা) তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করে। তবে ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আয়াত-২৬ঃ আর আল্লাহ্ চান তোমাদের জন্য সবকিছু বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদের অবহিত করতে এবং তোমাদের ক্ষমা করতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-২৭ঃ আর আল্লাহ্ তো চান তোমাদের ক্ষমা করতে কিন্তু যারা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথ থেকে দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।

আয়াত-২৮ঃ আল্লাহ চান তোমাদের বোঝা হালকা করতে কারণ মানুষ তো সৃষ্ট হয়েছে দুর্বল।

আয়াত-২৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেল না। তবে ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য যা তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয় তা বৈধ। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কর না। অবশ্যই আল্লাহ হলেন তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

আয়াত-৩০ঃ আর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে এরূপ করবে, তাকে আমি সত্বরই আগুনে জ্বালাব। এ কাজ আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।

আয়াত-৩১ঃ যদি তোমরা দূরে থাকতে পার সেসব বড় গুনাহ থেকে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো মার্জনা করে দেব এবং দাখিল করব তোমাদের এক সম্মানজনক স্থানে।

আয়াত-৩২ঃ আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর না এমন কিছুর যাতে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে কারো উপর। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ। আর প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

আয়াত-৩৩ঃ আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি সে সম্পত্তির যা ছেড়ে যায় পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের দিয়ে দাও তাদের প্রাপ্য অংশ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।

আয়াত-৩৪ঃ পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, কারণ আল্লাহ্ তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত হয় এবং লোক চক্ষুর অন্তরালে তার হিফাযত করে আল্লাহর হিফাযত অনুসারে। স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের একাকিনী ত্যাগ কর তাদের শয্যায়, শেষে তাদের প্রহার কর। এতে যদি তারা তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের ব্যাপারে অন্য কোন পথ তালাশ কর না। নিশ্চয় আল্লাহ্ উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান।

আয়াত-৩৫ঃ যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে; তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।

আয়াত-৩৬ঃ আর তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর এবং শরীক সাব্যস্ত কর না তাঁর সাথে কোন কিছুকে। আর সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতার সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, এতিমদের সাথে, মিসকীনদের সাথে, নিকট-প্রতিবেশী ও দূর-প্রতিবেশীর সাথে, সঙ্গী-সাথী ও পথচারীর সাথে এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে__

আয়াত-৩৭ঃ যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্য মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয় আর তারা গোপন করে তা যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে। আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অপমানজনক আযাব;

আয়াত-৩৮ঃ এবং যারা ব্যয় করে তাদের মাল লোক দেখানোর জন্য এবং ঈমান রাখে না আল্লাহর প্রতি, আর না শেষ দিনের প্রতি। আর শয়তান যার সঙ্গী হয় সে কতইনা নিকৃষ্ট সঙ্গী!

আয়াত-৩৯ঃ আর তাদের কি-ই বা ক্ষতি হত যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর ও শেষ দিনের উপর এবং যদি তারা ব্যয় করত আল্লাহ তাদের যা দিয়েছেন তা থেকে! আল্লাহ্ তাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত।

আয়াত-৪০ঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ জুলুম করেন না এক রেণু পরিমাণও, আর যদি হয় কোন পুণ্য কাজ তবে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার দান করেন।

আয়াত-৪১ঃ আর তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি উপস্থিত করব প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী এবং আপনাকে তাদের উপর উপস্থিত করব সাক্ষীরূপে?

আয়াত-৪২ঃ যারা কুফরী করেছিল এবং রাসূলের নাফরমানী করেছিল, সেদিন তারা কামনা করবে যদি মাটির সাথে তারা মিশে যেত! তারা কোন কথাই আল্লাহর থেকে গোপন করতে পারবে না।

আয়াত-৪৩ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় নামাযের এ কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্ৰাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও__মসেহ করবে স্বীয় মুখমণ্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।

আয়াত-৪৪ঃ তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদের দেয়া হয়েছে কিতাবের এক অংশ? অথচ তারা গোমরাহীকে ক্রয় করে এবং কামনা করে যেন তোমরাও পথভ্রষ্ট হও।

আয়াত-৪৫ঃ আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদের খুব ভালভাবেই জানেন। অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।

