Surah An-Nisa / সূরা আন নিসা

(আয়াত: ১-৫০)

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

আয়াত–১ঃ হে মানব! তোমরা ভয় কর তোমাদের রবকে, যিনি পয়দা করেছেন তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে এবং যিনি পয়দা করেছেন তার থেকে তার জোড়া, আর ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দু’জন থেকে অনেক নর ও নারী। আর তোমরা ভয় কর। আল্লাহকে যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাঞ্ছা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের সম্পর্কে সতর্ক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

আয়াত-২ঃ আর দিয়ে দাও এতিমদের তাদের সম্পদ এবং বদল কর না খারাপ মালের সাথে ভাল মালের। আর গ্রাস কর না তাদের মাল তোমাদের মালের সাথে মিশিয়ে নিশ্চয় এরূপ করা গুরুতর পাপ।

আয়াত-৩ঃ আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের ব্যাপারে সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করে নাও অন্য নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের মনঃপুত হয়- দুই, তিন কিংবা চারজন পর্যন্ত। কিন্তু যদি আশংকা কর যে, তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের স্বত্বাধীন ক্রীতদাসীকে। এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।

আয়াত-৪ঃ আর তোমরা দিয়ে দাও স্ত্রীদের তাদের মহর সন্তুষ্টচিত্তে; তবে তারা খুশী হয়ে মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তা তোমরা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে ভোগ কর।

আয়াত-৫ঃ আর তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের ঐ সম্পদ যা আল্লাহ তোমাদের জীবন নির্বাহের অবলম্বন করেছেন; বরং তা থেকে তাদের খাওয়াও, পরাও এবং শুনাও তাদের সান্তনার বাণী।

আয়াত-৬ঃ আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করে নেবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌছে। যদি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পাও, তবে তাদের মাল তাদের হাতে ফিরিয়ে দেবে। এতিমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ কর না এবং তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেল না। যে স্বচ্ছল সে যেন এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। যখন তোমরা তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করবে, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য হিসাব গ্রহণে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।

আয়াত-৭ঃ পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশি। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।

আয়াত-৮ঃ আর যদি সম্পত্তি বণ্টনকালে (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয় এতিম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তবে তা থেকে তাদের কিছু দেবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।

আয়াত-৯ঃ আর তারা যেন ভয় করে যে, যদি তারা তাদের পেছনে দুর্বল অসহায় সন্তানদের ছেড়ে যেত, তবে তারাও তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সাথে যথোপযোগী কথা বলে।

আয়াত-১0ঃ নিশ্চয় যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা তো শুধু তাদের পেটে আগুন ভর্তি করছে; আর তারা সত্বরই দোযখের আগুনে জ্বলবে।

আয়াত-১১: আল্লাহ্ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদের আদেশ করেন; এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। তবে যদি শুধু কন্যা থাকে দু’জনের অধিক তাহলে তাদের জন্য ছেড়ে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি কন্যা একজন থাকে তবে তার জন্য অর্ধেক। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে। যদি সে নিঃসন্তান হয় এবং তার পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তাহলে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ; কিন্তু যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। এসবই মৃত ব্যক্তির যে অসিয়ত করে গেছে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। তোমাদের পিতা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারে কারা তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জান না। এ ব্যবস্থা আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-১২ঃ আর তোমরা পাবে অর্ধেক তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমরা তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে, অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তোমাদের সন্তান না থাকে। তবে তোমাদের সন্তান থাকলে তারা পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেয়ার ও ঋণ পরিশোধ করার পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারী মারা যায় এ অবস্থায় যে, তারা এক বৈপিত্রেয় ভাই কিংবা এক বৈপিত্রেয় বোন তার উত্তরাধিকারী, তবে তারা প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তারা যদি এর অধিক হয় তবে সবাই তিন ভাগের এক ভাগে সম অংশীদার হবে। এটা হবে যে অসিয়ত করা হয় তা পালন করার এবং ঋণ পরিশোধ করার পর; অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়। এ হল আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।

আয়াত-১৩ঃ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলে তিনি তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।

আয়াত-১৪ঃ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দোযখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

আয়াত-১৫ঃ তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করবে, যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে ব্যভিচারিণীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখবে যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।

আয়াত-১৬ঃ তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এ কুকর্মে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি দেবে; তবে যদি তারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদের রেহাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহা তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

আয়াত-১৭ঃ অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে ফেলে, তারপর অবিলম্বে তওবা করে; এরূপ লোকের তওবাই আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়াল।

আয়াত-১৮ঃ আর তওবা তাদের জন্য নয় যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে; আমি এখন তওবা করছি; আর তাদের জন্যও নয় যারা মারা যায় কাফের অবস্থায়। এরূপ লোকদের জন্যই আমি প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আয়াত–১৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য হালাল নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে, কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে। তারপর তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, তোমরা এরূপ জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।

আয়াত-২০ঃ আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছে কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ কর না। তোমরা কি তা গ্রহণ করবে মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচারের মাধ্যমে?

