Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা
(আয়াত: ২৬-৫০)
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
26
إِنَّ اللَّهَ لا يَستَحيي أَن يَضرِبَ مَثَلًا ما بَعوضَةً فَما فَوقَها ۚ فَأَمَّا الَّذينَ آمَنوا فَيَعلَمونَ أَنَّهُ الحَقُّ مِن رَبِّهِم ۖ وَأَمَّا الَّذينَ كَفَروا فَيَقولونَ ماذا أَرادَ اللَّهُ بِهٰذا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثيرًا وَيَهدي بِهِ كَثيرًا ۚ وَما يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الفاسِقينَ
আয়াত-২৬: নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন না উপমা দিতে কোন বস্তু দিয়ে, হোক তা মশা কিংবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কিছু। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তারা জানে যে, তাদের পালনকর্তার তরফের এ উপমা নির্ভুল ও সঠিক। কিন্তু যারা কাফের তারা বলে, আল্লাহ কি উদ্দেশ্যে এ তুচ্ছ বস্তুর উপমা দিয়েছেন? এ দিয়ে আল্লাহ অনেককে বিপথগামী করেন এবং অনেককে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তবে ফাসেকদের ছাড়া অন্য কাউকে তিনি এরূপ উপমা দিয়ে গোমরাহ করেন না।
27
الَّذينَ يَنقُضونَ عَهدَ اللَّهِ مِن بَعدِ ميثاقِهِ وَيَقطَعونَ ما أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يوصَلَ وَيُفسِدونَ فِي الأَرضِ ۚ أُولٰئِكَ هُمُ الخاسِرونَ
আয়াত-২৭: (ফাসেক ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। ওরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।
28
الَّذينَ يَنقُضونَ عَهدَ اللَّهِ مِن بَعدِ ميثاقِهِ وَيَقطَعونَ ما أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يوصَلَ وَيُفسِدونَ فِي الأَرضِ ۚ أُولٰئِكَ هُمُ الخاسِرونَ
আয়াত-২৮: কিরূপে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন। তারপর তিনি প্রাণ দান করলেন তোমাদের, আবার তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় তিনিই তোমাদের জীবন দান করবেন। পরিণামে তাঁরই সমীপে তোমরা উপস্থাপিত হবে।
29
هُوَ الَّذي خَلَقَ لَكُم ما فِي الأَرضِ جَميعًا ثُمَّ استَوىٰ إِلَى السَّماءِ فَسَوّاهُنَّ سَبعَ سَماواتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ
আয়াত-২৯: তিনি এমন যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের কল্যাণের জন্য পৃথিবীর সবকিছু। তারপর তিনি মনোযোগ দিলেন আকাশের প্রতি এবং বিন্যস্ত করলেন তা সাত আসমানরূপে। আর তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহহিত।
30
وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلائِكَةِ إِنّي جاعِلٌ فِي الأَرضِ خَليفَةً ۖ قالوا أَتَجعَلُ فيها مَن يُفسِدُ فيها وَيَسفِكُ الدِّماءَ وَنَحنُ نُسَبِّحُ بِحَمدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قالَ إِنّي أَعلَمُ ما لا تَعلَمونَ
আয়াত-৩০: আর স্মরণ কর, তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি, তখন তারা বলল: আপনি কি সেথায় এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে সেখানে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে? আর আমরা তো সদা আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেনঃ অবশ্যই আমি জানি, যা তোমরা জান না।
31
وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسماءَ كُلَّها ثُمَّ عَرَضَهُم عَلَى المَلائِكَةِ فَقالَ أَنبِئوني بِأَسماءِ هٰؤُلاءِ إِن كُنتُم صادِقينَ
আয়াত-৩১: আর তিনি শিখালেন আদমকে সব কিছুর নাম। তারপর সে সবকিছু ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন: তোমরা আমাকে এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