আয়াত-৪৬ঃ ইহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথার প্রকৃত অর্থ বিকৃত করে এবং বলেঃ আমরা শুনলাম কিন্তু অমান্য করলাম! তারা আরো বলেঃ শোন, না শোনার মত। আর মুখ বাঁকিয়ে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করে বলেঃ রা’য়েনা (আমাদের রাখাল)। কিন্তু তারা যদি বলতঃ “আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম;” এবং যদি তারা বলতঃ “শোন এবং আমাদের প্রতি লক্ষ্য রেখ,” তবে তা-ই তাদের জন্য উত্তম ও সংগত হত। কিন্তু আল্লাহ তাদের কুফরীর জন্য তাদের লা’নত করেছেন। তাই তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।

আয়াত-৪৭ঃ ওহে আহলে কিতাব! তোমরা ঈমান আন তাতে যা আমি নাযিল করেছি এ অবস্থায় যে, তা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারী, এর পূর্বে যে, আমি বিকৃত করে দেব চেহারাসমূহ, তারপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পেছনের দিকে, অথবা তাদের লা’নত করব যেরুপ লা’নত করেছিলাম আসহাবুস সাবতকে। আর আল্লাহর নির্দেশ সুসম্পন্ন হয়েই থাকে।

আয়াত-৪৮ঃ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ; তবে তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হয়।

আয়াত-৪৯ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যারা নিজেদের পূত-পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহই পবিত্র করেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন। আর তাদের উপর বিন্দু পরিমাণও অন্যায় করা হবে না।

আয়াত-৫০ঃ লক্ষ্য কর, তারা কেমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে আল্লাহর প্রতি; এবং স্পষ্ট পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।

 

Surah Ali ‘Imran (151-200)

Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান

(আয়াত: ১৫১-২০০)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

আয়াত-১৫১ঃ অতি সত্ত্বর আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব, কেননা তারা আল্লাহর এমন শরীক সাব্যস্ত করেছে যার সপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। আর তাদের ঠিকানা হল দোযখ কত নিকৃষ্ট জালিমদের আবাসস্থল।

আয়াত-১৫২ঃ আর আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন যখন তোমরা কাফেরদের খতম করছিলে তাঁরই আদেশে। তারপর তোমরা সাহস হারিয়ে ফেললে এবং পরস্পর মতবিরোধ করলে নির্দেশ পালনে, আর যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদের দেখাবার পরও তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের মাঝে কতক এরূপ ছিল যারা কামনা করছিল দুনিয়া এবং কতক কামনা করছিল আখেরাত। তারপর পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদের থেকে তোমাদের ফিরিয়ে দিলেন। বস্তুত তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহ তো মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।

আয়াত- ১৫৩ঃ স্মরণ কর, যখন তোমরা উপরের দিকে পালাচ্ছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো প্রতি তাকাচ্ছিলে না, অথচ রাসূল পেছন দিক থেকে তোমাদের ডাকছিলেন। ফলে তিনি তোমাদের দিলেন দুঃখের উপর দুঃখ, যাতে তোমরা দুঃখ না কর যা তোমরা হারিয়েছ তার জন্য, আর না সে বিপদের জন্য যা তোমাদের উপর আপতিত হয়েছে। আর আল্লাহ পূর্ণ অবহিত সে বিষয়ে যা তোমরা কর।

আয়াত-১৫৪ঃ তারপর তিনি তোমাদের উপর দুঃখের পর প্রশান্তি নাযিল করলেন তন্দ্রারূপে, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। আর একদল ছিল যাদের বিব্রত করে রেখেছিল তাদের প্রাণের চিন্তা, তারা আল্লাহর প্রতি জাহেলী যুগের ধারণার ন্যায় অবাস্তব ধারণা করেছিল। তারা বলছিলঃ এ ব্যাপারে আমাদের হাতে কি কিছু করার নেই? বলুনঃ নিশ্চয়, যাবতীয় বিষয় একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তারা নিজেদের মনে গোপন রাখে যা আপনার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলেঃ যদি আমাদের হাতে এ ব্যাপারে কিছু করার থাকত তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। বলুনঃ যদি তোমরা নিজেদের ঘরেও থাকতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল তারা বেরিয়ে পড়ত নিজেদের মৃত্যুর স্থানের দিকে। এসব এজন্য যে, আল্লাহ তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করবেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা নির্মল করবেন। মনের গোপন বিষয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

আয়াত-১৫৫ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তারা তো ছিল এমন, যাদের শয়তান পদস্খলন ঘটিয়েছিল তাদের কৃতকর্মের দরুন। অবশ্য আল্লাহ তাদের মাফ করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল।

