Surah Ali ‘Imran/ সূরা আলে-ইমরান
(আয়াত: ১৫১-২০০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১৫১ঃ অতি সত্ত্বর আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করব, কেননা তারা আল্লাহর এমন শরীক সাব্যস্ত করেছে যার সপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি। আর তাদের ঠিকানা হল দোযখ কত নিকৃষ্ট জালিমদের আবাসস্থল।
আয়াত-১৫২ঃ আর আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন যখন তোমরা কাফেরদের খতম করছিলে তাঁরই আদেশে। তারপর তোমরা সাহস হারিয়ে ফেললে এবং পরস্পর মতবিরোধ করলে নির্দেশ পালনে, আর যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদের দেখাবার পরও তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের মাঝে কতক এরূপ ছিল যারা কামনা করছিল দুনিয়া এবং কতক কামনা করছিল আখেরাত। তারপর পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদের থেকে তোমাদের ফিরিয়ে দিলেন। বস্তুত তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহ তো মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।
আয়াত- ১৫৩ঃ স্মরণ কর, যখন তোমরা উপরের দিকে পালাচ্ছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো প্রতি তাকাচ্ছিলে না, অথচ রাসূল পেছন দিক থেকে তোমাদের ডাকছিলেন। ফলে তিনি তোমাদের দিলেন দুঃখের উপর দুঃখ, যাতে তোমরা দুঃখ না কর যা তোমরা হারিয়েছ তার জন্য, আর না সে বিপদের জন্য যা তোমাদের উপর আপতিত হয়েছে। আর আল্লাহ পূর্ণ অবহিত সে বিষয়ে যা তোমরা কর।
আয়াত-১৫৪ঃ তারপর তিনি তোমাদের উপর দুঃখের পর প্রশান্তি নাযিল করলেন তন্দ্রারূপে, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। আর একদল ছিল যাদের বিব্রত করে রেখেছিল তাদের প্রাণের চিন্তা, তারা আল্লাহর প্রতি জাহেলী যুগের ধারণার ন্যায় অবাস্তব ধারণা করেছিল। তারা বলছিলঃ এ ব্যাপারে আমাদের হাতে কি কিছু করার নেই? বলুনঃ নিশ্চয়, যাবতীয় বিষয় একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তারা নিজেদের মনে গোপন রাখে যা আপনার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলেঃ যদি আমাদের হাতে এ ব্যাপারে কিছু করার থাকত তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। বলুনঃ যদি তোমরা নিজেদের ঘরেও থাকতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল তারা বেরিয়ে পড়ত নিজেদের মৃত্যুর স্থানের দিকে। এসব এজন্য যে, আল্লাহ তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করবেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা নির্মল করবেন। মনের গোপন বিষয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
আয়াত-১৫৫ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তারা তো ছিল এমন, যাদের শয়তান পদস্খলন ঘটিয়েছিল তাদের কৃতকর্মের দরুন। অবশ্য আল্লাহ তাদের মাফ করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল।
আয়াত-১৫৬ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তাদের মত হয়ে না যারা কুফরী করেছে এবং নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে, যখন তারা পৃথিবীতে অভিযানে বের হয় কিংবা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়- তারা যদি আমাদের সাথে থাকত তবে মরতও না, নিহতও হত না। যেন আল্লাহ এটাকে তাদের অন্তরে পরিতাপের কারণ করে দেন। আল্লাহই জীবন দেন এবং প্রাণ সংহার করেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-১৫৭ঃ আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মরে যাও, তবে আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমা ও রহমত তার চেয়ে শ্রেয় যা তারা জমা করে।
আয়াত-১৫৮ঃ আর যদি তোমরা মরে যাও অথবা নিহত হও, নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের একত্র করা হবে।
আয়াত-১৫৯ঃ আর আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত থাকার দরুন আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন; কিন্তু যদি আপনি কর্কশ স্বভাব ও কঠোর হৃদয় হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং আপনি তাদের মাফ করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আর কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন সংকল্প করেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন তার উপর ভরসাকারীদের।
আয়াত-১৬০ঃ যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে? আর শুধু আল্লাহরই উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।
আয়াত-১৬১ঃ কোন নবীর পক্ষে সম্ভব নয় কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখা। কেউ কোন কিছু অন্যায়ভাবে গোপন করে রাখলে সে তা কেয়ামতের দিন নিয়ে আসবে। তারপর প্রত্যেককে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে যা সে অর্জন করেছে এবং তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।
আয়াত-১৬২ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট তার আনুগত্য করে সে কি ঐ ব্যক্তির মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং যার আবাস জাহান্নাম? আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
আয়াত-১৬৩ঃ আল্লাহ̖র কাছে মানুষ মর্যাদায় বিভিন্ন স্তরের। তারা যা করে আল্লাহ̖ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আয়াত-১৬৪ঃ অবশ্যই আল্লাহ̖ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহর আয়াত তাদের পাঠ করে শুনান, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত; যদিও তারা পূর্বে প্রকাশ্য গোমরাহীতে ছিল।