আয়াত-২১ঃ কিরূপে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা একে অপরের সাথে সংগত হয়েছ এবং সে নারীরা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছে?

আয়াত-২২ঃ তোমরা বিয়ে কর না সে নারীদের যাদের বিয়ে করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষরা, তবে যা পূর্বে গত হয়েছে তা গত হয়েছে। নিশ্চয় এটা নিতান্ত অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ।

আয়াত-২৩ঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের ভগিনী, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগিনী কন্যা, দুধমাতা, দুধবোন, শাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে সহবাস করে থাক। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তাহলে কোন অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা। পূর্বে যা গত হয়েছে, তা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আয়াত-২৪ঃ সকল সধবা নারীকে তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, কিন্তু তোমাদের স্বত্বাধীন যেসব দাসী রয়েছে তাদের হারাম করা হয়নি। এ হল তোমাদের জন্য আল্লাহর বিধান। এদের ছাড়া অন্য সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদের কামনা করবে অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করার জন্য ব্যভিচারের জন্য নয়। বিয়ের মাধ্যমে যে নারীদের তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের দিয়ে দেবে তাদের নির্ধারিত মহর। আর তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি মহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-২৫ঃ আর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ স্বাধীন মুসলমান নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না রাখে, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ে করবে। আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে ভাল জানেন। তোমরা পরস্পর এক-অভিন্ন। সুতরাং তোমরা তাদের বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের মহর তাদের দিয়ে দেবে, এই হিসেবে যে, তারা বিবাহিতা স্ত্রী; এই হিসেবে নয় যে, তারা ব্যভিচারিণী ও উপ-পতি গ্রহণকারিণী। যদি বিবাহিতা হওয়ার পর তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক। এই ব্যবস্থা (দাসীকে বিয়ে করা) তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করে। তবে ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আয়াত-২৬ঃ আর আল্লাহ্ চান তোমাদের জন্য সবকিছু বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদের অবহিত করতে এবং তোমাদের ক্ষমা করতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।

আয়াত-২৭ঃ আর আল্লাহ্ তো চান তোমাদের ক্ষমা করতে কিন্তু যারা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথ থেকে দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।

আয়াত-২৮ঃ আল্লাহ চান তোমাদের বোঝা হালকা করতে কারণ মানুষ তো সৃষ্ট হয়েছে দুর্বল।

আয়াত-২৯ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেল না। তবে ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য যা তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয় তা বৈধ। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কর না। অবশ্যই আল্লাহ হলেন তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

আয়াত-৩০ঃ আর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে এরূপ করবে, তাকে আমি সত্বরই আগুনে জ্বালাব। এ কাজ আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।

আয়াত-৩১ঃ যদি তোমরা দূরে থাকতে পার সেসব বড় গুনাহ থেকে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমি তোমাদের ছোট গুনাহগুলো মার্জনা করে দেব এবং দাখিল করব তোমাদের এক সম্মানজনক স্থানে।

আয়াত-৩২ঃ আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর না এমন কিছুর যাতে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে কারো উপর। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ। আর প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

আয়াত-৩৩ঃ আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি সে সম্পত্তির যা ছেড়ে যায় পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের দিয়ে দাও তাদের প্রাপ্য অংশ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।

আয়াত-৩৪ঃ পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, কারণ আল্লাহ্ তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত হয় এবং লোক চক্ষুর অন্তরালে তার হিফাযত করে আল্লাহর হিফাযত অনুসারে। স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের একাকিনী ত্যাগ কর তাদের শয্যায়, শেষে তাদের প্রহার কর। এতে যদি তারা তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের ব্যাপারে অন্য কোন পথ তালাশ কর না। নিশ্চয় আল্লাহ্ উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান।

আয়াত-৩৫ঃ যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে; তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।

আয়াত-৩৬ঃ আর তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর এবং শরীক সাব্যস্ত কর না তাঁর সাথে কোন কিছুকে। আর সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতার সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, এতিমদের সাথে, মিসকীনদের সাথে, নিকট-প্রতিবেশী ও দূর-প্রতিবেশীর সাথে, সঙ্গী-সাথী ও পথচারীর সাথে এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে__

আয়াত-৩৭ঃ যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্য মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয় আর তারা গোপন করে তা যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে। আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অপমানজনক আযাব;

আয়াত-৩৮ঃ এবং যারা ব্যয় করে তাদের মাল লোক দেখানোর জন্য এবং ঈমান রাখে না আল্লাহর প্রতি, আর না শেষ দিনের প্রতি। আর শয়তান যার সঙ্গী হয় সে কতইনা নিকৃষ্ট সঙ্গী!