আয়াত-১৫৬ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তাদের মত হয়ে না যারা কুফরী করেছে এবং নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে, যখন তারা পৃথিবীতে অভিযানে বের হয় কিংবা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়- তারা যদি আমাদের সাথে থাকত তবে মরতও না, নিহতও হত না। যেন আল্লাহ এটাকে তাদের অন্তরে পরিতাপের কারণ করে দেন। আল্লাহই জীবন দেন এবং প্রাণ সংহার করেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।

আয়াত-১৫৭ঃ আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মরে যাও, তবে আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমা ও রহমত তার চেয়ে শ্রেয় যা তারা জমা করে।

আয়াত-১৫৮ঃ আর যদি তোমরা মরে যাও অথবা নিহত হও, নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের একত্র করা হবে।

আয়াত-১৫৯ঃ আর আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত থাকার দরুন আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন; কিন্তু যদি আপনি কর্কশ স্বভাব ও কঠোর হৃদয় হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং আপনি তাদের মাফ করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আর কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন সংকল্প করেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন তার উপর ভরসাকারীদের।

আয়াত-১৬০ঃ যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে? আর শুধু আল্লাহরই উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।

আয়াত-১৬১ঃ কোন নবীর পক্ষে সম্ভব নয় কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখা। কেউ কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখলে সে তা কেয়ামতের দিন নিয়ে আসবে। তারপর প্রত্যেককে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে যা সে অর্জন করেছে এবং তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।

আয়াত-১৬২ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট তার আনুগত্য করে সে কি ঐ ব্যক্তির মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং যার আবাস জাহান্নাম? আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।

আয়াত-১৬৩ঃ আল্লাহ̖র কাছে মানুষ মর্যাদায় বিভিন্ন স্তরের। তারা যা করে আল্লাহ̖ তার সম্যক দ্রষ্টা।

আয়াত-১৬৪ঃ অবশ্যই আল্লাহ̖ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহর আয়াত তাদের পাঠ করে শুনান, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত; যদিও তারা পূর্বে প্রকাশ্য গোমরাহীতে ছিল।

আয়াত-১৬৫ঃ কি হল? যখন তোমাদের উপর এক বিপদ আপতিত হল, যার চেয়ে দ্বিগুণ বিপদ তোমরা ঘটিয়েছিলে, তখন তোমরা বললেঃ কোথা থেকে এল এ বিপদ? আপনি বলে দিন, এ বিপদ তোমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

আয়াত-১৬৬ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পর সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপদ আপতিত হয়েছিল তা আল্লাহরই ইচ্ছায় হয়েছিল। আর তা এজন্য যে, তিনি প্রকাশ করে দেবেন মু’মিনদের__

আয়াত-১৬৭ঃ এবং প্রকাশ করে দেবেন মোনাফেকদের। তাদের বলা হয়েছিলঃ এস তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শক্রদের প্রতিরোধ কর। তারা বলেছিলঃ যদি জানতাম যুদ্ধ হবে তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরন করতাম। সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর কাছাকাছি ছিল। তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ খুব ভালভাবে জানেন যা তারা গোপন রাখে।

আয়াত-১৬৮ঃ যারা ঘরে বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্পর্কে বলেঃ তারা আমাদের কথামত চললে নিহত হত না, তাদের আপনি বলে দিন; যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও।

আয়াত-১৬৯ঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না; বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত।

আয়াত-১৭০ঃ যারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

আয়াত-১৭১ঃ তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মুমিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।

আয়াত-১৭২ঃ আহত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়, তাদের মধ্যে যারা ভাল কাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

আয়াত-১৭৩ঃ তারা এমন মানুষ যে, লোকেরা তাদের বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্দে কাফেররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। একথা তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বললঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কাৰ্যনির্বাহক।

আয়াত-১৭৪ঃ তারপর তারা ফিরে এল আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে, কোন অমঙ্গলই তাদের স্পর্শ করেনি। আর আল্লাহ যাতে রাজি তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

আয়াত-১৭৫ঃ এ তো শয়তান ছাড়া আর কিছু নয়, সে তোমাদের ভয় দেখায় তার বন্ধুদের। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা প্রকৃত মু’মিন হও।

আয়াত-১৭৬ঃ আপনাকে যেন চিন্তা-ভাবনায় না ফেলে ঐ সকল লোক যারা কুফরীর দিকে ধাবিত হয়। তারা কখনও আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ চান যে আখেরাতে তাদের আদৌ কোন অংশ না দেন। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।