আয়াত-১৬৫ঃ কি হল? যখন তোমাদের উপর এক বিপদ আপতিত হল, যার চেয়ে দ্বিগুণ বিপদ তোমরা ঘটিয়েছিলে, তখন তোমরা বললেঃ কোথা থেকে এল এ বিপদ? আপনি বলে দিন, এ বিপদ তোমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৬৬ঃ যেদিন উভয় দল পরস্পর সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপদ আপতিত হয়েছিল তা আল্লাহরই ইচ্ছায় হয়েছিল। আর তা এজন্য যে, তিনি প্রকাশ করে দেবেন মু’মিনদের__
আয়াত-১৬৭ঃ এবং প্রকাশ করে দেবেন মোনাফেকদের। তাদের বলা হয়েছিলঃ এস তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শক্রদের প্রতিরোধ কর। তারা বলেছিলঃ যদি জানতাম যুদ্ধ হবে তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরন করতাম। সেদিন তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীর কাছাকাছি ছিল। তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ খুব ভালভাবে জানেন যা তারা গোপন রাখে।
আয়াত-১৬৮ঃ যারা ঘরে বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্পর্কে বলেঃ তারা আমাদের কথামত চললে নিহত হত না, তাদের আপনি বলে দিন; যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও।
আয়াত-১৬৯ঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না; বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত।
আয়াত-১৭০ঃ যারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
আয়াত-১৭১ঃ তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মুমিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।
আয়াত-১৭২ঃ আহত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়, তাদের মধ্যে যারা ভাল কাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
আয়াত-১৭৩ঃ তারা এমন মানুষ যে, লোকেরা তাদের বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্দে কাফেররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। একথা তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বললঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কাৰ্যনির্বাহক।
আয়াত-১৭৪ঃ তারপর তারা ফিরে এল আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে, কোন অমঙ্গলই তাদের স্পর্শ করেনি। আর আল্লাহ যাতে রাজি তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
আয়াত-১৭৫ঃ এ তো শয়তান ছাড়া আর কিছু নয়, সে তোমাদের ভয় দেখায় তার বন্ধুদের। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা প্রকৃত মু’মিন হও।
আয়াত-১৭৬ঃ আপনাকে যেন চিন্তা-ভাবনায় না ফেলে ঐ সকল লোক যারা কুফরীর দিকে ধাবিত হয়। তারা কখনও আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ চান যে আখেরাতে তাদের আদৌ কোন অংশ না দেন। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
আয়াত-১৭৭ঃ আর যারা ঈমাণের পরিবর্তে কুফরী ক্রয় করেছে তারা কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৭৮ঃ কাফেররা যেন কখনও মনে না করে যে, আমি তাদের যে অবকাশ দেই তাতে তাদের জন্য কোন মঙ্গল রয়েছে; আমি তো অবকাশ দেই শুধু এজন্য যে, তাদের গুনাহ যেন আরো বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৭৯ঃ আল্লাহ মু’মিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না, যে অবস্থায় তোমরা এখন আছ, যতক্ষণ পর্যন্ত না অপবিত্রকে পৃথক করেন পবিত্র থেকে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের গায়েবের সংবাদ দেবেন। তবে আল্লাহ তার রাসূলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলদের উপর। যদি তোমরা ঈমান আন এবং মোত্তাকী হও, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান।
আয়াত-১৮০ঃ যারা কৃপণতা করে তাতে যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন নিজ অনুগ্রহে, তারা যেন মনে না করে যে এ কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক। ঐ মাল যাতে তারা কৃপণতা করেছিল, কেয়ামতের দিন তা দিয়ে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও জমিনের মালিকানা স্বত্ব একমাত্র আল্লাহর। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
আয়াত-১৮১ঃ নিশ্চয় আল্লহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলছে “আল্লাহ গরীব আর আমরা ধনী।” অবশ্যই আমি লিথে রাখব যা তারা বলেছে এবং তাদের নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা কারার বিষয়ও। আর আমি বলবঃ আস্বাদন কর জলন্ত আগুনের শাস্তি।
আয়াত-১৮২ঃ এই হলো তোমাদের সেসব কাজের ফল যা তোমরা পূর্বে স্বহস্তে করেছিলে। বস্তুত আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।
আয়াত-১৮৩ঃ যারা বলেঃ আল্লাহ তো আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কোন রাসূলের প্রতি ঈমান না আনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমাদের কাছে এমন কোরবাণী নিয়ে আসবে যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে; আপনি তাদের বলে দিন তোমাদের কাছে বহু রাসূল এসেছিল আমার আগে স্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তোমরা যা আব্দার করছ তা নিয়ে, তবে কেন তাদের হত্যা করেছিলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক?