32
قالوا سُبحانَكَ لا عِلمَ لَنا إِلّا ما عَلَّمتَنا ۖ إِنَّكَ أَنتَ العَليمُ الحَكيمُ
আয়াত-৩২: তারা বলল: আপনি পবিত্র। আপনি যা আমাদের শিখিয়েছেন তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি প্রকৃত জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
33
قالَ يا آدَمُ أَنبِئهُم بِأَسمائِهِم ۖ فَلَمّا أَنبَأَهُم بِأَسمائِهِم قالَ أَلَم أَقُل لَكُم إِنّي أَعلَمُ غَيبَ السَّماواتِ وَالأَرضِ وَأَعلَمُ ما تُبدونَ وَما كُنتُم تَكتُمونَ
আয়াত-৩৩: তিনি বললেন: হে আদম, বলে দাও তাদের এ সব কিছুর নাম। তারপর যখন সে বলে দিল সেসবের নাম, তখন তিনি বললেন: আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমান ও জমিনের সকল গোপন বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে অবগত এবং তাও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন রাখ।
34
وَإِذ قُلنا لِلمَلائِكَةِ اسجُدوا لِآدَمَ فَسَجَدوا إِلّا إِبليسَ أَبىٰ وَاستَكبَرَ وَكانَ مِنَ الكافِرينَ
আয়াত-৩৪: আর যখন আমি আদমকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদের বললাম, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে আদেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
35
وَقُلنا يا آدَمُ اسكُن أَنتَ وَزَوجُكَ الجَنَّةَ وَكُلا مِنها رَغَدًا حَيثُ شِئتُما وَلا تَقرَبا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكونا مِنَ الظّالِمينَ
আয়াত-৩৫: আর আমি বললাম: হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেশ̖তে বসবাস করতে থাক এবং সেখানে যা, যেভাবে, যেখান থেকে চাও, তৃপ্তিসহকারে খাও, কিন্তু এ গাছের কাছেও যেও না। গেলে, তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।
36
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيطانُ عَنها فَأَخرَجَهُما مِمّا كانا فيهِ ۖ وَقُلنَا اهبِطوا بَعضُكُم لِبَعضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُم فِي الأَرضِ مُستَقَرٌّ وَمَتاعٌ إِلىٰ حينٍ
আয়াত-৩৬: কিন্তু শয়তান তাদের উভয়কে সেখান থেকে পদস্খলিত করল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদের বের করে দিল। আর আমি বললাম: তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু, তোমাদের জন্য রইল পৃথিবীতে কিছু কালের অবস্থান ও জীবিকা।
37
فَتَلَقّىٰ آدَمُ مِن رَبِّهِ كَلِماتٍ فَتابَ عَلَيهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوّابُ الرَّحيمُ
আয়াত-৩৭: তারপর আদম তার পালনকর্তার কাছ থেকে কিছু বাণী শিখে নিল। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হলেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
38
قُلنَا اهبِطوا مِنها جَميعًا ۖ فَإِمّا يَأتِيَنَّكُم مِنّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدايَ فَلا خَوفٌ عَلَيهِم وَلا هُم يَحزَنونَ
আয়াত-৩৮: আমি বললামঃ তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হেদায়াত আসবে তখন যারা আমার হেদায়াত অনুসারে চলবে তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না।
39
وَالَّذينَ كَفَروا وَكَذَّبوا بِآياتِنا أُولٰئِكَ أَصحابُ النّارِ ۖ هُم فيها خالِدونَ
আয়াত-৩৯: আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করে তারাই হবে জাহান্নামী, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।
40
يا بَني إِسرائيلَ اذكُروا نِعمَتِيَ الَّتي أَنعَمتُ عَلَيكُم وَأَوفوا بِعَهدي أوفِ بِعَهدِكُم وَإِيّايَ فَارهَبونِ