 আয়াত-১৭৭ঃ আর যারা ঈমাণের পরিবর্তে কুফরী ক্রয় করেছে তারা কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আয়াত-১৭৮ঃ কাফেররা যেন কখনও মনে না করে যে, আমি তাদের যে অবকাশ দেই তাতে তাদের জন্য কোন মঙ্গল রয়েছে; আমি তো অবকাশ দেই শুধু এজন্য যে, তাদের গুনাহ যেন আরো বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।

আয়াত-১৭৯ঃ আল্লাহ মু’মিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না, যে অবস্থায় তোমরা এখন আছ, যতক্ষণ পর্যন্ত না অপবিত্রকে পৃথক করেন পবিত্র থেকে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের গায়েবের সংবাদ দেবেন। তবে আল্লাহ তার রাসূলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলদের উপর। যদি তোমরা ঈমান আন এবং মোত্তাকী হও, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান।

আয়াত-১৮০ঃ যারা কৃপণতা করে তাতে যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে, তারা যেন মনে না করে যে এ কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক। ঐ মাল যাতে তারা কৃপণতা করেছিল, কেয়ামতের দিন তা দিয়ে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও জমিনের মালিকানা স্বত্ব একমাত্র আল্লাহর। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

আয়াত-১৮১ঃ নিশ্চয় আল্লহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলছে “আল্লাহ গরীব আর আমরা ধনী।” অবশ্যই আমি লিথে রাখব যা তারা বলেছে এবং তাদের নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা কারার বিষয়ও। আর আমি বলবঃ আস্বাদন কর জলন্ত আগুনের শাস্তি।

 আয়াত-১৮২ঃ এই হলো তোমাদের সেসব কাজের ফল যা তোমরা পূর্বে স্বহস্তে করেছিলে। বস্তুত আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।

আয়াত-১৮৩ঃ যারা বলেঃ আল্লাহ তো আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কোন রাসূলের প্রতি ঈমান না আনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমাদের কাছে এমন কোরবাণী নিয়ে আসবে যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে; আপনি তাদের বলে দিন তোমাদের কাছে বহু রাসূল এসেছিল আমার আগে স্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তোমরা যা আব্দার করছ তা নিয়ে, তবে কেন তাদের হত্যা করেছিলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক?

আয়াত-১৮৪ঃ যদি এরা আপনাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে, তবে আপনার পূর্বেও বহু রাসূলকে মিত্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যারা এসেছিল স্পষ্ট নিদর্শন, বহু সহীফা এবং উজ্জ্বল কিতাব নিয়ে।

আয়াত-১৮৫ঃ নিশ্চয় প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অবশ্যই কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল তোমরা পূর্ণমাত্রায় প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করান হবে, সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ক্ষণিকের ভোগ-সামগ্ৰী ছাড়া আর কিছু নয়।

আয়াত-১৮৬ঃ অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধন-সম্পদে এবং তোমাদের জন-সম্পদে। আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। তবে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।

আয়াত-১৮৭ঃ স্মরণ কর, যখন আল্লাহ প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আহলে কিতাবেরঃ তোমরা মানুষের কাছে কিতাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা সে প্রতিশ্রুতি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল এবং তার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহণ করল। সুতরাং তারা যা বিনিময় গ্রহণ করল কত নিকৃষ্টতা!

 আয়াত-১৮৮ঃ তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে-তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আয়াত-১৮৯ঃ আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। আর আল্লাহই হলেন সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

আয়াত-১৯০ঃ নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃজনে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য,

আয়াত-১৯১ঃ যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে এবং চিন্তা করে আসমান ও জমিনের সৃজনের ব্যাপারে, এবং বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করনি। আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমাদের দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।

আয়াত-১৯২ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে দাখিল করলে তাকে তো লাঞ্ছিত করলে; আর জালিমদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই।

আয়াত-১৯৩ঃ হে আমাদের পালনকর্তা নিশ্চয় আমরা শুনেছি এক আহ্বানকারীকে ঈমান আনার জন্য আহবান করতেঃ “তোমরা ঈমান আন তোমাদের রবের প্রতি” সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতএব তুমি মাফ করে দাও আমাদের গুনাহগুলো এবং দূরীভূত করে দাও আমাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ আর আমাদের মৃত্যু দাও নেককারদের সাথে।

আয়াত-১৯৪ঃ হে আমাদের রব! আর তুমি আমাদের দাও, যা তোমার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদের দিতে ওয়াদা করেছ এবং লাঞ্ছিত কর না আমাদের কেয়ামতের দিন। তুমি তো কখনও ওয়াদা খেলাফ কর না।