আয়াত-৩৯ঃ আর তাদের কি-ই বা ক্ষতি হত যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর ও শেষ দিনের উপর এবং যদি তারা ব্যয় করত আল্লাহ তাদের যা দিয়েছেন তা থেকে! আল্লাহ্ তাদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত।

আয়াত-৪০ঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ জুলুম করেন না এক রেণু পরিমাণও, আর যদি হয় কোন পুণ্য কাজ তবে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার দান করেন।

আয়াত-৪১ঃ আর তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি উপস্থিত করব প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী এবং আপনাকে তাদের উপর উপস্থিত করব সাক্ষীরূপে?

আয়াত-৪২ঃ যারা কুফরী করেছিল এবং রাসূলের নাফরমানী করেছিল, সেদিন তারা কামনা করবে যদি মাটির সাথে তারা মিশে যেত! তারা কোন কথাই আল্লাহর থেকে গোপন করতে পারবে না।

আয়াত-৪৩ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় নামাযের এ কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্ৰাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও__মসেহ করবে স্বীয় মুখমণ্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।

আয়াত-৪৪ঃ তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদের দেয়া হয়েছে কিতাবের এক অংশ? অথচ তারা গোমরাহীকে ক্রয় করে এবং কামনা করে যেন তোমরাও পথভ্রষ্ট হও।

আয়াত-৪৫ঃ আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদের খুব ভালভাবেই জানেন। অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।

আয়াত-৪৬ঃ ইহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথার প্রকৃত অর্থ বিকৃত করে এবং বলেঃ আমরা শুনলাম কিন্তু অমান্য করলাম! তারা আরো বলেঃ শোন, না শোনার মত। আর মুখ বাঁকিয়ে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করে বলেঃ রা’য়েনা (আমাদের রাখাল)। কিন্তু তারা যদি বলতঃ “আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম;” এবং যদি তারা বলতঃ “শোন এবং আমাদের প্রতি লক্ষ্য রেখ,” তবে তা-ই তাদের জন্য উত্তম ও সংগত হত। কিন্তু আল্লাহ তাদের কুফরীর জন্য তাদের লা’নত করেছেন। তাই তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।

আয়াত-৪৭ঃ ওহে আহলে কিতাব! তোমরা ঈমান আন তাতে যা আমি নাযিল করেছি এ অবস্থায় যে, তা তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারী, এর পূর্বে যে, আমি বিকৃত করে দেব চেহারাসমূহ, তারপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পেছনের দিকে, অথবা তাদের লা’নত করব যেরুপ লা’নত করেছিলাম আসহাবুস সাবতকে। আর আল্লাহর নির্দেশ সুসম্পন্ন হয়েই থাকে।

আয়াত-৪৮ঃ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ; তবে তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হয়।

আয়াত-৪৯ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যারা নিজেদের পূত-পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহই পবিত্র করেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন। আর তাদের উপর বিন্দু পরিমাণও অন্যায় করা হবে না।

আয়াত-৫০ঃ লক্ষ্য কর, তারা কেমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে আল্লাহর প্রতি; এবং স্পষ্ট পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।

 

Surah An-Nisa 151-176

Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা (আয়াত: ১৫১-১৭৬) بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি আয়াত-১৫১ঃ এরাই প্রকৃতপক্ষে কাফের। আর আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আয়াত-১৫২ঃ যারা ঈমান আনে আল্লাহর...

Surah An-Nisa 101-150

Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা (আয়াত: ১০১-১৫০) بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি আয়াত-১০১ঃ আর যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর করবে, তখন তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তোমরা নামায সংক্ষিপ্ত কর, এ আশংকায় যে, কাফেররা তোমাদের...

An-Nisa (51-100)

Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা (আয়াত: ৫১-১০০) بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি আয়াত-৫১ঃ তুমি কি তাদের দেখনি যাদের দেয়া হয়েছিল কিতাবের এক অংশ, তারা ঈমান রাখে জিবত ও তাগূতে এবং তারা কাফেরদের সন্মন্ধে বলেঃ এরাই...