Surah Al-Maidah / সূরা মায়িদাহ
(আয়াত: ১-৫০)
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
আয়াত-১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু, সেগুলো ছাড়া যা তোমাদের কাছে বর্ণিত হচ্ছে, তবে ইহ̖রাম অবস্থায় শিকার করাকে হালাল মনে করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।
আয়াত-২ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা হালাল মনে কর না আল্লাহ̖র নিদর্শনসমূহকে, আর না পবিত্র মাসসমূহকে, আর না কোরবানীর জন্য হরমে প্রেরিত পশুকে, আর না সেসব পশু যার গলায় চিহ্ন পরান হয়েছে, আর না ঐ সব লোককে যারা বায়তুল হারামের দিকে যাচ্ছে স্বীয় রবের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় তোমরা যখন ইহ̖রাম মুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার। মসজিদে হারামে তোমাদের প্রবেশে বাধা দেয়ার দরুন কোন কওমের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের কখনও সীমা লংঘনে প্ররোচিত না করে তোমরা একে অন্যকে নেক কাজে এবং তাকওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে, কিন্তু পাপ কাজে ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য করবে না। আল্লাহ̖̖কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ শাস্তিদানে কঠোর।
আয়াত-৩ঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ̖ ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা পশু, শ্বাসরোধে মৃত পশু, আঘাতে মৃত পশু, উচ্চস্থান থেকে পতনের কারণে মৃত পশু, শিং-এর আঘাতে মৃত পশু, হিংস্ৰ জানোয়ারে ভক্ষণ করা পশু, তবে যা তোমরা জবাই করতে পেরেছ, তাছাড়া যা মূর্তিপূজার বেদীতে বলি দেয়া হয় এবং যা লটারীর তীর দিয়ে ভাগ করা হয়। এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তাদের ভয় কর না, বরং আমাকেই ভয় কর। আজ পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়ে কিন্তু কোন পাপের প্রতি আকৃষ্ট না হয়, তবে আল্লাহ̖ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৪ঃ লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কি কি জিনিস তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুনঃ তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে পবিত্র জিনিসসমূহ এবং যেসব শিকারী পশু-পক্ষীকে তোমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছ শিকারের জন্য, যেভাবে আল্লাহ̖ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, এমন শিকার জন্তু যে শিকারকে তোমাদের জন্য ধরে আনে তা খাবে এবং তার উপর আল্লাহ̖র নাম নেবে, আর আল্লাহ̖কে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ̖ সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।
আয়াত-৫ঃ আজ তোমাদের জন্য হালাল করা হল পবিত্র বস্তুসমূহ। আহলে কিতাবের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্য হালাল সতী-সাধী মু’মিন নারী এবং আহলে কিতাবের সতী-সাধ্বী নারী, যখন তোমরা তাদের মহর প্রদান কর স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার কিংবা উপপত্নীরূপে গ্রহণের জন্য নয়। যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে ঈমান তার কর্মফল অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আয়াত-৬ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন নামাযের জন্য দাড়াতে চাও। মুখমণ্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত আর মসেহ করে নেবে নিজেদের মস্তক এবং ধৌত করে নেবে নিজেদের পা পর্যন্ত। কিন্তু যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে উত্তমরূপে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্ৰস্ৰাব-পায়খান সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে-ঐ মাটি দিয়ে নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত মসেহ করে নেবে। আল্লাহ̖ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পাক-পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আয়াত-৭ঃ তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা এবং তার সে অঙ্গীকারের কথা যা তিনি তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। যখন তোমরা বলেছিলে, আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। তোমরা আল্লাহ̖কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে পুরোপুরি খবর রাখেন।
আয়াত-৮ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা অবিচল থাকবে আল্লাহ̖র উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে; এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের কখনও প্ররোচিত না করে ন্যায়বিচার বর্জন করতে। ন্যায়বিচার করবে। ন্যায়বিচার করাই তাকওয়ার নিকটতর। আল্লাহ̖কে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ̖ খুব খবর রাখেন সে বিষয়ে যা তোমরা কর।
আায়াত-৯ঃ আল্লাহ̖ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এরূপ লোকদের যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে যে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
আয়াত-১০ঃ আর যারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা মনে করে, তারা দোযখের অধিবাসী।
আয়াত-১১ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা, যখন এক সম্প্রদায় সংকল্প করেছিল তোমাদের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতে, তখন তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে প্রতিহত করে দিয়েছিলেন। তোমরা ভয় কর আল্লাহ̖কে। আর আল্লাহ̖রই উপর যেন মুমিনরা ভরসা করে।
আত্মাত-১২ঃ আল্লাহ̖ বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বারজন নেতা নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ̖ বলেছিলেনঃ অবশ্যই আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহ̖কে “করজে হাসানা” দাও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের পাপ মোচন করব এবং অবশ্যই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, প্রবাহিত হয় যার তলদেশে নহরসমূহ। এরপরও তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ কুফরী করবে, সে নিশ্চয়ই সরল পথ হারাবে।
আয়াত-১৩ঃ অতএব তাদের এ অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদের লা’নত করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। তারা আল্লাহ̖র কালামকে যথাস্থান থেকে বিকৃত করে দেয় এবং ভুলে গেছে তার এক অংশ যার উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল। তুমি তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সবাইকে দেখতে পাবে কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতা করতে। সুতরাং তাদের ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ̖ নেককারদের ভালবাসেন।
আয়াত-১৪ঃ যারা বলেঃ “আমরা নাসারা”, আমি তাদেরও অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, কিন্তু তারাও যে উপদেশ লাভ করেছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছিল। সুতরাং আমি কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী পারস্পরিক সত্রুতা ও বিদ্বেষ তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছি। আর অচিরেই আল্লাহ̖ তাদের জানিয়ে দেবেন যা তারা করত।
আয়াত-১৫ঃ হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছেন, তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করেন কিতাবের এমন অনেক কিছু যা তোমরা গোপন করতে এবং অনেক বিষয় উপেক্ষা করেন। তোমাদের কাছে এসেছে আল্লাহ̖র তরফ থেকে এক জ্যোতি ও একটি সমুজ্জ্বল কিতাব।
আয়াত-১৬ঃ যারা আল্লাহ̖র সন্তুষ্টি কামনা করে, এ কিতাব দিয়ে তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাদের তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে স্বীয় অনুমতিক্রমে, আর তাদের তিনি পরিচালিত করেন সরল-সঠিক পথে।
আয়াত-১৭ঃ নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে: “মসীহ ইবন মারইয়ামই হল আল্লাহ̖̖।” আপনি বলুনঃ আল্লাহ̖̖ যদি ইচ্ছে করেন মসীহ ইবন মরিয়াম, তার মা এবং দুনিয়ার সবাইকে ধ্বংস করে দিতেন, তবে তাকে বাধা দেবার বিন্দুমাত্র শক্তি কার আছে? আসমান ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহ̖̖র তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-১৮ঃ ইহুদী ও খৃষ্ট্রানরা বলেঃ আল্লাহ̖̖র পূত্র ও তার প্রিয়জন।” আপনি বলুন; তবে তিনি কেন তোমাদের শাস্তি দেন তোমাদের পাপের জন্য? বরং তোমরাও তাদেরই মত মানুষ যাদের আল্লাহ̖ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ক্ষমা করেন যাকে ইচ্ছে করেন এবং শাস্তি দেন যাকে ইচ্ছে করেন। আসমান ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহ̖র, আর তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আয়াত-১৯ঃ হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে এসেছেন আমার রাসূল, যিনি রাসূল আগমনের বিরতির পর তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন যাতে তোমরা বলতে না পার যে, “আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসেনি “এখন তো তোমাদের কাছে এসে গেছেন একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-২০ঃ স্মরণ কর, মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ হে আমার কওম! তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহ̖র নেয়ামতের কথা, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে অনেক নবী সৃষ্টি করেছিলেন এবং তোমাদের করেছিলেন রাজ্যাধিপতি, আর তোমাদের দিয়েছিলেন এমন জিনিস যা বিশ্বজগতে অন্য কাউকে দেননি।
আয়াত-২১ঃ হে আমার কওম! তোমরা প্রবেশ কর পবিত্র ভূমিতে যা আল্লাহ̖ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং পেছনে ফিরে যেও না, গেলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
আয়াত-২২ঃ তারা বললঃ হে মূসা সেখানে রয়েছে এক দুর্দান্ত জাতি। আমরা কখনও সেখানে প্রবেশ করব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যদি তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে অবশ্যই আমরা প্রবেশ করব।
আয়াত-২৩ঃ যারা ভয় করত, তাদের মধ্য থেকে দু’ ব্যক্তি, যাদের প্রতি আল্লাহ̖ অনুগ্রহ করেছিলেন, বললঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ করে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। আর যখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে তখনই তোমরা জয়ী হবে। আর আল্লাহ̖রই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।
আয়াত-২৪ঃ তারা বললঃ হে মূসা! আমরা কখনও সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব আপনি ও আপনার রব যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা তো এখানেই বসলাম।
আয়াত-২৫ঃ মূসা বললেনঃ হে আমার রব! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্য কারো উপর আমার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমাদের ও এ ফাসেক কওমের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দাও।
আয়াত-২৬ঃ আল্লাহ̖ বললেনঃ তাদের জন্য এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত হারাম করা হল, তারা উদভ্রান্তের মত পৃথিবীতে ঘুরে ফিরবে। অতএব ফাসেক কওমের জন্য তুমি দুঃখ কর না।
আয়াত-২৭ঃ তুমি তাদের যথাযথভাবে শুনাও আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত। যখন তারা কোরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কোরবানী কবুল করা হয়েছিল এবং অপরজনের কবুল করা হয়নি। সে বললঃ “অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।” অপরজন বললঃ “আল্লাহ̖ কেবলমাত্র মোত্তাকীদের কোরবানী কবুল করেন।”
আয়াত-২৮ঃ যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে তোমার হাত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে আমার হাত প্রসারিত করব না। কেননা আমি তো ভয় করি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে”
আয়াত-২৯ঃ “আমি চাই, তুমি বহন কর আমার ও তোমার পাপের বোঝা, তারপর তুমি দোযখবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এটাই হল জালিমদের প্রতিফল।”
আয়াত-৩০ঃ তারপর তার প্রবৃত্তি তাকে ভ্রাতৃ-হত্যায় প্ররোচিত করল এবং সে তাকে হত্যা করল, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।
আয়াত-৩১ঃ তারপর আল্লাহ̖̖ একটি কাক পাঠালেন, সে মাটি খনন করতে লাগল, তাকে দেখাবার জন্য যে, কিভাবে সে তার ভাইয়ের শবদেহ গোপন করবে। সে বলল: আফসোস! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না যে, আমার ভাইয়ের শবদেহ গোপন করতে পারি? তারপর সে অনুতপ্ত হল!
আয়াত-৩২ঃ এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি এ বিধান দিয়েছি যে, কেউ কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়া হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল। তাদের কাছে তো এসেছিল আমার অনেক রাসূল স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। কিন্তু এরপরও তাদের অনেকেই দুনিয়ায় সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল।
আয়াত-৩৩ঃ যারা আল্লাহ̖ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হল-তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ান হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে। এ হল তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
আয়াত-৩৪ঃ তবে যারা তোমাদের গ্রেফতার করে নেয়ার পূর্বে তওবা করল, (তাদের সম্বন্ধে) জেনে রেখ যে, অবশ্যই আল্লাহ̖ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৩৫ঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ̖কে ভয় কর, তার নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর এবং তার পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
আয়াত-৩৬ঃ যারা কুফরী করেছে, যদি তাদের কাছে দুনিয়ার সমুদয় সম্পদ থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে আর এগুলোর বিনিময়ে কেয়ামতের দিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আয়াত-৩৭ঃ তারা চাইবে বের হয়ে আসতে দোযখ থেকে কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।
আয়াত-৩৮ঃ যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে, এ হল আল্লাহ̖র পক্ষ থেকে দণ্ড। আল্লাহ̖ পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা।
আয়াত-৩৯ঃ তারপর যে তওবা করে নিজের এ জুলুম করার পর এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, নিশ্চয় আল্লাহ̖̖ তার তওবা কবুল করেন। আল্লাহ̖ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত-৪০ঃ তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনের মালিকানা আল্লাহ̖রই, তিনি শাস্তি দেন যাকে ইচ্ছে করেন এবং ক্ষমা করেন যাকে ইচ্ছে করেন। আল্লাহ̖ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আয়াত-৪১ঃ হে রাসূল! আপনাকে যেন দুঃখ না দেয় তারা যারা দ্রুত কুফরীর দিকে ধাবিত হয়, তাদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের মুখে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি,” অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি এবং ইহুদীদের মধ্যে যারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত, যারা আপনার কথা কান পেতে শুনে এমন এক কওমের জন্য যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা আল্লাহ̖র কালামকে বিকৃত করে তা যথাস্থানে সুবিন্যস্ত থাকার পরেও তারা বলে, যদি তোমাদের এরূপ বিধান দেয়া হয় তবে তা গ্রহণ করবে কিন্তু যদি তা না পাও তবে তা বর্জন করবে। যাকে আল্লাহ̖ ফেতনায় ফেলতে চান তার জন্য আপনি আল্লাহ̖র কাছে কিছুই করতে পারবেন না। এরাই এমন লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ̖ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে তাদের জন্য মহাশাস্তি।
আয়াত-৪২ঃ তারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত, হারাম খেতে অত্যন্ত আসক্ত। সুতরাং তারা যদি আপনার কাছে আসে তবে তাদের মধ্যে বিচার নিম্পত্তি করে দিন অথবা তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। আর যদি আপনি তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকেন তবে তারা আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার ফয়সালাই করেন তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ̖ ভালবাসেন ন্যায়বিচারকারীদের।
অনায়াত-৪৩ঃ তারা কিরূপে আপনার উপর বিচারভার ন্যস্ত করবে অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত? যে তাওরাতে আছে আল্লাহ̖র আদেশ। তারপরও তারা পেছনে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনও মমিন নয়।
আয়াত-৪৪ঃ আমি তো নাযিল করেছিলাম তাওরাত যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। এ তাওরাতের মাধ্যমে ইহুদীদের ফয়সালা দিত আল্লাহ̖র অনুগত নবী, দরবেশ ও আর তারা ছিল তার সাক্ষী। অতএব তোমরা মানুষকে ভয় কর না, বরং আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি কর না। যারা আল্লাহ̖̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দেয় না তারাই কাফের।
আয়াত-৪৫ঃ আমি তাদের জন্য তাতে ফরয করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাতের বদলে দাত এবং অনুরূপভাবে জখমের বদলে জখম। তবে কেউ তা মাফ করে দিলে তা তার জন্য গুনাহের কাফফারা হবে। আর যারা আল্লাহ̖̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দেয় না তারাই জালিম।
আয়াত-৪৬ঃ আর আমি তাদের পেছনে প্রেরণ করেছিলাম ঈসা ইবন মরিয়মকে, তিনি ছিলেন পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারী। আমি তাকে দিয়েছিলাম ইনজিল৷ তাতে ছিল হেদায়াত ও আলো। তা ছিল পূর্ববতী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী, হেদায়াত ও উপদেশ মোত্তাকীদের জন্য।
আয়াত-৪৭ঃ আর ইন্জিলের অনুসারীরা যেন বিধান দেয় তাতে আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিধান দেয় না তারা তো ফাসেক।
আয়াত-৪৮ঃ আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি সত্যসহ এ কিতাব যা সত্যয়নকারী পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের এবং সংরক্ষণকারী তাতে যা আছে তার। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছি নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা। আর যদি আল্লাহ̖ চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহ̖র দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয় যাতে তোমরা মতভেদ করতে।
আয়াত-৪৯ঃ আর আপনি তাদের মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ̖ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না, আর তাদের সম্বন্ধে সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে বিচ্যুত না করতে পারে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার কোন কিছু থেকে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ̖ চান তাদের কোন কোন পাপের জন্য তাদের শাস্তি প্রদান করতে। আর মানুষের মধ্যে তো অনেকেই নাফরমান।
আয়াত-৫০ঃ তবে কি তারা জাহেলী আমলের বিধান কামনা করে? কে উত্তম আল্লাহ̖র চাইতে বিধান প্রদানে দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য?