আয়াত-১৯৫ঃ তারপর তাদের রব তাদের প্রর্থনা কবুল করে বললেনঃ “আমি বিনষ্ট করি না তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর কর্ম, তা সে হোক পুরুষ কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা একে অন্যের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, আমর পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে; অবশ্যই আমি তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদের দাখিল করব বেহেশতে, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ। এই হল পুরস্কার আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম পুরস্কার।

আয়াত-১৯৬ঃ তোমাকে যেন ধোঁকা না দেয়, কাফেরদের দেশে দেশে অবাধ বিচরণ।

আয়াত-১৯৭ঃ এ তো ক্ষণিকের উপভোগ। তারপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর তা কত নিকৃষ্ট আবাস!

আয়াত-১৯৮ঃ কিন্তু যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এ আপ্যায়ন আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা নেককারদের জন্য শ্ৰেয়।

আয়াত-১৯৯ঃ আর আহলে কিতাবের মধ্যে অবশ্য এমন লোকও আছে যারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং যা তোমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে আর যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে তার উপরও আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত অবস্থায়। তারা আল্লাহর আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে না। তারাই হল সে লোক যাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।

আয়াত-২০০ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।

Surah Ali ‘Imran (126-150)

Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান

(আয়াত: ১২৬-১৫০)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

 

وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦ ۗ وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ ١٢٦

আয়াত-১২৬: এটা তো আল্লাহ শুধু এজন্য করেছেন যেন তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয়, যাতে তোমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো শুধুমাত্র পরাক্রমশালী মাহাবিজ্ঞ আল্লাহ̖র তরফ থেকে হয়ে থাকে,

لِيَقْطَعَ طَرَفًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنقَلِبُوا۟ خَآئِبِينَ ١٢٧

আয়াত-১২৭: যাতে ধ্বংস করে দেন কাফেরদের কোন দলকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন তাদের, যেন তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।

لَيْسَ لَكَ مِنَ ٱلْأَمْرِ شَىْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَـٰلِمُونَ ١٢٨

আয়াত-১২৮: আপনার কিছু করণীয় নেই এ ব্যাপারে যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দেবেন। কারণ তারা তো জালিম।

وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٢٩

আয়াত-১২৯: যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে সবই আল্লাহর। তিনি মাফ করেন যাকে চান এবং আযাব দেন যাকে চান। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوا۟ ٱلرِّبَوٰٓا۟ أَضْعَـٰفًۭا مُّضَـٰعَفَةًۭ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ١٣٠

আয়াত-১৩০: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সুদ খেয়ো না চক্রবৃদ্ধি হারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাতে সফলতা লাভ করতে পার।

وَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِىٓ أُعِدَّتْ لِلْكَـٰفِرِينَ ١٣١

আয়াত-১৩১: আর তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।

وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ١٣٢

আয়াত-১৩২: আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং রাসূলের যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।

 وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا ٱلسَّمَـٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ١٣٣

আয়াত-১৩৩: তোমরা প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে ধাবমান হও তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা এবং ঐ জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মোত্তাকীদের জন্য,

ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِى ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلْكَـٰظِمِينَ ٱلْغَيْظَ وَٱلْعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ١٣٤

আয়াত-১৩৪: যারা ব্যয় করে সচ্ছল অবস্থায়ও এবং অসচ্ছল অবস্থায়ও আর তারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের অপরাধ ক্ষমাকারী। আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন,

وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةً أَوْ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا۟ ٱللَّهَ فَٱسْتَغْفَرُوا۟ لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلُوا۟ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ١٣٥

আয়াত-১৩৫: এবং যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদের অপরাধের জন্য। আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে অপরাধ মার্জনা করবে? তারা যা করে ফেলে, জেনে-শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে ন।

أُو۟لَـٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغْفِرَةٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّـٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ ٱلْعَـٰمِلِينَ ١٣٦

আয়াত-১৩৬: এরাই তারা যাদের প্রতিদান হল তাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং ঐ জান্নাত যার পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম প্রতিদান সৎকর্মশীলদের!

قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌۭ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ ١٣٧

আয়াত-১৩৭: অবশ্যই গত হয়েছে তোমাদের আগে অনেক জীবনাচরণ। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং লক্ষ্য কর, মিথ্যাশ্রয়ীদের পরিণতি কি হয়েছিল?