আয়াত-১৮৪ঃ যদি এরা আপনাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে, তবে আপনার পূর্বেও বহু রাসূলকে মিত্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যারা এসেছিল স্পষ্ট নিদর্শন, বহু সহীফা এবং উজ্জ্বল কিতাব নিয়ে।
আয়াত-১৮৫ঃ নিশ্চয় প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অবশ্যই কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল তোমরা পূর্ণমাত্রায় প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করান হবে, সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ক্ষণিকের ভোগ-সামগ্ৰী ছাড়া আর কিছু নয়।
আয়াত-১৮৬ঃ অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধন-সম্পদে এবং তোমাদের জন-সম্পদে। আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। তবে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
আয়াত-১৮৭ঃ স্মরণ কর, যখন আল্লাহ প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আহলে কিতাবেরঃ তোমরা মানুষের কাছে কিতাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা সে প্রতিশ্রুতি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল এবং তার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহণ করল। সুতরাং তারা যা বিনিময় গ্রহণ করল কত নিকৃষ্টতা!
আয়াত-১৮৮ঃ তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে-তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-১৮৯ঃ আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। আর আল্লাহই হলেন সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৯০ঃ নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃজনে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য,
আয়াত-১৯১ঃ যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে এবং চিন্তা করে আসমান ও জমিনের সৃজনের ব্যাপারে, এবং বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করনি। আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমাদের দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
আয়াত-১৯২ঃ হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে দাখিল করলে তাকে তো লাঞ্ছিত করলে; আর জালিমদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই।
আয়াত-১৯৩ঃ হে আমাদের পালনকর্তা নিশ্চয় আমরা শুনেছি এক আহ্বানকারীকে ঈমান আনার জন্য আহবান করতেঃ “তোমরা ঈমান আন তোমাদের রবের প্রতি” সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতএব তুমি মাফ করে দাও আমাদের গুনাহগুলো এবং দূরীভূত করে দাও আমাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ আর আমাদের মৃত্যু দাও নেককারদের সাথে।
আয়াত-১৯৪ঃ হে আমাদের রব! আর তুমি আমাদের দাও, যা তোমার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদের দিতে ওয়াদা করেছ এবং লাঞ্ছিত কর না আমাদের কেয়ামতের দিন। তুমি তো কখনও ওয়াদা খেলাফ কর না।
আয়াত-১৯৫ঃ তারপর তাদের রব তাদের প্রর্থনা কবুল করে বললেনঃ “আমি বিনষ্ট করি না তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর কর্ম, তা সে হোক পুরুষ কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা একে অন্যের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, আমর পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে; অবশ্যই আমি তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদের দাখিল করব বেহেশতে, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ। এই হল পুরস্কার আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম পুরস্কার।
আয়াত-১৯৬ঃ তোমাকে যেন ধোঁকা না দেয়, কাফেরদের দেশে দেশে অবাধ বিচরণ।
আয়াত-১৯৭ঃ এ তো ক্ষণিকের উপভোগ। তারপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর তা কত নিকৃষ্ট আবাস!
আয়াত-১৯৮ঃ কিন্তু যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ, তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এ আপ্যায়ন আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা নেককারদের জন্য শ্ৰেয়।
আয়াত-১৯৯ঃ আর আহলে কিতাবের মধ্যে অবশ্য এমন লোকও আছে যারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং যা তোমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে আর যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে তার উপরও আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত অবস্থায়। তারা আল্লাহর আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে না। তারাই হল সে লোক যাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।
আয়াত-২০০ঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।