Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ২৫১-২৭৫)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُۥدُ جَالُوتَ وَءَاتَىٰهُ ٱللَّهُ ٱلْمُلْكَ وَٱلْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُۥ مِمَّا يَشَآءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍۢ لَّفَسَدَتِ ٱلْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ ٢٥١
আয়াত-২৫১: তারপর তারা আল্লাহর হুকুমে জালুতের বাহিনীকে পরাজিত করল এবং দাউদ জালুতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও হেকমত দান করলেন এবং তাকে শিখালেন যা তিনি চাইলেন। মানব জাতির কতককে যদি কতকের দ্বারা আল্লাহ প্রতিহত না করতেন তাহলে গোটা পৃথিবী বিপর্যন্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ হলেন পরম করুণাময়।
تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ ٢٥٢
আয়াত- ২৫২: এসব আল্লাহর আয়াত। আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবে আবৃত্তি করছি। আর তুমি তো নিশ্চিতভাবে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
تِلْكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ ٱللَّهُ ۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَـٰتٍۢ ۚ وَءَاتَيْنَا عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ ٱلْبَيِّنَـٰتِ وَأَيَّدْنَـٰهُ بِرُوحِ ٱلْقُدُسِ ۗ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلَ ٱلَّذِينَ مِنۢ بَعْدِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ وَلَـٰكِنِ ٱخْتَلَفُوا۟ فَمِنْهُم مَّنْ ءَامَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا ٱقْتَتَلُوا۟ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ ٢٥٣
আয়াত-২৫৩: এই রাসূলগণ, এদের কতককে আমি কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কাউকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। আমি মরিয়মের পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তি দান করেছি। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন তাহলে তাদের পরবর্তীরা তাদের কাছে পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হত না। কিন্তু তাদের মধ্যে মতবিরোধ ঘটল, ফলে তাদের কতক ঈমান আনল এবং কতক কুফরী করল। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হত না। কিন্তু আল্লাহ তো তাই করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَنفِقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِىَ يَوْمٌۭ لَّا بَيْعٌۭ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌۭ وَلَا شَفَـٰعَةٌۭ ۗ وَٱلْكَـٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٢٥٤
আয়াত-২৫৪: হে মু’মিনগণ! যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ব্যয় কর তা থেকে যা আমি তোমাদের দিয়েছি সেদিন আসার পূর্বে যেদিন থাকবে না ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব আর না সুপারিশ। আর কাফেররাই প্রকৃত জালিম।
ٱللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌۭ وَلَا نَوْمٌۭ ۚ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍۢ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ ۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ ٢٥٥
আয়াত-২৫৫: আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তাকে স্পর্শ করতে পারে না তন্দ্রা আর না নিদ্রা। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তার। এমন কে আছে, যে তার কাছে সুপারিশ করবে তার অনুমতি ছাড়া? তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু রয়েছে তা সবই তিনি জানেন। যা তিনি ইচ্ছে করেন তাছাড়া তার জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাকে ক্লান্ত-শ্রান্ত করে না। তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ।
لَآ إِكْرَاهَ فِى ٱلدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشْدُ مِنَ ٱلْغَىِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِٱلطَّـٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَا ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦
আয়াত-২৫৬: দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। নিশ্চয়ই সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সৎপথ ভ্রান্ত পথ থেকে। যে অস্বীকার করবে তাগুতকে এবং ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি সে এমন এক দৃঢ় হাতল ধারণ করবে যা কখনও ভাঙ্গাবার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাবিজ্ঞ।
ٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُخْرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَوْلِيَآؤُهُمُ ٱلطَّـٰغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ ٱلنُّورِ إِلَى ٱلظُّلُمَـٰتِ ۗ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٢٥٧
আয়াত-২৫৭: যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদের বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোতে। আর যারা কুফরী করে তাগুত তাদের অভিভাবক, তারা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِى حَآجَّ إِبْرَٰهِـۧمَ فِى رَبِّهِۦٓ أَنْ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُ ٱلْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَٰهِـۧمُ رَبِّىَ ٱلَّذِى يُحْىِۦ وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا۠ أُحْىِۦ وَأُمِيتُ ۖ قَالَ إِبْرَٰهِـۧمُ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأْتِى بِٱلشَّمْسِ مِنَ ٱلْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ ٱلْمَغْرِبِ فَبُهِتَ ٱلَّذِى كَفَرَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٢٥٨
আয়াত-২৫৮: তুমি কি দেখনি সে লোকটিকে, যে ইব̖রাহীমের সাথে তার পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল, এ কারণে যে, আল্লাহ তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন? যখন ইব̖রাহীম বলল; আমার পালনকর্তা তিনি যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তখন সে বললঃ আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইবরাহীম বললঃ আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, পারলে তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। আল্লাহ সীমালংঘনকারী লোকদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।
أَوْ كَٱلَّذِى مَرَّ عَلَىٰ قَرْيَةٍۢ وَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحْىِۦ هَـٰذِهِ ٱللَّهُ بَعْدَ مَوْتِهَا ۖ فَأَمَاتَهُ ٱللَّهُ مِا۟ئَةَ عَامٍۢ ثُمَّ بَعَثَهُۥ ۖ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ ۖ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍۢ ۖ قَالَ بَل لَّبِثْتَ مِا۟ئَةَ عَامٍۢ فَٱنظُرْ إِلَىٰ طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ ۖ وَٱنظُرْ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجْعَلَكَ ءَايَةًۭ لِّلنَّاسِ ۖ وَٱنظُرْ إِلَى ٱلْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًۭا ۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُۥ قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ٢٥٩
আয়াত-২৫৯: অথবা তুমি কি দেখনি সে ব্যক্তিকে যে এমন এক জনপদ দিয়ে অতিক্রম করছিল যার ঘর-বাড়িগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়েছিল? সে বললঃ কেমন করে আল্লাহ মৃত্যুর পর একে জীবিত করবেন? তারপর আল্লাহ তাকে একশ বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন, তারপর তাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন, বললেনঃ তুমি কতকাল এভাবে ছিলে? সে বললঃ একদিন কিংবা একদিনেরও কম সময় এভাবে ছিলাম। তিনি বললেনঃ না, বরং তুমি তো একশ’ বছর অবস্থান করেছ। তুমি চেয়ে দেখ তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে, তা পচে যায়নি এবং লক্ষ্য কর তোমার গাধাটির প্রতি। আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চাই। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, কিভাবে আমি এগুলোকে সংযোজিত করি, তারপর তাতে মাংসের আবরণ পরাই। যখন তার কাছে এ অবস্থা সুস্পষ্ট হল তখন সে বলে উঠল, আমি জানি নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
وَإِذْ قَالَ إِبْرَٰهِـۧمُ رَبِّ أَرِنِى كَيْفَ تُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِى ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةًۭ مِّنَ ٱلطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ ٱجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍۢ مِّنْهُنَّ جُزْءًۭا ثُمَّ ٱدْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًۭا ۚ وَٱعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌۭ ٢٦٠
আয়াত-২৬০: আর স্মরণ কর যখন ইব̖রাহীম বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দেখাও কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর। তিনি বললেন; তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না? সে বললঃ অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে দেখতে চাই এজন্য যাতে আমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। তিনি বললেনঃ তাহলে চারটি পাখি ধরে নাও এবং সেগুলোকে তোমার বশীভূত কর। তারপর সেগুলোর দেহের এক এক অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর তাদের ডাক দাও, তারা তোমার কাছে দৌড়ে চলে আসবে। জেনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ।
مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِى كُلِّ سُنۢبُلَةٍۢ مِّا۟ئَةُ حَبَّةٍۢ ۗ وَٱللَّهُ يُضَـٰعِفُ لِمَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١
আয়াত-২৬১: যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্য-বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রতিটি শীষে একশ করে শস্যকণা। আল্লাহ যাকে চান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَآ أَنفَقُوا۟ مَنًّۭا وَلَآ أَذًۭى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ٢٦٢
আয়াত-২৬২: যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের কোন ভয় নেই, আর তারা দুঃখিতও হবে না।
قَوْلٌۭ مَّعْرُوفٌۭ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌۭ مِّن صَدَقَةٍۢ يَتْبَعُهَآ أَذًۭى ۗ وَٱللَّهُ غَنِىٌّ حَلِيمٌۭ ٢٦٣
আয়াত-২৬৩: ভাল কথা বলে দেয়া এবং ক্ষমা চাওয়া ঐ দানের চেয়ে উত্তম যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُبْطِلُوا۟ صَدَقَـٰتِكُم بِٱلْمَنِّ وَٱلْأَذَىٰ كَٱلَّذِى يُنفِقُ مَالَهُۥ رِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ ۖ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌۭ فَأَصَابَهُۥ وَابِلٌۭ فَتَرَكَهُۥ صَلْدًۭا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَىْءٍۢ مِّمَّا كَسَبُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٢٦٤
আয়াত-২৬৪: হে মু’মিনগণ! যারা ঈমান এনেছ! তোমরা দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির মত বরবাদ কর না যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে না। ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি ছিল, তারপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হল, ফলে তাকে পরিষ্কার করে রেখে দিল। যা তারা উপার্জন করেছিল তার কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারবে না। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।
وَمَثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمُ ٱبْتِغَآءَ مَرْضَاتِ ٱللَّهِ وَتَثْبِيتًۭا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍۭ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌۭ فَـَٔاتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌۭ فَطَلٌّۭ ۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٦٥
আয়াত-২৬৫: যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজেদের চিত্ত সুদৃঢ় করার জন্য স্বীয় সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, ফলে সেথায় ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। আর যদি প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয় তবুও হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক প্রত্যক্ষ করেন।
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَن تَكُونَ لَهُۥ جَنَّةٌۭ مِّن نَّخِيلٍۢ وَأَعْنَابٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ لَهُۥ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَأَصَابَهُ ٱلْكِبَرُ وَلَهُۥ ذُرِّيَّةٌۭ ضُعَفَآءُ فَأَصَابَهَآ إِعْصَارٌۭ فِيهِ نَارٌۭ فَٱحْتَرَقَتْ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ٢٦٦
আয়াত-২৬৬: তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাকবে, যার পাদদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে এবং যাতে সব ধরনের ফলমূল থাকবে, যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হবে আর তার থাকবে দুর্বল সন্তান-সন্ততি, তারপর বয়ে যাবে ঐ বাগানের উপর দিয়ে এক অগ্নিগর্ভ প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ফলে বাগানটি ভস্মীভূত হয়ে যাবে? এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَنفِقُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّآ أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ ٱلْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا۟ ٱلْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِـَٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغْمِضُوا۟ فِيهِ ۚ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ حَمِيدٌ ٢٦٧
আয়াত-২৬৭: হে মু’মিনগণ যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করি তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর, আর তার নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে যেও না, অথচ তোমরা তা কখনও গ্রহণ করার নও যদি না চক্ষু বন্ধ করে থাক। জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
ٱلشَّيْطَـٰنُ يَعِدُكُمُ ٱلْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِٱلْفَحْشَآءِ ۖ وَٱللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةًۭ مِّنْهُ وَفَضْلًۭا ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌۭ ٢٦٨
আয়াত-২৬৮: শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার হুকুম দেয়। আর আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন তার ক্ষমার এবং অনুগ্রহের। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
يُؤْتِى ٱلْحِكْمَةَ مَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ ٱلْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِىَ خَيْرًۭا كَثِيرًۭا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَـٰبِ ٢٦٩
আয়াত-২৬৯: তিনি যাকে ইচ্ছে হেকমত দান করেন এবং যাকে হেকমত প্রদান করা হয় সে তো প্রচুর কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। জ্ঞানবানরা ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না!
وَمَآ أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُهُۥ ۗ وَمَا لِلظَّـٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ ٢٧٠
আয়াত-২৭০: তোমরা যা কিছু ব্যয় কর কিংবা যা কিছু মানত কর, সেসব কিছুই আল্লাহ জানেন। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
إِن تُبْدُوا۟ ٱلصَّدَقَـٰتِ فَنِعِمَّا هِىَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا ٱلْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيْرٌۭ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّـَٔاتِكُمْ ۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌۭ ٢٧١
আয়াত-২৭১: তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম; আর যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের তা দিয়ে দাও তবে তোমাদের জন্য তা আরও ভাল। আল্লাহ তোমাদের কিছু কিছু পাপ বিদূরিত করে দিবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَىٰهُمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَآءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبْتِغَآءَ وَجْهِ ٱللَّهِ ۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ ٢٧٢
আয়াত-২৭২: তাদের সৎপথে আনার দায় তোমার নয়, বরং আল্লাহ যাকে চান সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর তা তো তোমাদের নিজেদের উপকারার্থেই কর। তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই ব্যয় করে থাক। আর যে সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তার পুরস্কার পুরোপুরি তোমাদের দেয়া হবে এবং তোমাদের উপর জুলুম করা হবে না।
لِلْفُقَرَآءِ ٱلَّذِينَ أُحْصِرُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًۭا فِى ٱلْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ ٱلْجَاهِلُ أَغْنِيَآءَ مِنَ ٱلتَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُم بِسِيمَـٰهُمْ لَا يَسْـَٔلُونَ ٱلنَّاسَ إِلْحَافًۭا ۗ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ ٢٧٣
আয়াত-২৭৩: এ ব্যয় ঐ সকল অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত হয়ে পড়েছে যে, তারা জীবিকার সন্ধানে জমিনে ঘোরাফেরা করতে পারে না। ভিক্ষা না করার দরুন অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত বলে মনে করে। তাদের লক্ষণ দেখলেই তুমি তাদের চিনতে পারবে। কাকুতি-মিনতি করে তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা চায় না। আর যে সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।
ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُم بِٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ٢٧٤
আয়াত-২৭৪: যারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের জন্য রয়েছে তাদের পুণ্য-ফল তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের নেই কোন-ভয় আর তারা দুঃখিতও হবে না।
ٱلَّذِينَ يَأْكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِى يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ مِنَ ٱلْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْبَيْعُ مِثْلُ ٱلرِّبَوٰا۟ ۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلْبَيْعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰا۟ ۚ فَمَن جَآءَهُۥ مَوْعِظَةٌۭ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٢٧٥
আয়াত-২৭৫: যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। এ অবস্থা তাদের এজন্য যে, তারা বলে, ‘বেচা-কেনা তো সুদেরই মত’। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনাকে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ করেছেন। যার কাছে তার পালনকর্তার তরফ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে নিবৃত্ত হয়েছে, তবে পূর্বে যা হয়ে গেছে তা তার, আর তার ব্যাপার আল্লাহর কাছে সোপর্দ। কিন্তু যারা পুনরায় সুদ নিবে, তারাই দোযখবাসী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।