هَـٰذَا بَيَانٌۭ لِّلنَّاسِ وَهُدًۭى وَمَوْعِظَةٌۭ لِّلْمُتَّقِينَ ١٣٨

আয়াত- ১৩৮: এই হল সকল মানুষের জন্য বিশদ বর্ণনা এবং হেদায়াত ও উপদেশ মোত্তাকীদের জন্য।

وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ١٣٩

আয়াত-১৩৯: আর তোমরা সাহস হারিয়ো না এবং দুঃখও কর না, তোমরাই পরিণামে বিজয়ী হবে, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও।

إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌۭ فَقَدْ مَسَّ ٱلْقَوْمَ قَرْحٌۭ مِّثْلُهُۥ ۚ وَتِلْكَ ٱلْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ ٱلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَآءَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٤٠

আয়াত-১৪০: যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে তবে অনুরূপ আঘাত তো তাদেরও লেগেছিল। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মাঝে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত করি। যাতে আল্লাহ জানতে পারেন কারা ঈমান এনেছে এবং যাতে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করতে পারেন। আল্লাহ জালিমদের ভালবাসেন না,

وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَمْحَقَ ٱلْكَـٰفِرِينَ ١٤١

আয়াত-১৪১: এবং যাতে আল্লাহ নির্মল করতে পারেন মুমিনদের আর নিপাত করতে পারেন কাফেরদের।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٤٢

আয়াত-১৪২: তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করবে, এখনও আল্লাহ প্রকাশ করেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল?

وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ ٱلْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ١٤٣

আয়াত-১৪৩: আর তোমরা তো মরণ কামনা করতে মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই। এখন তো তোমরা তা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছ।

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌۭ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ ۚ أَفَإِي۟ن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيْـًۭٔا ۗ وَسَيَجْزِى ٱللَّهُ ٱلشَّـٰكِرِينَ ١٤٤

আয়াত-১৪৪: মুহাম্মদ তো একজন রাসূল ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। তার পূর্বেও অনেক রাসূল চলে গেছে। অতএব যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা পায়ের গোড়ালিতে ভর করে পেছনে ফিরে যাবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ অতি সত্বর কৃতজ্ঞদের পুরষ্কার দেবেন।

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ كِتَـٰبًۭا مُّؤَجَّلًۭا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلْـَٔاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِى ٱلشَّـٰكِرِينَ ١٤٥

আয়াত-১৪৫: আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ মরতে পারে না, এজন্য নির্দিষ্ট সময় লিখিত আছে। যে কেউ পার্থিব পুরস্কার চায় আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দেই, আর যে পারলৌকিক পুরস্কার চায় আমি তাকে তা সেখানে দেব। অতি সত্বর আমি কৃতজ্ঞদের পুরস্কার দেব।

وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّۢ قَـٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌۭ فَمَا وَهَنُوا۟ لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا۟ وَمَا ٱسْتَكَانُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّـٰبِرِينَ ١٤٦

আয়াত-১৪৬: আর নবীদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধ করেছে, তাদের সাথে ছিল বহু আল্লাহওয়ালা। তারা সাহস হারায়নি আল্লাহর পথে তাদের উপর আপতিত বিপদ-আপদের কারণে, আর না তারা দুর্বল হয়েছে, আর না দমে গেছে। আল্লাহ এরূপ দৃঢ়পদ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন।

وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِىٓ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ ١٤٧

আয়াত-১৪৭: আর তাদের কোন কথা ছিল না একথা ছাড়াঃ হে আমাদের রব! মার্জনা করে দাও আমাদের অপরাধ এবং আমাদের কাজে যে বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে তা; আর দৃঢ়পদ রাখ আমাদের এবং কাফের কওমের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য কর।

فَـَٔاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ ٱلْـَٔاخِرَةِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ١٤٨

আয়াত-১৪৮: তারপর আল্লাহ তাদের দিয়েছেন পার্থিব পুরস্কার এবং আখেরাতের উত্তম পুরস্কারও। আল্লাহ নেককারদের ভালবাসেন।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمْ فَتَنقَلِبُوا۟ خَـٰسِرِينَ ١٤٩

আয়াত-১৪৯: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা মেনে চল, তবে তারা তোমাদের পেছনে ফিরিয়ে দেবে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

بَلِ ٱللَّهُ مَوْلَىٰكُمْ ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلنَّـٰصِرِينَ ١٥٠

আয়াত-১৫০: বরং আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।

Surah Ali ‘Imran (101-125)

Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান

(আয়াত: ১০১-১২৫)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

 

وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُۥ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ١٠١

আয়াত-১০১: কেমন করে তোমরা কুফরী করবে? অথচ তোমাদের পাঠ করে শুনান হচ্ছে আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং তোমাদেরই মধ্যে আছেন আল্লাহর রাসূল। আর যে কেউ দৃঢ়ভাবে আল্লাহকে ধারণ করবে সে অবশ্যই পরিচালিত হবে সরল-সঠিক পথে।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ١٠٢

আয়াত-১০২: হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে সেরূপ ভয় করা যেরূপ তাকে ভয় করা উচিত। আর তোমরা প্রকৃত মুসলিম না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর না।

وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟ ۚ وَٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَآءًۭ فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِۦٓ إِخْوَٰنًۭا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍۢ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ١٠٣

আয়াত-১০৩: আর তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জু ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। আর স্মরণ কর আল্লাহর সে অনুগ্রহ যা তোমাদের উপর রয়েছে-তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, আল্লাহ তোমাদের হৃদয়ে মহব্বত সৃষ্টি করেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা ছিলে এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেন। এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা সঠিক পথে চলতে পার।

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌۭ يَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ ١٠٤

আয়াত-১০৪: আর তোমাদের মধ্যে এমন একদল থাকা আবশ্যক যারা মানুষের কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং আদেশ করবে ভালো কাজের আর নিষেধ করবে মন্দ কাজে। এরাই হলো সফলকাম।

وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ ١٠٥

আয়াত-১০৫: আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃস্টি করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।

يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌۭ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌۭ ۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَـٰنِكُمْ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ١٠٦

আয়াত-১০৬: সেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু চেহারা কালো হবে। যাদের চেহারা কালো হবে তাদের বলা হবে: তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা যে কুফরী করতে তার জন্য এখন আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।

وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱبْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِى رَحْمَةِ ٱللَّهِ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ١٠٧

আয়াত-১০৭: আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে আল্লাহর রহমতের মধ্যে, তাতে তারা চিরকাল থাকবে।

تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۗ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًۭا لِّلْعَـٰلَمِينَ ١٠٨

আয়াত-১০৮: এসব হল আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনাকে যথাযথভাবে পাঠ করে শুনাচ্ছি। আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি জুলুম করতে চান না।

وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ١٠٩

আয়াত-১০৯: আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেসবই আল্লাহর, আর যাবতীয় বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তীত হবে।

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ ۗ وَلَوْ ءَامَنَ أَهْلُ ٱلْكِتَـٰبِ لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ ٱلْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ ١١٠

আয়াত-১১০: তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ উন্মত, মানুষের হিতের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটান হয়েছে, তোমরা ভাল কাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। আহলে কিতাব যদি ঈমান আনত তবে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হত।  তাদের মধ্যে কতক মুমিন কিন্তু অধিকাংশই হল পাপাচারী-ফাসিক।

لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّآ أَذًۭى ۖ وَإِن يُقَـٰتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ ٱلْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ ١١١

আয়াত-১১১: তারা কখনও তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, সামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে তবে তারা তোমাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে, তারপর তাদের কোনরকম সাহায্য করা হবে না।

ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوٓا۟ إِلَّا بِحَبْلٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبْلٍۢ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلْمَسْكَنَةُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلْأَنۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ١١٢

আয়াত-১১২: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাইরে তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের উপর সেখানেই লাঞ্ছনার ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তারা আল্লাহর গজবের পাত্র হয়েছে এবং ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের উপর হীনতা-দীনতার। এসব এজন্য যে, তারা প্রত্যাখ্যান করত আল্লাহর আয়াত এবং অন্যায়ভাবে হত্যা করত নবীদের। এ কারণে যে, তারা নাফরমানী করেছিল এবং সীমালংঘন করেছিল।

 لَيْسُوا۟ سَوَآءًۭ ۗ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَـٰبِ أُمَّةٌۭ قَآئِمَةٌۭ يَتْلُونَ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ ١١٣

আয়াত-১১৩: তারা সবাই সমান নয়; আহলে কিতাবের মধ্যে একদল আছে অবিচলিত, রাতের বেলায় তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে ও সিজদা করে।

يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُسَـٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ١١٤

