Surah An-Nisa / সূরা আন্ নিসা
(আয়াত: ১৫১-১৭৬)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১৫১ঃ এরাই প্রকৃতপক্ষে কাফের। আর আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৫২ঃ যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং তার রাসূলদের প্রতি আর পার্থক্য করে না তাদের কারো মধ্যে, অচিরেই তিনি তাদের পুরস্কার দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-১৫৩ঃ আহলে কিতাব আপনার কাছে আবেদন করে তাদের উপর আসমান থেকে লিপিকা অবতীর্ণ করিয়ে দিতে, কিন্তু তারা তো মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিলঃ প্রকাশ্যে আল্লাহ̖কে আমাদের দেখিয়ে দাও। ফলে তাদের পাকড়াও করল বজ্রপাত তাদের ধৃষ্টতার দরুন। তারপর তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও। আর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। মূসাকে আমি প্রকৃষ্ট প্রভাব প্রদান করেছিলাম।
আয়াত-১৫৪ঃ আর আমি তাদের উপরে তুর পর্বতকে তুলে ধরেছিলাম তাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়ার জন্য এবং তাদের বলেছিলাম, প্রবেশ কর শহর দ্বারে অবনত মস্তকে এবং তাদের আরো বলেছিলাম, শনিবার সম্বন্ধে সীমালংঘন কর না। এভাবে তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
আয়াত-১৫৫ঃ আর তারা তো অভিশপ্ত হয়েছিল তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে তাদের কুফরী করার জন্য, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের অন্তর সংরক্ষিত” তাদের এ উক্তির জন্য; বরং আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দিয়েছেন তাদের কুফরীর কারণে। ফলে তারা খুব অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
আয়াত-১৫৬ঃ আর তারা অভিশপ্ত হয়েছিল তাদের কুফরীর কারণে এবং মারইয়ামের প্রতি গুরুতর অপবাদ আরোপ করার দরুন,
আয়াত-১৫৭ঃ আর তাদের এ উক্তির জন্য যে, আমরা আল্লাহর রাসূল মসীহ ঈসা ইবন̖ মারইয়ামকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলীতেও চড়ায়নি, বরং তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। আর যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, নিশ্চয়ই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। এ সম্পর্কে তাদের অনুমান করা ছাড়া কোন জ্ঞানই ছিল না। আর তারা তাকে হত্যা করেনি একথা নিশ্চিত।
আয়াত-১৫৮ঃ বরং আল্লাহ তাকে তার কাছে তুলে নিয়েছেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৫৯ঃ আর আহলে কিতাবের মধ্যে প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে ঈসার প্রতি ঈমান আনবেই। আর কেয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন।
আয়াত-১৬০ঃ আর ইহুদীদের জন্য আমি বহু পবিত্র বস্তু হারাম করে দিয়েছি যা তাদের জন্য হালাল ছিল, তাদের সীমালংঘনের দরুন এবং আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেয়ার জন্য,
আয়াত-১৬১ঃ এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, অথচ তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তাদের অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। আর আমি তাদের মধ্যে কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৬২ঃ কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর এবং যারা ঈমানদার তারা ঈমান আনে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তাতেও; এবং যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি; বস্তুত এরূপ লোকদেরই আমি সুমহান পুরস্কার প্রদান করব।
আয়াত-১৬৩ঃ নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তার পরবর্তী নবীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম ইব̖রাহীম, ইস̖মাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের প্রতি এবং দাউদকে দিয়েছিলাম যাবুর;
আয়াত-১৬৪ঃ আর আমি এমন অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের আপনাকে পূর্বে শুনিয়েছি এবং এমনও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের কথা আপনাকে বলিনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন।
আয়াত-১৬৫ঃ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে রাসূলদের আমি এজন্য প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলদের আগমনের পর আল্লাহর সামনে মানুষের কোন ওজর-আপত্তি না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৬৬ঃ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন (আপনার নুবুওয়াতের) আপনার প্রতি তিনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তা দিয়ে যা তিনি নাযিল করেছেন সজ্ঞানে, এবং ফেরেশতারাও এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-১৬৭ঃ নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে তারা তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
আয়াত-১৬৮ঃ যারা কুফরী করেছে এবং জুলুম করেছে আল্লাহ̖ তাদের কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোন পথও দেখাবেন না,
আয়াত-১৬৯ঃ জাহান্নামের পথ ছাড়া, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আর এরূপ করা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।
আয়াত-১৭০ঃ হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছেন এ রাসূল সত্যবাণী নিয়ে তোমাদের রবের তরফ থেকে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আল্লাহরই যা কিছু আছে আসমানে ও জমিনে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-১৭১ঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না এবং বল না আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কোন কথা। মসীহ ঈসা ইবন মারইয়াম আল্লাহ̖র রাসূল ও তার বাণী ছাড়া আর কিছু নয়, আল্লাহ তা মরইয়ামের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহর তরফ থেকে এক রূহ। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহ̖র প্রতি এবং তার রাসূলদের প্রতি, আর বল না (আল্লাহ) তিনজন। এরূপ বলা থেকে নিবৃত্ত হও তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। একমাত্র আল্লাহ̖ই এক মা’বুদ। তার সন্তান হবে তিনি এর অনেক উর্ধ্বে। তারই যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে। কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আয়াত-১৭২ঃ মসীহ কখনও লজ্জাবোধ করেন না এতে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারাও লজ্জাবোধ করে না। আর যে ব্যক্তি লজ্জাবোধ করবে-তার ইবাদত করতে এবং অহংকার করবে, তবে তিনি তাদের সবাইকে তার কাছে সমবেত করবেন।
আয়াত-১৭৩ঃ তবে যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তিনি তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো অধিক দেবেন। কিন্তু যারা (তার ইবাদত করতে) লজ্জাবোধ করেছে এবং অহংকার করেছে, তিনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। তারা আল্লাহ̖কে ছাড়া নিজেদের জন্য কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না।
আয়াত-১৭৪ঃ হে মানুষ! অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ থেকে প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল আলো অবতীর্ণ করেছি।
আয়াত-১৭৫ঃ সুতরাং যারা আল্লাহ্র প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদের স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তার সরল পথে তাদের পরিচালিত করবেন।
আয়াত-১৭৬ঃ লোকেরা আপনার কাছে বিধান জানতে চায়। আপনি বলুনঃ আল্লাহ তোমাদের বিধান দিচ্ছেন “কালালা”– (পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি) সম্বন্ধে। যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়। (পিতা-মাতাও না থাকে) এবং তার এক এ বোন থাকে তবে সে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ পাবে; সে যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার-ভাই তার ওয়ারিশ হবে। তবে যদি বোন দুজন থাকে তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে; আর যদি ভাই-বোন কয়েকজন থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান হবে। তোমরা গোমরাই হবে এ আশংকায় আল্লাহ তোমাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।