আয়াত–৪০: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং পূর্ণ কর আমার সংগে কৃত তোমাদের অঙ্গীকার, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর।
41
وَآمِنوا بِما أَنزَلتُ مُصَدِّقًا لِما مَعَكُم وَلا تَكونوا أَوَّلَ كافِرٍ بِهِ ۖ وَلا تَشتَروا بِآياتي ثَمَنًا قَليلًا وَإِيّايَ فَاتَّقونِ
আয়াত-৪১: আর তোমরা ঈমান আন তাতে, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, তা তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারী। আর তোমরাই তার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ কর না। আর তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর।
42
وَلا تَلبِسُوا الحَقَّ بِالباطِلِ وَتَكتُمُوا الحَقَّ وَأَنتُم تَعلَمونَ
আয়াত-৪২: তোমরা মিশিয়ে দিও না সত্যকে মিথ্যার সাথে এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কর না।
43
وَأَقيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكاةَ وَاركَعوا مَعَ الرّاكِعينَ
আয়াত-৪৩: আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং সালাতে অবনত হও তাদের সংগে যারা অবনত হয়।
44
أَتَأمُرونَ النّاسَ بِالبِرِّ وَتَنسَونَ أَنفُسَكُم وَأَنتُم تَتلونَ الكِتابَ ۚ أَفَلا تَعقِلونَ
আয়াত-৪৪: তোমরা কি মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেদের ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর। তবে কি তোমাদের জ্ঞান নেই?
45
وَاستَعينوا بِالصَّبرِ وَالصَّلاةِ ۚ وَإِنَّها لَكَبيرَةٌ إِلّا عَلَى الخاشِعينَ
আয়াত-৪৫: তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে। অবশ্য তা অত্যন্ত কঠিন, তবে সেসব বিনীত লোকদের ব্যতিরেকে___
46
الَّذينَ يَظُنّونَ أَنَّهُم مُلاقو رَبِّهِم وَأَنَّهُم إِلَيهِ راجِعونَ
আয়াত-৪৬: যারা বিশ্বাস করে যে, নিশ্চিতভাবে তাদের স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখীন হতে হবে এবং তারই দিকে তাদের ফিরে যেতে হবে।
47
يا بَني إِسرائيلَ اذكُروا نِعمَتِيَ الَّتي أَنعَمتُ عَلَيكُم وَأَنّي فَضَّلتُكُم عَلَى العالَمينَ
আয়াত-৪৭: হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং আমিই তোমাদের উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলাম সমগ্র বিশ্বের উপর।
48
وَاتَّقوا يَومًا لا تَجزي نَفسٌ عَن نَفسٍ شَيئًا وَلا يُقبَلُ مِنها شَفاعَةٌ وَلا يُؤخَذُ مِنها عَدلٌ وَلا هُم يُنصَرونَ
আয়াত-৪৮: আর ভয় কর সেদিনকে যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না এবং কারো পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল করা হবে না এবং কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও গৃহীত হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
49
وَإِذ نَجَّيناكُم مِن آلِ فِرعَونَ يَسومونَكُم سوءَ العَذابِ يُذَبِّحونَ أَبناءَكُم وَيَستَحيونَ نِساءَكُم ۚ وَفي ذٰلِكُم بَلاءٌ مِن رَبِّكُم عَظيمٌ
আয়াত-৪৯: আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম ফেরআউনের লোকদের হাত থেকে যারা তোমাদের কঠিন শাস্তি দিত, তোমাদের তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা ছিল।
50
وَإِذ فَرَقنا بِكُمُ البَحرَ فَأَنجَيناكُم وَأَغرَقنا آلَ فِرعَونَ وَأَنتُم تَنظُرونَ
আয়াত-৫০: আর স্মরণ কর, যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলাম এবং তোমাদের উদ্ধার করেছিলাম ও ফেরআউনের লোকদের ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
- Surah Al-Baqarah | সূরা আল-বাকারা (আয়াত: ১-২৫)