আয়াত-১১৪: তারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি। তারা আদেশ করে ভাল কাজের এবং নিষেধ করে মন্দ কাজে এবং তারা প্রতিযোগিতা করে নেক কাজে। তারাই নেককারদের মধ্যে সামিল।

وَمَا يَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُتَّقِينَ ١١٥

আয়াত-১১৫: তারা যেসব নেক কাজ করে তার বিনিময় থেকে তাদের কখনও বঞ্চিত করা হবে না। আর মোত্তাকীদের ব্যাপারে আল্লাহ খুব ভাল জানেন।

إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَـٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ١١٦

আয়াত-১১৬: নিশ্চয় যারা কুফরী করে, আল্লাহর সামনে কোন কাজে আসবে না তাদের ধন-সম্পদ আর না তাদের সন্তান-সন্ততি। আর তারাই দোযখবাসী, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে।

مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِى هَـٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍۢ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍۢ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ ٱللَّهُ وَلَـٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ١١٧

আয়াত-১১৭: তারা এ পার্থিব জীবনে যা কিছু ব্যয় করে তার উদাহরণ ঐ বায়ুর ন্যায় যাতে রয়েছে প্রচণ্ড হিম, যা আঘাত করল এমন লোকদের শস্যক্ষেত্রকে যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল, ফলে সে বায়ু শস্যক্ষেত্রটি ধ্বংস করে দিল। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন অন্যায় করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অবিচার করেছে।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةًۭ مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًۭا وَدُّوا۟ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ ٱلْبَغْضَآءُ مِنْ أَفْوَٰهِهِمْ وَمَا تُخْفِى صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ١١٨

আয়াত-১১৮: হে যারা ঈমান এনেছে! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাওকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহন কর না। তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করে না। যা তোমাদের কষ্ট দেয় তা তারা কামনা করে। আর কখনো কখনো তাদের মুখ থেকে বিদ্বেষ প্রকাশ পায়; কিন্তু যা তাদের হৃদয় গোপন রাখে তা তো আরো গুরুতর। আমি তো তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে প্রকাশ করে দিয়েছি, যদি তোমরা অনুধাবন করতে পার।

هَـٰٓأَنتُمْ أُو۟لَآءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِٱلْكِتَـٰبِ كُلِّهِۦ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوْا۟ عَضُّوا۟ عَلَيْكُمُ ٱلْأَنَامِلَ مِنَ ٱلْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا۟ بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ١١٩

আয়াত-১১৯: হাঁ, তোমরা এরুপ যে, তোমরা তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের ভালবাসে না। আর তোমরা সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমাণ এনেছি। কিন্তু যখন তারা পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে। বলুনঃ তোমরা মর তোমাদেরই আক্রোশে। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের কথা সবিশেষ অবহিত।

إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌۭ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌۭ يَفْرَحُوا۟ بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْـًٔا ۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌۭ ١٢٠

আয়াত-১২০: যদি তোমাদের কোন মঙ্গল হয়, তবে তা তাদের খারাপ লাগে, আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল হয়, তাহলে তাতে তারা আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন যা তারা করে।

وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ ٱلْمُؤْمِنِينَ مَقَـٰعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٢١

আয়াত-১২১: আর স্মরণ কর, যখন আপনি আপনার পরিজনদের কাছ থেকে ভোরবেলায় বের হয়ে মুমিনদের যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করছিলেন, আর আল্লাহ তো সব শোনেন, সব জানেন।

إِذْ هَمَّت طَّآئِفَتَانِ مِنكُمْ أَن تَفْشَلَا وَٱللَّهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ١٢٢

আয়াত-১২২: যখন তোমাদের মধ্যের দুটি দল সাহস হারাতে বসল, অথচ আল্লাহ তাদের সহায়ক ছিলেন; আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدْرٍۢ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌۭ ۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ١٢٣

আয়াত-১২৩: আর এ তো সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ বদর যুদ্ধে তোমাদের সাহায্যে করেছিলেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা শোকরগুজারী করতে পার।

إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَـٰثَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ١٢٤

আয়াত-১২৪: স্মরণ কর, আপনি যখন মু’মিনদের বলছিলেনঃ তোমাদের জন্য একি যথেষ্ট নয় যে, আসমান থেকে নাযিল হওয়া তিন হাজার ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের রব তোমাদের সাহায্যে করবেন?

بَلَىٰٓ ۚ إِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ ءَالَـٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ١٢٥

আয়াত- ১২৫: হাঁ, অবশ্যই। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর; তবে কাফের বাহিনী অতর্কিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন।